ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডারে রাসেল

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২২

রাসেল মুন্সী ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা খুলনার দৌলতপুরে। তার বাবা আসলাম মুন্সী একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিক এবং মা তরুণী বেগম একজন গৃহিণী। তিনি ২০১১ সালে সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে খুলনা সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন?
রাসেল মুন্সী: ৪০তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস ছিল। প্রথম বিসিএসেই স্বপ্নের প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পাওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও পিতা-মাতার দোয়ায় আজ আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছেন কবে থেকে?
রাসেল মুন্সী: উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আমি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি একটা বড় ধরনের হোঁচট খাই। যা আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করে। তারপর মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। তখন থেকেই ধীরে ধীরে জানতে পারি যে, বিসিএসের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সেবা করা সম্ভব। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে এ সুযোগ সবচেয়ে বেশি। তাই তখন থেকেই দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার লক্ষ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।

in-3

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
রাসেল মুন্সী: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিসিএসের জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুতি শুরু করি। পত্রিকা ও ফেসবুকে বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডারদের লেখা পড়তাম আর নিজের প্রস্তুতি কৌশল সাজানোর চেষ্টা করতাম। অনার্সের শেষের দিকে এসে কোচিংয়ে ভর্তি হই এবং বিসিএস সিলেবাস অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিতে থাকি। অনার্সের শেষে আমি একটি চাকরির কোচিং পরিচালনা করি। চাকরির কোচিংয়ে পড়ানো আমাকে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে অনেক বেশি সহায়তা করেছে। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও মাস্টার্স ১ম টার্মের পরীক্ষা একই সময়ে পড়েছিল। অনেক চাপের মধ্যেই বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করি এবং সফল হই। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির সময় চেষ্টা করতাম ট্রেনের লাস্ট বগিটা ধরতে, কারণ প্রিলিমিনারিতে পাস করতে পারলেই হলো। সর্বোচ্চ মার্ক পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শেষ সময়ে অনেকগুলো মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষা শেষে সব সময় প্রাপ্ত নম্বর অ্যানালাইসিস করে দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেখানে পরিমিত সময় দেওয়ার চেষ্টা করতাম। এভাবে পড়াশোনা করেই পরপর ৩টি বিসিএস ৪০, ৪১ ও ৪৩ এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

লিখিত পরীক্ষার আগে আমরা প্রায় ৭ মাস সময় পেয়েছিলাম। সিলেবাস অনুসরণ করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার বিশাল সিলেবাসের কিছুই যেন শেষ হচ্ছিল না। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য পত্রিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ টপিক নোট করার চেষ্টা করতাম। ইংরেজির জন্য তেমন কিছু পড়া লাগেনি। তবে অনুবাদ প্রাকটিস করতাম। বিজ্ঞানের বিশাল সিলেবাসের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিজে সাজেশন করে পড়ার চেষ্টা করতাম। বাংলায় ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশ গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। গণিত লিখিত সিলেবাস অনুসরণ করে প্র্যাকটিস করেছি। আর মানসিক দক্ষতার জন্য প্রিলির প্রস্তুতির পরে নতুন করে আর দেখার সুযোগ হয়নি। হঠাৎ মাত্র ২৩ দিন আগে আমাদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়। পরীক্ষার সিডিউল ঘোষণার পর থেকে সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু পড়াশোনার চেষ্টা করি। লিখিত পরীক্ষার পরপরই ভাইবার প্রস্তুতি শুরু করি। নিজ সাবজেক্ট, জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান, বর্তমান সরকারের কার্যক্রম, পত্রিকায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলি গুরুত্ব দিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। পাশাপাশি কয়েকটা মডেল ভাইবায় অংশগ্রহণ করে নিজেকে আরও শাণিত করার চেষ্টা করেছি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রায় কাদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
রাসেল মুন্সী: আমার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আম্মুর। আমার মা জীবনভর অনেক সংগ্রাম করে আমাকে আজকের অবস্থানে এনেছেন। আব্বুও আমার সফলতার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমার শিক্ষার ভিত্তিটা অনেক মজবুত করে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছেন। যা আমাকে প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডার উপহার দিয়েছে। আমার স্ত্রী সর্বদা আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও ছোট বোন, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধবী, ছাত্র-ছাত্রী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেক বেশি দোয়া করেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

in-3

জাগো নিউজ: বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?
রাসেল মুন্সী: বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের পূর্বে সর্বপ্রথম মন স্থির করতে হবে। অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ বিসিএস জার্নিটা উপভোগ করতে হবে। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিক স্যার বলেছেন, ‘বিসিএস মেধাবীদের জন্য নয়, বিসিএস ধৈর্যশীল মেধাবীদের জন্য।’ কথাটা আসলেই সত্য। এই চরম সত্য মাথায় রেখেই নতুনদের বিসিএস যাত্রা শুরু করতে হবে। এ যাত্রার শুরুতেই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস অনুসরণ করে টপিক ধরে ধরে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে টপিক থেকে বেশি মার্ক আসার নিশ্চয়তা আছে, সেখানে বেশি সময় দিতে হবে। এভাবে বিগত বিসিএস প্রশ্ন প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস করে প্রস্তুতি কৌশল সাজাতে হবে। প্রতিদিন পড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং নিয়মিত পড়াশোনায় সময় দিতে হবে। অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন করেন, কত ঘণ্টা পড়া উচিত? আসলে নিজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও পরিমিত ঘুমের সময় বাদ দিয়ে বাকি সময় পড়াশোনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। তাই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার সাথে সাথে অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তাকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। নিয়মিত নামাজ পড়া ও প্রার্থনা করতে হবে। কখনো কখনো মনের আকাশে হতাশার কালো মেঘ জমতে শুরু করবে। কিন্তু হতাশ না হয়ে আশায় বুক বাঁধতে হবে। মহাপবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কষ্টের পরেই স্বস্তি আছে।’

জাগো নিউজ: বিসিএস লিখিত প্রস্তুতিতে কীভাবে পড়াশোনা করতে হবে?
রাসেল মুন্সী: প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর থেকে লিখিত পরীক্ষার আগে সাধারণত প্রায় ৫-৬ মাস সময় থাকে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই সময়টা অত্যন্ত কম। তাই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরদিন থেকেই প্রিলি পরীক্ষা ভালো হলে লিখিত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার বিশাল সিলেবাস শেষ করার জন্য একটু কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করতে হবে। বিসিএস লিখিত সিলেবাস থেকে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় কোথায় ফুল মার্ক পাওয়া সম্ভব, সেগুলো যত্ন সহকারে পড়ে ফেলতে হবে। ইংরেজি ও গণিত নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করতে হবে। ম্যাপ, ডাটা, চার্ট, উক্তির মাধ্যমে খাতার উপস্থাপনা আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে নীল রঙের কলম ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বেশি বেশি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। হাতের লেখার গতি ও টাইম ম্যানেজমেন্ট ভালো না হলে অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়েও সফলতার দেখা মিলবে না। তাই লিখিত পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

in-3

জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবা প্রস্তুতি কেমন হবে?
রাসেল মুন্সী: ভাইবা পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত পরীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপন দক্ষতা, চাপ মোকাবিলার সক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, আচরণ, সাধারণ জ্ঞান, বিশ্লেষণী দক্ষতা প্রভৃতি যাচাই করা হয়। এজন্য নিজ সাবজেক্ট, নিজের জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান, বর্তমান সরকারের কার্যক্রম, পত্রিকায় সাম্প্রতিক দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ঘটনাবলি গুরুত্ব দিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এর পাশাপাশি কয়েকটি মডেল ভাইবায় অংশগ্রহণ করে নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করলে ভাইবা প্রস্তুতি আরও ভালো হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রাসেল মুন্সী: দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে সর্বোচ্চভাবে নিয়োজিত করার লক্ষ্যেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের স্বপ্ন দেখি। আমার এ লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনিমার্ণের লক্ষ্যে সর্বদা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন