ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়া ছেলেটি এখন ‘ইলিয়াস স্যার’

রাশেদুল হাসান | প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩

ইংরেজি ভাষার এক তরুণ তুর্কি ইলিয়াস হোসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় ইংরেজি শিক্ষক তিনি। একজন সফল উদ্যোক্তা ও মোটিভেশনাল স্পিকার। বিভিন্ন মাধ্যমে লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীকে ইংরেজি ভাষা নিয়ে পাঠদান করিয়েছেন তিনি। নিজের নামে গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিষ্ঠানও। শুধু ‘ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ড’ থেকে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ইংরেজিতে দক্ষ হওয়ার সারথি তিনি। অসম্ভব স্বপ্নবাজ এ তরুণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।

ইলিয়াস হোসেনের পথচলা মসৃণ ছিল না। মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রবাসী বাবাকে হারান। পরিবারের পাঁচ সদস্যের দায়িত্বভার ওঠে সদ্য কৈশোর পেরোনো বড় ভাই মো. ইউসুফের হাতে। পারিবারিক নানা সংকটে ভাই-বোনরা লেখাপড়া থেকে সরে পড়লেও মেধাবী ইলিয়াস যেন থেমে যাওয়ার পাত্র নন। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ও ভাইদের সহযোগিতায় ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন ইলিয়াস। পরে টিউশনির টাকায় এইচএসসি পাসের পর চৌমুহনী কলেজে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।

পারিবারিক নানা টানাপোড়েনে লেখাপড়া ছেড়ে ২০১৩ সালে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ে জাহাজের যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ শিখতে চলে আসেন ইলিয়াস। কিন্তু সেখানে বেশিদিন তার মন টেকেনি। ২০১৪ সালে ফের নোয়াখালী চলে যান তিনি। ইংরেজি গ্রামারে দক্ষ ইলিয়াস তারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করছেন।

আরও পড়ুন: বিয়ের ছবি তুলে সফল রক্তিম সৈকত

ইলিয়াসের জীবনের মোড় ঘুরে যায় এখানে এসেই। শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেকে ইংরেজিতে আরও দক্ষ করার জন্য একাধিক কোর্সে ভর্তি হন। দৃঢ়প্রত্যয়ী ইলিয়াস ইংরেজিতে বুদ হয়ে থাকেন। তার তৃষ্ণা যেন মেটে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিখ্যাতজনের ইংরেজি বক্তব্য, ইংরেজি ভাষা শেখার কনটেন্ট পেলেই গিলতে থাকেন। ইলিয়াসের ইংরেজি দক্ষতার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে চার বছরের বেশি সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ইংরেজি পড়িয়েছেন ইলিয়াস। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ইংরেজি প্রশিক্ষক ছিলেন।

২০১৯ সালে নোয়াখালী ছাড়েন স্বপ্নবাজ ইলিয়াস। নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার মালিবাগ রেলগেট এলাকায় ওঠেন। আবারও একটি কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। রাজধানীর বনশ্রী, মৌচাক ও ফার্মগেট শাখায় নিয়মিত ক্লাস নিতেন। প্রায় ১০ মাস সেখানে পড়ানোর পর নতুন স্বপ্ন আঁকতে শুরু করেন ইলিয়াস।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বনশ্রীতে ছোট্ট পরিসরে ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ডের যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। দুই মাসের মাথায় মহামারি করোনায় সব বন্ধ হয়ে যায়। অনির্দিষ্ট কালের লকডাউনে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানকে বুকে আগলে রেখেছেন ইলিয়াস। এ সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের জুয়েলারি ব্যবসা শুরু করেন। ধার-দেনা ও অনলাইন ব্যবসার আয় দিয়ে লকডাউনে বন্ধ থাকা ২০ মাসের ভাড়া পরিশোধ করেন।

আরও পড়ুন: প্রোডাক্ট ডিজাইন থেকে মাসে আয় ৬ লাখ

২০২১ সালের আগস্টে লকডাউন শিথিল হয়। সবার মতো ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ডও খুললো। কিন্তু শিক্ষার্থী কোথায়? একদিন সরকারি উচ্চপদস্থ এক নারী কর্মকর্তা তার মেয়েকে নিয়ে আসেন। সেদিন দুজনই ভর্তি হলেন। নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করলো ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ড। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শুধু বনশ্রী শাখায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায়ও একটি শাখা চালু হয়েছে।

নোয়াখালীর সেই ইলিয়াস হয়ে ওঠেন ‘ইলিয়াস স্যার’। ২০২২ সালে সাভার যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও একই বছরের শেষের দিকে ইপিলিয়ন গ্রুপ, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশ ও ভারতের বাকুড়া খ্রিষ্টিয়ান কলেজে আন্তর্জাতিক সেমিনারে ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষক ছিলেন। এছাড়া তিনি দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা নিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। ইংরেজি ভাষা শেখায় আগ্রহীদের জন্য ‘সবার জন্য ইজি স্পোকেন’ নামে একটি বই লিখেছেন ইলিয়াস হোসেন। বইটি প্রকাশের পর থেকে বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি।

ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি শেখার প্রতি আমার প্রচণ্ড আগ্রহ কাজ করতো। হয়তো আমি তখন গ্রামারে ভালো ছিলাম কিন্তু ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতাম না। ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর দেখলাম আমি গ্রামার পড়াতে পারি কিন্তু ইংরেজিতে ভালোভাবে কথা বলতে পারি না। তখন থেকেই আমি ইংরেজি ভাষা শেখায় মনোনিবেশ করি।’

আরও পড়ুন: পরিবারের সমর্থন পেলে প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে মানোন্নয়ন ও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একমাত্র জায়গা হচ্ছে ঢাকা। সে স্বপ্ন নিয়ে আমি ঢাকায় আসি। আজকের এ অবস্থানে আসতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। সবার দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা এগিয়ে চলেছি।’

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ইলিয়াস হোসেন ২০২৩ সালে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ইংলিশ অলিম্পিয়াড, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্কিম সার্ভিস সম্মাননা, ইভ্যালুয়েশন ৩৬০ অ্যাওয়ার্ড, ফিউচার রাইচার্স বাংলাদেশ, সেলফ অ্যাম্বাসেডর অব বাংলাদেশ ও বেবিটিউব সম্মাননা পান।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন