বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল: রুবেল তালুকদার
রুবেল তালুকদার ৪১তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাজ গ্রামে। রুবেল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার পিতা কৃষিকাজ করেন এবং মা গৃহিণী। তিনি সুনামগঞ্জের ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪১তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
রুবেল তালুকদার: খুবই ভালো লাগছে। সৃষ্টিকর্তা আমার স্বপ্নকে সার্থক করেছেন। ভবিষ্যতে সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
রুবেল তালুকদার: বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার ১ বছর পরে। আমার প্রথম ভাইভা ছিল সিলেট কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক পদে। সেখানে বিফল হওয়ার পর বন্ধুদের প্রিলির বইপড়া দেখেই আগ্রহ ও ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করলে তারাও খুব খুশি হন। আমাকে ভরসা দেন। পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন। খুবই ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে অভিবাদন জানান। পরে ভার্সিটির বড় ভাইদের কাছ থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা নিয়ে বই কিনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।
আরও পড়ুন: দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই: আরিফ ইমরান
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রায় প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
রুবেল তালুকদার: আমি মূলত পড়াশোনা শুরু করি ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি সার্কুলার হওয়ার পর। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে, তখন আমি মাস্টার্সে পড়ি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের পরামর্শ নিয়ে এ যাত্রা শুরু করি। তাদের একজন ৩৬তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় আমার ভেতর আরও পড়াশোনার আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। প্রতিটি বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট লিখিত আকারে তৈরি করতাম। অনেক কষ্ট হতো। তবুও যে টপিকের অ্যাসাইনমেন্ট থাকতো, তাতে মূল জিনিসটা লিখতাম। সিলেবাস বুঝে বুঝে কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি হয়; সেগুলো বেশি বেশি পড়তাম। যেগুলো থেকে কম প্রশ্ন হয় বা পারি না; সেগুলো প্রথমদিকে বাদ দিয়েছিলাম। পরে মূল টপিকগুলোয় ভালো প্রিপারেশন হওয়ার পর এগুলোতে সময় দিয়েছিলাম।
কিছুদিন পরই করোনার জন্য মেস থেকে গ্রামে চলে যাই। গ্রামে থাকাকালীন বেকারত্ব, ডিপ্রেশনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠি। আড্ডা, ঘোরাঘুরি, মোবাইল আসক্তি বন্ধ করে দিলাম। তারপর পড়ালেখাই ধ্যান-জ্ঞান। লকডাউনের প্রায় ৬ মাস দিনে ১২-১৫ ঘণ্টা করে পড়েছি। করোনা আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হলে আবার শহরে মেসে চলে আসি। এতদিন শুধু পড়েই গেছি। এরপর পড়াশোনা করে আনন্দ লাগতো। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো গুছিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, পরিবেশ-জলবায়ু, নারীবিষয়ক, অর্থনীতি, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাজেট, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিশদভাবে পড়েছি। প্রচুর ডেটা, কোটেশন, ম্যাপ মুখস্থ করেছি। নিয়মিত অনুবাদ করেছি। প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা দুটি বাংলা দৈনিক পড়েছি। বিগত বিসিএসের সব প্রশ্ন বুঝে বুঝে সমাধান করেছি। একাধিক বই না পড়ে এক সেট বই বারবার পড়েছি। অন্য বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মূল বইয়ের কোণায় কোণায় লিখে রেখেছি। হাতের লেখা খুবই দ্রুত ও পরিষ্কার ছিল। লিখিত পরীক্ষায় খুব সংক্ষেপে মূল বিষয়টা লেখার চেষ্টা করেছি। পয়েন্ট, কোটেশন, গুরুত্বপূর্ণ বাক্যগুলো নীল কালিতে লিখেছি। লিখিত পরীক্ষাও খুব ভালো হয়। পাশাপাশি ভাইভাতেও ভালো করি।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
রুবেল তালুকদার: আমার সব সময়ের অনুপ্রেরণা আমার বাবা, মা এবং ভাই। তারা আমার খারাপ সময়ে পাশে থেকেছেন। পাশাপাশি সাহস জুগিয়েছেন। তাদের কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
আরও পড়ুন: ভাইভা বোর্ডে ফার্স্ট ইম্প্রেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
রুবেল তালুকদার: নতুনরা নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সর্বোচ্চ সময় পড়াশোনার টেবিলে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল। ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে নিয়মিত পড়াশোনা করলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৮-১২ ঘণ্টা পড়তেই হবে এমনটা নয়। তবে ধৈর্য ধরে যত বেশি সময় নিয়ে পড়বেন; প্রস্তুতি ততই ধারালো হবে। গণিত, ইংরেজি, বাংলা, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। তবে গুরুত্ব কম দেওয়া যাবে না, আবার বেশিও দেওয়া যাবে না। নিয়মিত গণিত চর্চা করতে হবে। গণিত আর ইংরেজিতে খারাপ করলে প্রিলি পাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রিলি শেষে আপনার যদি মনে হয় আমি পাস করতে পারি, তাহলে কাট মার্ক নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে লিখিত প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। গণিত, ইংরেজি আর বিজ্ঞান বেশি গুরুত্ব বহন করে। নিয়মিত গণিত চর্চার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারেন ট্রান্সলেশন অংশে ভালো করার জন্য। এ ছাড়া বাংলা দৈনিক পত্রিকা থেকে বিভিন্ন ডাটা ও ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে হলে গৎবাঁধা না লিখে তথ্যমূলক লিখলে বেশি নম্বর আসবে। ভালোমতো পড়াশোনা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। বিসিএস ভাইভাতে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, নিজ জেলা, নিজ সাবজেক্ট আর সরকারের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যেতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রুবেল তালুকদার: একজন ভালো মানুষ ও দেশপ্রেমিক হতে চাই। দেশের মানুষকে কৃষি বিষয়ক যে সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে চাকরিতে জয়েন করবো, তা বাস্তবায়ন করতে চাই। কৃষক ও কৃষিবিদ একত্রিত হয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি বিষয়ক অন্য বিষয়ে অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
এসইউ/এএসএম