ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হলেন মাহমুদুল

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

মো. মাহমুদুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ‘সহকারী পরিচালক’ পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। তিনি ২০১১ সালে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল রাজশাহী থেকে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ রাজশাহী থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে কর্মরত। সম্প্রতি ব্যাংকে চাকরি পাওয়া, নতুনদের পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: লাখো লাখো চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্নের চাকরি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদটি। তাই মহান আল্লাহ তাআলার কাছে অজস্র শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি মেধা তালিকায় ২০তম স্থান অধিকার করে ওই পদে নিয়োগ পেয়েছি। ফাইনাল রেজাল্ট শিটে রোল দেখার সঙ্গে সঙ্গে এত খুশি লাগছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন হয়ে যাবে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: আমি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করি। সেখানে অধ্যয়নকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরে এর প্রতি একটি আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়। এখানে চাকরির জন্য সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে লালন করতে থাকি।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: আমার বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হয় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি। এরপর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসার ইচ্ছা পোষণ করলে অনেক দিক থেকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হই। আমি রাজশাহীর সন্তান। বাসার সবাই চেয়েছিলেন, আমি গ্র্যাজুয়েশনের পর নিজ বাসায় থেকেই প্রিপারেশন নিই। কিন্তু জবের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করার পর আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ চাকরিগুলো ঢাকা কেন্দ্রীক এবং পরীক্ষাগুলোও হয়ে থাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে। তাই বার বার রাজশাহী-ঢাকা ট্রাভেল করে পরীক্ষা দেওয়া একটু কঠিন। এজন্য অনেকটা সবার মতের বিপক্ষেই ঢাকায় একটি মেসে উঠি এবং চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকি।

এর মাঝে হঠাৎ কোভিড-১৯ এর প্রকোপে পুরো দেশে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। এসময় আমি নিজ বাসায় থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। এরপর লকডাউন শেষ হলে ২০২১ সালের শুরুর দিকে আমি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ‘প্রবেশনারী অফিসার’ হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই। এখানে চাকরির তিন মাসের মাথায় এক্সিম ব্যাংকে ‘ট্রেইনি অফিসার’ পদে হেড অফিসে নিয়োগের অফার পাই এবং সেখানে জয়েন করে ফেলি। কিন্তু মনের মধ্যে তখনো সরকারি চাকরির জেদ ছিল। জবের পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশোনা। ফলস্বরূপ আমি বিটিআরসি, বেজা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, পল্লী বিদ্যুৎ, টেলিটকের মত বেশ কয়েকটি নামকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেণির পদগুলোয় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইবা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পাই। যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।

bank

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রিলির তারিখ ঘোষণার পর প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে দুই ঘণ্টা এবং অফিস থেকে বাসায় আসার পর দুই ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতাম। বেশি পড়ার চেয়েও স্ট্রাটেজিকালি পড়াশোনা করা বেশি জরুরি বলে মনে করি। একে একে ব্যাংকের প্রিলি ও রিটেনে টিকি। ভাইবা দিয়েই কনফিডেন্ট ছিলাম, ভালো কিছু হতে যাচ্ছে। এরপর যেদিন ভাইবার রেজাল্ট দেয়; সেদিন অফিসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ অফিসেরই অন্য ডিপার্টমেন্টের একজন ফোন দিয়ে রেজাল্ট প্রকাশের কথা জানায়। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রথমেই রোল ওয়াইজ নাম খুঁজতে থাকি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলাম রেজাল্ট মেধা তালিকা অনুযায়ী দেওয়া। এরপর প্রথম থেকে খুঁজতে খুঁজতে ২০তম স্থানে আমার রোল খুঁজে পাই।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: আমার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মায়ের। আমার মা আসফে মাহেনুর জীবনের সব ক্ষেত্রে সাহস জুগিয়েছেন। তার ডেডিকেশন ছাড়া এ সাফল্য অর্জন অসম্ভব। আমার বাবা অ্যাডভোকেট মো. মনোয়ারুল ইসলাম, স্ত্রী, ছোট ভাই ও আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন সময় নানাভাবে সাপোর্ট ও সহযোগিতা করেছেন।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কি কোনোভাবে কাজে লেগেছে?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: অবশ্যই, সোশ্যাল মিডিয়াকে আমরা পজিটিভলি ব্যবহার করতে পারলে এর চেয়ে উপকারী বন্ধু আর নেই। আমি জব প্রিপারেশনের পুরো সময়টাতেই সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন জব গ্রুপ আর পেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেখান থেকে যেমন নতুন জবের সার্কুলারগুলো পেতাম, ঠিক তেমনই তাদের শেয়ার করা দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানগুলো পেয়ে যেতাম এবং তা নোট করে রাখতাম। এর সুফল আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরির পরীক্ষার সব ধাপেই পেয়েছি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকের প্রিলি সম্পর্কে নতুনদের কী পরামর্শ দেবেন?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: আমি মনে করি, ব্যাংকের প্রিলিমিনারিকে বাছাই প্রক্রিয়ার বদলে ছাঁটাই প্রক্রিয়া বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত। নতুন চাকরিপ্রার্থীরা গ্রাজুয়েশনের পর প্রিলি দিতে এসে দেখেন ২০০ পদের বিপরীতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২-৩ লাখ। তখন অনেকেই কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেন। নতুনরা পরীক্ষার্থীর সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে কোয়ালিটি বা পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেটের দিকে তাকাবেন। সেটা কিন্তু ২০-৩০ হাজারের বেশি হয় না। অনেকেই শুধুই আবেদন করেন। বিধায় প্রিপারেশন ভালো না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা অংশ নেন। তাই নিজের স্কিল ও প্রিপারেশনকে কীভাবে শাণিত করা যায়, সেদিকে বেশি খেয়াল রাখা জরুরি। এজন্য প্রিলির জন্য বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণের জন্য বিসিএসের যে কোনো একটি সিরিজের বই শেষ করবেন। ইংরেজি ভোকাব্যুলারি প্রতিদিন ১০টা করে মুখস্থ করে সেগুলো বাক্যে প্রয়োগ করবেন; এতে মনে থাকবে বেশি। ইংরেজি গ্রামার প্রাক্টিস করবেন। ম্যাথের জন্য বিগত সালের আইবিএ এবং ব্যাংক জব সল্যুশন শেষ করবেন। ব্যাংকের প্রিলিতে সাধারণ জ্ঞান সাধারণত সাম্প্রতিক বেশি আসে। এ ছাড়া কম্পিউটারের জন্য বই পড়ে ফেলবেন; সঙ্গে কম্পিউটারের সব শর্টকাট পড়বেন এবং কম্পিউটার প্র্যাক্টিকালি ব্যবহার করবেন। সবশেষে বিগত সালের প্রশ্ন নিয়মিত টাইমফ্রেম ঠিক রেখে সলভ করবেন।

bank

জাগো নিউজ: ব্যাংকের লিখিত প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: অনেকেই একটা ভুল করেন; প্রিলির রেজাল্টে রোল এলে এরপর সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু প্রিলির পর রিটেনের জন্য সর্বোচ্চ এক-দেড় মাস সময় থাকে। তাই প্রিলির সাথে প্যারালালি রিটেনের জন্যও পড়বেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া, গুরুত্বপূর্ণ ও সাম্প্রতিক ডাটাগুলো কালেক্ট করে নোট করে রাখবেন। ফোকাস রাইটিংয়ে পার্থক্য হয় সবচেয়ে বেশি। এ জন্য ইংরেজি ও বাংলা ফোকাস রাইটিং (গুরুত্বপূর্ণ ও সাম্প্রতিক) নিয়মিত লেখার ও কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করবেন। ম্যাথে ৫টার মধ্যে যেগুলো সবার জন্যই পারার মতো, সেগুলো পারতেই হবে। আর বাকিগুলোর মধ্যে একটা এক্সট্রা পেরে গেলেই দিনশেষে এই সেকশনে আপনি বিজয়ী। ট্রান্সলেশন বিগত সালের বিবি এডি ও সিনিয়র অফিসারের দুটা (বাংলা টু ইংলিশ ও ইংলিশ টু বাংলা) প্রতিদিন প্র্যাক্টিস করবেন। সামারি আর প্যাসেজ থেকে শর্ট কোয়েশ্চেন অবশ্যই বিগত সালের থেকে নিজে ট্রাই করবেন। এখন আবার সাধারণ জ্ঞানও দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, রিসেন্ট ইস্যু ও ব্যাংকিংয়ের কিছু শর্ট ফর্ম ও কিছু বেসিক ব্যাংকিং নলেজ রাখা। এভাবে সবগুলো টাইমফ্রেম ধরে দ্রুত হাতে লিখে শেষ করতে চেষ্টা করবেন।

জাগো নিউজ: ব্যাংকের ভাইবায় কী কী জানা প্রয়োজন?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২০০ মার্কের রিটেনে মূল খেলাটা হলেও, ভাইবার ২৫ মার্কস অবশ্যই আপনাকে সেন্ট্রাল ব্যাংকার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। রিটেনে আপনার মেধার পরিচয় দিয়ে ফেলেছেন, এখন ভাইবায় যাচাই করা হবে বুদ্ধিমত্তা, কুইক থিংকিং অ্যাবিলিটি ও সিচুয়েশন ম্যানেজমেন্ট। ভাইবা নেবেন ডেপুটি গভর্নরসহ কয়েকজন সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তা। তারা দেখবেন পরীক্ষার্থী নিজের সম্পর্কে, দেশ-জাতি, অর্থনীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নিজের পঠিত সাবজেক্ট সম্পর্কে কতটুকু আপডেটেড। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে দেশ ও দশের খবর রাখায় কতটুকু সচেতন, এগুলোও তাদের জন্য মুখ্য বিষয় হবে।

জাগো নিউজ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মাহমুদুল ইসলাম: কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। একটি দেশের তিন শ্রেণির ব্যুরোক্র্যাটের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল ব্যুরোক্র্যাট অন্যতম। একটি দেশ তখনই উন্নত হবে; যখন তাদের ফিন্যান্সিয়াল ব্যুরোক্র্যাটরা অপর দুই শ্রেণি থেকে আপডেটেড রাখবে জ্ঞান-গরিমা ও মনন দিয়ে। একজন সেন্ট্রাল ব্যাংকার হিসেবে আমি ভবিষ্যতে বেশ কিছু বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণসহ নিজেকে একজন ফিন্যান্সিয়াল ব্যুরোক্র্যাট হিসেবে সামগ্রিকভাবে আপডেটেড রাখবো। আমার কোনো পলিসি কোনো একদিন দেশের ও পুরো বিশ্বের প্রেক্ষাপট বদলে দেবে। এর সুফল পৃথিবী অনেকদিন ভোগ করবে এ আশা ব্যক্ত করি।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন