ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

৩ বছরেই সফল নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সম্রাট

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

নাম সম্রাট হলেও তার কোনো সাম্রাজ্য ছিল না। শরীয়তপুরের চিকন্দী ইউনিউয়নের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন বড় হবেন। চিকন্দী সরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।

নিজে কিছু একটা করবেন, এমন স্বপ্ন নিয়েই তার ঢাকায় আসা। ঢাকায় আপন বলতে কেউই নেই। অনলাইন মাধ্যমে কাজের সুযোগের বিষয়ে তার ধারণা ছিল। তাই এ মাধ্যমেই কাজের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজনে ই-কমার্স নিয়ে একটি কোম্পানির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে প্রথম কাজ শুরু করেন। কাজ চলাকালীন হঠাৎ করেই বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হন। ফলে বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে দেন। এরপর অনেকটাই ভেঙে পড়েন। সে সময় তার থাকা-খাওয়া এবং চলার অবস্থা খুবই করুণ ছিল।

এই শহরে টিকে থাকার জন্য অন্য কাজ খুঁজতে থাকেন। এ সময় তার এক বড় ভাই সামসুল হক ঢালি তাকে একটি রেস্টুরেন্টে কাজের সুযোগ করে দেন। তখন তিনি একটু আলোর মুখ দেখতে পান। নিজের একটা গতি হলো বলে!

সম্রাটের ভাষ্য, ‘একটা কাজের ব্যবস্থা হলেও শুরুটা এতটাও ভালো ছিল না। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য আমাকে ফরমাল পোশাক পরে যেতে হবে কিন্তু আমার কাছে সেসব কিছুই ছিল না। এমনকি সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার ভাড়াটাও ছিল না। ওই মুহূর্তে কাজটি আমার খুবই দরকার ছিল। তাই এক আত্মীয়ের কাছ থেকে আটশ টাকা ধার নিই। নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে শার্ট, প্যান্ট ও জুতা কিনি। তারপর ফরমালভাবে ইন্টারভিউ দিই।’

তিনি বলেন, ‘সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করি। প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় দিতে হতো। কাজ চলাকালীন আমাকে ক্রয়কৃত জুতা-শার্টের জন্য অনেকের কাছে হাসি-ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হতে হয়েছে। তবুও চুপ করেই থাকতাম, কোন প্রতি উত্তর করতাম না। তবে কাজ করার সময় হঠাৎ চিকনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হই। প্রায় ১৫ দিন অসুস্থ ছিলাম, কাজ করতে পারিনি। এক মাসের বেতন পাওনা থাকলেও সেটা আর দেয়নি আমাকে। এরপর প্রায় বেশ কয়েকদিন বাইরে বাইরে ঘুরতে হয়েছিল কাজের জন্য।’

এরপর সম্রাট তার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের অফিসে সময় দিতেন। সেখানে অনলাইন মাধ্যমে কাজ করতেন। অনলাইন কাজ সম্পর্কে বিশদ ধারণা নেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে থাকেন। সে সময় এক আমেরিকান ক্লায়েন্টের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং কাজ নিয়ে কথা হয়। তখন সেই ক্লায়েন্ট তাকে অ্যামাজন আর ওয়ালমার্ট নিয়ে বেশকিছু কাজ দেন। অ্যামাজন স্টোরের সব ধরনের কাজ যেমন- স্টোরের অর্ডার হিসাব, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, পণ্য বাছাইকরণ, কত ডলার খরচ এবং প্রফিট হচ্ছে—সব কাজেরই হিসাব করতে হতো রাত জেগে।

সেখান থেকে শুরু হলো তার নতুন পথচলা। ই-কমার্স নিয়ে কাজ শুরু। ই-কমার্সের প্রথম দিকটা খুবই কষ্টের ছিল। প্রথম মাসে তিনি কাজের জন্য এক মাসে ১৮ ডলার পান। দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজ করে দুই-তিন মাস একই ভাবে চলতে থাকে। এ সময়টুকুতে তার পাশে কেউ থাকেননি, একমাত্র পরিবার ছাড়া। আস্তে আস্তে কাজ ভালোভাবে চলতে থাকে। বাল্যবন্ধু রায়হান কাজে সহযোগিতা করতে লাগলেন। তাদের কাজ বাড়তে লাগল। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন আরও একজন। তিনজনের টিম নিয়েই তাদের ই-কমার্স যাত্রা শুরু।

২০১৯ সালের ২০ জুন সম্রাট প্রতিষ্ঠা করেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘এস আর সলিউশন’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্রাটের প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করেন ১৮০ জন কর্মী, যাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশি। সম্রাট তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেই ভালো টাকা আয় করেন। এদের মধ্যে যারা একটু বেশি দক্ষ; তারা প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। সম্রাট জানান, প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন বাবদ ব্যয় করেন ৮০-৯০ লাখ টাকা।

ই-কমার্স নিয়ে কাজ করতে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকারও হয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এ তরুণ। তিনি বলেন, ‘পথচলার শুরু থেকে নানা প্রতিবন্ধকতাই পার করেছি। অনেকের বিশ্বাসঘাতকার শিকারও হয়েছি, আবার প্রতারণারও। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, অনেকেই আমার হাত ধরে কাজ শিখে অনেকদূর গিয়েছেন। তাদের কাছে ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাটুকু পাইনি। বরং ক্ষতিই করতে চেয়েছেন অনেকে। তবুও পিছপা হইনি।’

সম্রাট এখন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। তার ইচ্ছা, আগামীতে আরও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। কর্মীদের একটি অফিসের আওতায় নিয়ে আসবেন। তিনি মনে করেন, যুবকদের কাজে লাগিয়েই দেশ ও দশের কল্যাণ করা সম্ভব।

এমআই/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন