উদ্যোক্তা তন্বীর সফলতার গল্প
মাহিন ইসলাম তন্বীর স্বপ্নের উদ্যোগের নাম ‘ইমরোজ’। অনলাইনে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে তার দোকান আছে বসুন্ধরা শপিং মলে। পরিবারে মা, বাবা আর ছোটবোন। এই ছোট পরিবারের বড় মেয়ে তন্বী। যার জন্য ছোটবেলা থেকেই তার পরিবারের চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন ছিল।
তন্বীই বললেন স্বপ্নযাত্রার প্রথম দিনগুলোর কথা, ‘ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি ছিল। সবাই ভাবত, হয়তো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে পড়তে হলো কমার্স নিয়ে। যে কারণে সবাই এখন ভাবতে লাগল, একজন নামকরা ব্যাংকার হবো। আমিও মনে মনে ভাবতাম, কিন্তু হিসাব-নিকাশের অদ্ভুত দুনিয়ায় ঢুকে গেলাম এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে করতে।’
তিনি বলেন, ‘পড়াশোনায় এতই মগ্ন থাকতাম, একটি বইয়ে কোম্পানির বাৎসরিক হিসাব করতে গিয়ে ভাবতাম, যদি আমিও একটা কোম্পানির মালিক হতাম। তাহলে খারাপ হতো না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয় নিয়ে অনেক রকম স্ট্যাডি করতে গিয়ে ভাবতাম, আমিও তো পারি কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে।’
তন্বী বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। এত কিছু ভেবেও বাস্তব জীবনেই ফিরে আসতে হতো দিনশেষে। অনেকে তাদের স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে খুব ভালোবাসেন। আমি স্বপ্ন দেখতে নয়; স্বপ্নকে বাস্তব রূপে দেখতে বেশি ভালোবাসি। তাই মিথ্যা স্বপ্ন দেখতাম না কখনোই।’
২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর পারিবারিকভাবেই তন্বীর ওপর চাপ আসে। পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে। তখনকার স্মৃতি টেনে বলেন, ‘আমি কখনো ক্লাসে সেকেন্ড হইনি। আমি যদি পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাই, তবে মুখ দেখাবো কী করে? এটি আসলে সামাজিক ট্যাবু। ভালো চাকরির জন্য হলেও ভালো জায়গায় আমাকে পড়াশোনা করতেই হবে। পরিবার থেকে মাত্র ৩টি পাবলিক ভার্সিটিতেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে সুযোগও হয়ে যায়।’
পড়তে গিয়েই তার কাছে মনে হয়, আমি কেন অন্যের অধীনে চাকরি করব? কেন নিজে কিছু করতে পারব না? পরাধীনতা এ তরুণী একদমই পছন্দ করেন না। যেই ভাবা; সেই কাজ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১৯০০ টাকা ইনভেস্ট করে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু ভারতীয় পোশাক ও জুয়েলারি অনলাইনে বিক্রি করা শুরু করেন। তখন এত সাড়া পেলেন, প্রথম মাসেই লাভ ছিল ৩০,০০০ টাকা।অবাক হলেও সত্য, এর পেছনে তার অসম্ভব অধ্যবসায় ছিল। কারণ পড়াশোনাও করতে হচ্ছিল তখন।
পরিবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুরুর দিকে মা ব্যবসা সম্পর্কে জানতেন। আমাকে তখন শতভাগ সাপোর্ট দিয়েছেন। আস্তে আস্তে বাবা বিষয়টি জানলেন। তখন ফ্যামিলি থেকে পুরো সাপোর্ট পেয়েছি। কোনোরকম বাধাগ্রস্ত হতে হয়নি। এখন তো বিয়েও হয়ে গেছে। একটি ছোট মেয়েও আছে আমার। আমার স্বামীও ব্যবসায় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। যেহেতু আমাকে বেশিরভাগ সময় ব্যবসায় দিতে হয়, তাই সংসারের যাবতীয় ব্যাপারগুলো কোনো অভিযোগ ছাড়াই তিনি দেখেন।’
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, ‘ইমরোজ মানে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের বয়স প্রায় ৫ বছর। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ভোক্তারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আমরা তাদের সন্তুষ্টির জন্য প্রতিনিয়ত নতুন উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। অনলাইনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও এখন আমাদের একটি শোরুম আছে।’
সবশেষে তন্বী বলেন, ‘যেহেতু ব্যবসায়ী হিসেবেই এতদূর এসেছি এবং উদ্যোক্তা হিসেবেই সুপরিচিত। তাই ভবিষ্যতে আরও নতুন এবং বিস্তর ভাবে ভোক্তাদের উন্নতমানের সেবা দিতে চাই। যেন দেশের বাইরেও আমাদের সেবা পৌঁছে দিতে পারি।’
এসইউ/এমএস