ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বিসিএস জয়

হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করে যেতে হবে: দিপক কুমার শীল

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

দিপক কুমার শীল ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান দিপক। তিনি কাকলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসে সিজিপিএ ৩.৯০ এবং বিএসে ৩.৯১ সিজিপিএ নিয়ে পাস করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪১তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন—
দিপক কুমার শীল: আমার শৈশব শুরু হয় মানিকগঞ্জ জেলার মুকুন্দপুর গ্রামে। সেখানের একটি স্কুলে পড়তাম। আমি ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে থাকি এবং ৮ম শ্রেণিতে ঢাকার একটি স্কুলে চলে আসি। তখন থেকে এখনো আমি রায়েরবাজারে অবস্থান করছি। শৈশবের সেই গ্রামের দিনগুলো এখনো মনে পড়ে। কৈশোরে ঢাকায় এসে নতুন বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপু, তপু, রাজু, সুব্রত, মিজানসহ অনেকে। আমরা একসাথে আবাহনী মাঠে ক্রিকেট খেলতে যেতাম। দিনগুলো স্মৃতির পাতায় এখনো উজ্জ্বল। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে নিজেকে নতুন মাত্রায় খুঁজে পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মাঝে আমূল পরিবর্তন আনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাসিব, সোহাগ, অভিরূপ, রাহাত, আবীর, মেহেদিসহ অনেকে। তবে আমার আরেক দাদা আছেন (রাজীব চৌধুরী) যিনি এখন খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দাদার থেকেও আমি অনেক শিক্ষা অর্জন করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
দিপক কুমার শীল: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়াকালীন থিসিসের সুবাদে একজন বড় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। যিনি ৩৭তম বিসিএসে পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্যাডারে ১ম হন। এই বড় ভাইয়ের আদর্শ আমাকে প্রায়ই অণুপ্রাণিত করতো। পাশাপাশি আমার বাবা চাইতেন আমি ১ম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হই। ফলশ্রুতিতে আমি আমার বিষয় সম্পর্কিত চাকরিতে আবেদন করি। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো থাকা সত্ত্বেও চাকরি হয়নি। আমি আইসিডিডিআর,বিতে যোগদান করি ২০১৯ সালে। পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

আরও পড়ুন: দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই: আরিফ ইমরান

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
দিপক কুমার শীল: বিসিএস যাত্রা কখনোই আমার জন্য মসৃণ ছিল না। আমি চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। সকাল-সন্ধ্যা আইসিডিডিআর,বির ভাইরোলোজি গবেষণাগারে নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করে সন্ধ্যা ৭টায় একটি বিসিএস কোচিংয়ে ক্লাস করতাম। তারপর রাত ১০টা নাগাদ বাসায় পৌঁছে মূল কাজ ছিল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ক্লাস লেকচারটা পড়ে ফেলা। এভাবে আমার দিন শুরু হতো সকাল ৭টায় অফিসের গাড়ি ধরার মাধ্যমে। আর শেষ হতো রাত ২টা নাগাদ। আমি কখনো পরীক্ষাগুলোতে অনুপস্থিত থাকতাম না, প্রস্তুতি থাকুক বা না থাকুক। প্রথমেই বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আয়ত্তে এনেছিলাম। তাতে বুঝতে পারতাম প্রশ্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো। আমার দুর্বল অংশগুলো শনাক্ত করে সেখানে বেশি জোর দিতাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বদা ক্লাস করার একটা অভ্যাস তৈরি হয়, যা আমার খুব উপকারে আসে নিয়মিত পড়ালেখা চালানোয়। বিসিএসের মূলমন্ত্রই হচ্ছে নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। ৪১তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে ৩২৩ জন ব্যক্তির মধ্যে থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যার পর ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পর প্রশাসন ক্যাডারে চূড়ান্ত সুপারিশের তালিকায় নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখতে পেরে হৃদয়ে এক অসাধারণ প্রশান্তি আসে। প্রথমেই আমি বাবাকে জানাই, ক্রমান্বয়ে অন্য প্রিয়জনদের। দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
দিপক কুমার শীল: আমাদের একটা গ্রুপ ছিল, যেটি তৈরি হয় কোচিংয়ের বন্ধুদের নিয়ে। এই গ্রুপ থেকে আমি অনেক উপকৃত হই। আমরা নিয়মিত একজন আরেকজনের পড়া যাচাই করার চেষ্টা করতাম। করোনাকালীন আমরা পরীক্ষা দিতাম নিজেরা এবং কেউ খারাপ করলে তাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রাণিত করতাম। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নুজহাত তাসনিম সুহা, সাদিয়া তাসনিম জেরিন, জান্নাত প্রীতি, ইভা, নিশি, মুক্তা। তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এ ছাড়া আমার বাবা-মা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করতেন। প্রায়ই আমাকে আমার বান্ধবী এবং সহকর্মী শাফিনা জাহান বলতেন, আমার কোনো একটা ভালো ক্যাডার আসবে, তার কথা থেকেও আমি অণুপ্রাণিত হতাম।

আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল: রুবেল তালুকদার

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
দিপক কুমার শীল: নতুনদের প্রতি আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে অধ্যবসায়ী হতে হবে। বিসিএসের সিলেবাস ধরে বিগত বিসিএসগুলোর প্রশ্ন যাচাই করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। তথ্যসূত্র যাচাই করে ডাটা নোট করাটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দুর্বল এবং সবল ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করে নিয়মিত পড়ার একটা রুটিন তৈরি করে পড়তে হবে। ভয় না পেয়ে কোনো একটা বই থেকে বা কোচিংয়ে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে। যে প্রশ্নগুলো মডেল টেস্টে আসে; সেগুলো সাথে সাথে পড়ে ফেলা। তবে কিছু ক্ষেত্র যেমন- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংবিধান, বাংলাদেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক সম্পর্কের ভিত্তি, পররাষ্ট্রনীতি এসব বিষয়ে ভালো দখল রাখতে হবে। এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়া আপনাকে এক নতুন মাত্রা দেবে। মোটাদাগে হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করে যেতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
দিপক কুমার শীল: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রজাতন্ত্রের একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হয়ে দেশের জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। তবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনাও আছে।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন