বিসিএস জয়
ইংরেজি ও গণিতের ভিত্তি মজবুত করতে হবে: মাসুম কামাল
মো. মাসুম কামাল ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে (সমাজকর্ম) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব শান্তিরাম ইউনিয়নে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার ছেলেবেলা, শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই—
মো. মাসুম কামাল: গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। পড়াশোনার হাতেখড়ি আমার মায়ের হাতে। সত্যি বলতে আমার প্রাথমিকের ভিত্তিটা মজবুত হয়েছিল মায়ের কারণে। এ ছাড়া নানা এবং ছোট ফুফু সব সময় পড়াশোনায় অনুপ্রেরণা জোগাতেন। বেলকা এমসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি এবং বেলকা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। আমাদের গ্রাম থেকে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাই। আমাকে গড়ে তোলার জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিতাম। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গ্রামের মানুষ খুব ভালোবাসতো এবং পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাতো।
আরও পড়ুন: বিসিএস পরীক্ষায় পাসের কোনো শর্টকাট নেই: নিশাত রায়হান
জাগো নিউজ: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন কখন থেকে দেখেছিলেন?
মো. মাসুম কামাল: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমার বন্ধু বাঁধনের কাছে সব সময় বিসিএসের গল্প শুনতাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রয়াত ফারুক হোসাইন স্যার সব সময়ই ক্যাডার হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতেন। তখন থেকেই বিসিএসের প্রতি জানাশোনা শুরু হয়।
জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি কখন থেকে নিয়েছিলেন?
মো. মাসুম কামাল: অনার্স চতুর্থ বর্ষের শেষের দিকে পড়াশোনা শুরু করলেও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। মাস্টার্স শেষে ঢাকায় এসে একনিষ্ঠভাবে পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। ঢাকার মতো ব্যয়বহুল শহরে টিকে থাকা খুব কষ্টকর ছিল। টিউশনি, কোচিং করিয়ে নিজের খরচ নিজেই জোগাতাম। ৪১তম বিসিএসের সার্কুলারের পর করোনা মহামারি শুরু হয়। সময়টা খুব কঠিন ছিল। চারদিক থেকে অনেক চাপ আসার পরেও একনিষ্ঠভাবে বিসিএসের জন্য পড়ছিলাম। প্রিলি পাসের পর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। রিটেন প্রস্তুতির সময় ব্যাংক ও অন্য অনেক চাকরির পরীক্ষা ছিল। কিন্তু কোনোটাতে অংশ না নিয়ে শুধু রিটেনের জন্য পড়ি এবং পাস করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বির্তক, উপস্থাপনা, অ্যাথলেটিকসসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিতাম। এ সময় একটি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলাম। তাই পাবলিক স্পিকিংয়ে আমার ভালো দক্ষতা ছিল। যা আমার ভাইভায় কাজে লেগেছিল। অনেক নির্ঘুম রাত, দীর্ঘশ্বাস, হতাশা জড়ানো অশ্রু আর ভালো কিছু করার স্বপ্ন আমার বিসিএস প্রস্তুতির সাক্ষী। তবে সর্বোপরি আল্লাহর রহমত, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, গ্রামের মানুষের দোয়া ও সমর্থন আমাকে ক্যাডার হতে সাহায্য করেছে।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
মো. মাসুম কামাল: প্রথম প্রথম কিছু পরীক্ষায় ব্যর্থতা, করোনা মহামারিতে অনেক সময় চলে যাওয়ার পরেও যখন চাকরি হচ্ছিল না; তখন কিছু মানুষের কটু কথায় একটু হতাশ হয়েছিলাম। তবে আমার বাবা ও ছোট ভাই সব সময় বিসিএসের প্রতিই মনোযোগ দিতে বলতেন। আমার বাবা ও ছোট ভাই আমাকে আড়াল থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিসিএসের তিনটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ: ইমাম মোশারফ
জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য প্রস্ততি নিতে করণীয় কী?
মো. মাসুম কামাল: অনার্স ১ম বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি না নিয়ে আগে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হবে। তবে এ সময় সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। কারণ সিভিল সার্ভিস স্মার্ট লোকদের জন্য। আর সহশিক্ষা কার্যক্রম স্মার্ট হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শুধু চাকরির জন্য না পড়ে ইংরেজি ও গণিতের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। অনার্স চতুর্থ বর্ষ বা অনার্স শেষ হলে একনিষ্ঠভাবে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিসিএসের প্রস্তুতিতে আগে সিলেবাসটি ভালোভাবে বুঝতে হবে। ইংরেজি এবং গণিতের প্রতি আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক বই না পড়ে যে কোনো এক সেট বই ভালোভাবে পড়ে বার বার রিভিশন দিতে হবে। সম্ভব হলে গ্রুপ স্ট্যাডি করা যেতে পারে। তবে নিয়মিত জব সল্যুশন ও মডেল টেস্ট অনুশীলন করতে হবে। সম্ভব হলে বিসিএস কেন্দ্রিক সেমিনার, সিনিয়রদের পরামর্শ নিতে হবে। একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করলে আল্লাহর রহমতে ক্যাডার হওয়া সম্ভব।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মাসুম কামাল: বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার একজন কারিগর হতে চাই। আর গ্রামীণ ছাত্রদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যাতে তারা তাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গঠনে সব ধরনের পরামর্শ পায়।
এসইউ/জেআইএম