ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

১৩ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি করেছেন জান্নাতুল

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২২

জান্নাতুল ফেরদৌসের বেড়ে ওঠা ঢাকার শাজাহানপুরে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসএস পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা ল’ কলেজ থেকে এলএলবি এবং বিআইএম থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শেষ করেন। পড়াশোনা শেষে একটি কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগে বেশ কয়েক বছর চাকরি করেছেন। সন্তানের লেখাপড়া ও সংসারের জটিলতায় চাকরি আর করা হয়নি। একপর্যায়ে ছেড়ে দিতে হয়। যে কারণে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে যান উদ্যোক্তা। ২০১১ সাল থেকে পিঠা নিয়ে কাজ করলেও অনলাইনে শুরু করেন ২০১৯ সালে। এ পর্যন্ত তিনি অনলাইনে প্রায় ১৩ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি করেছেন।

শুরুর গল্প
২০১১ সালে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার পর যখন সময় কাটছিল না, তখন তিনি নানা রকম পিঠা বানাতেন এবং বাসা থেকেই বিক্রি করতেন। তবে ২০১৯ সালে তার ছেলের ইচ্ছাতেই প্রথম অনলাইনে পিঠা নিয়ে কাজ শুরু করেন। শুরু করার আগে চিন্তাটা ছিল এরকম, এতদিন শখের বসে করতেন; এখন অনলাইনে সিরিয়াসলি করবেন।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমি দক্ষতাকে কাজে লাগাই। যে বিষয়ে পারদর্শী; সেটা নিয়েই কাজ শুরু করলাম। ছোটবেলা থেকেই পিঠা বানাতে পছন্দ করতাম। এ বিষয়ে দক্ষতাও ছিল। চিন্তা করলাম, তাহলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং যেসব পিঠা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে; সেসব নিয়ে কাজ করব। বাংলার জনগণের কাছে, এমনকি দেশের বাইরেও ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো নতুনভাবে তুলে ধরব। সে প্রয়াসেই পিঠা নিয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী সতীন মোচড় নকশি পিঠা আমার হাত ধরে বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলায় চলে গেছে। এ পর্যন্ত দেশের বাইরে গেছে আমার হাতে তৈরি হরেক রকম পিঠা।’

প্রতিবন্ধকতা
যে কোনো কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। তার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব চারপাশ থেকে বলা শুরু করেছিল, এত উচ্চশিক্ষিত হয়ে এত ভালো চাকরি ছেড়ে দিয়ে এতদিনে পিঠা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে। রাস্তার পাশে, স্কুল-কলেজ, বাজারে অতো মানুষ পিঠা বিক্রি করে; তার কেন এটা করতে হবে? কিন্তু এসব কথা জান্নাতুলের কাজে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি মনে করতেন কাজ তো কাজই। এটার আবার বড়, ছোট কী?

এগিয়ে চলা
এ পর্যন্ত জান্নাতুলের পিঠার ক্রেতা প্রায় ১৭শ’র উপরে। এরমধ্যে প্রায় ৯৫% তার রিপিট ক্রেতা। জান্নাতুল তার এলাকার প্রায় দেড়শ বছরের বিলুপ্তপ্রায় পিঠা ‘সতীন মোচড়’ নতুনভাবে পরিচিত করতে পেরেছেন অনলাইন পিঠার দোকানের মাধ্যমে। তিনি বরিশাল অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় একটি পিঠা ‘বস্তা পিঠা’ নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। জান্নাতুল বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পিঠা বিক্রি করে থাকি ফেসবুক পেজ জান্নাত’স কিচেনের মাধ্যমে।

পিঠা নিয়ে কাজ করার কারণ
পিঠা নিয়ে কাজ করার দুটি উদ্দেশ্য। প্রথম উদ্দেশ্য সবাইকে বোঝানো যে, কোনো কাজই ছোট নয়। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করে গেলে সব কাজেই সফল হওয়া যায়। আরেকটি হচ্ছে, বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা। বাংলার ঐতিহ্যকে সবার মাঝে আবার ফিরিয়ে আনা।

জান্নাতুল বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা ফাস্টফুড, পাঞ্চো ফুড, চাইনিজ, অ্যারাবিয়ান, ইন্ডিয়ান, থাই খাবার ছাড়া কিছু বোঝেই না। এগুলো বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ যুগের বাচ্চাদের বাংলার ঐতিহ্য পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে খাবারগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। এ জন্যই আমি বাংলার হারানো ঐতিহ্য পিঠা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিলাম।’

যে পিঠা নিয়ে কাজ করেন
জান্নাতুল প্রায় ১২০ রকমের পিঠা নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য: নকশি পিঠা, সতীন মোচর পিঠা, বস্তা পিঠা, সাগুদানা রিং পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, পোয়া পিঠা, পানতোয়া পিঠা, বকুল পিঠা, দুধগকুল পিঠা, রসমনজুরি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, ভাপা পিঠা, ঝিনুক পিঠা, আস্কে পিঠা, ছিটা পিঠা, শিলা পিঠা, বৌ পিঠা, জামাই আদর পিঠা, মুগপাকন পিঠা, রস পাকন পিঠা, ঝিলিমিলি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, তালের পিঠা, তেলের পিঠা, ইলিশ পিঠা, বিবিখানা পিঠা, আনদুশা পিঠা, দুধপুলি পিঠা, ভাজাপুলি পিঠা, টুইপিঠা, কলা পিঠা, শেয়ই পিঠা, মেরা পিঠা, মসলা পিঠা, মকসামালা পিঠা, হৃদয়হরণ পিঠা, ছানাপোরা পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, পাতা বেণী পিঠা, চন্দ্রপুলি পিঠা, চন্দ্রক্রান্তি পিঠা, পাককাস পিঠা, ছাঁচের পিঠা, রং বাহারি পুলি, সুজির মনডা পিঠা, খেজুর পিঠা, বেণীপিঠা, চিতই, ডিমসুন্দরী, সূর্যমুখি পিঠা, নারিকেলের ছাইয়া পিঠা।

পিঠার দাম ও ডেলিভারি
জান্নাতুলের পিঠাগুলোর সর্বনিম্ন দাম ২০ টাকা পিস আর সর্বোচ্চ ৮০ টাকা পিস। কিছু পিঠা আছে যেগুলো কেজিদরে বিক্রি হয়। সেগুলো ৮০০-১০০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়। পিঠাগুলো তিনি ব্যক্তিগত ডেলিভারিম্যানের মাধ্যমে ঢাকা শহরে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে বা ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে থাকেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জান্নাতুল স্বপ্ন দেখেন, তার উদ্যোগ জান্নাত কিচেন’স একদিন ব্র্যান্ড হবে। দেশ ছাড়িয়ে যাবে বিদেশে। পিঠার নাম মনে এলেই মানুষের মাথায় একটি নাম থাকবে, তা হলো জান্নাত’স কিচেন। তিনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চান। ভবিষ্যতে পিঠার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করবেন। যার মাধ্যমে অনেক পিঠাশিল্পী তৈরি হবে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন