ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

ব্যাংকে চাকরিতে এগিয়ে রাখে গণিত-ইংরেজির দক্ষতা

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আতিক জাফরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। তিনি ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে সরকারি কমার্স কলেজ চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে কর্মরত। এর আগে ফিল্ড অফিসার (১০ম গ্রেড) পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (এনএসআই) চাকরি করেছেন। এ ছাড়া সমন্বিত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

সম্প্রতি ব্যাংকে চাকরি পাওয়া, নতুনদের জন্য পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সহকারী পরিচালক’ পদে চাকরি পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
আতিক জাফর: বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক একটি আকর্ষণীয় পদ। কর্মপরিবেশ, কর্মীবান্ধব এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। একসময় এটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে নীতি নির্ধারণী কাজে অংশগ্রহণ করে আর্থিক খাতে সুপরিবর্তন করা সম্ভব বলে এ চাকরি পেয়ে অবশ্যই অনেক খুশি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আতিক জাফর: বড় মামা-মামিকে ছোটবেলা থেকেই ব্যাংকে চাকরি করতে দেখেছি। বড় মামা শওকত ওসমান রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম পদে অবসর নেন। মামি মিসেস ইলিম আখতার জাহান বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিরিক্ত পরিচালক পদে কর্মরত। বিশেষ করে বড় মামির কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের পরিধি ও কর্মপরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারি। এ ছাড়া নিজেও বিজনেস স্ট্যাডিজ ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যপরিধি সম্পর্কে জানা ছিল। বর্তমান জব মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির চাহিদাও আমাকে আকৃষ্ট করে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়তে থাকে। তবে কমার্শিয়াল ব্যাংকের চাকরির প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
আতিক জাফর: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটের কারণে আমাদের অনার্স শেষ হয় ২০১৮ সালে। মূলত আমার প্রিপারেশন ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু করি। গুছিয়ে ওঠার আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১০ম গ্রেডে ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি পেয়ে যাই। যেটি আমার চাকরি জীবনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। আমি নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে যাই। আমার ধারণা ছিল, একটু গুছিয়ে পড়তে পারলে ১ম শ্রেণির চাকরি পাব। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা হচ্ছিল না। এ ছাড়াও একটু পারিবারিক সমস্যার কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে পুরোদমে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। গণিত এবং ইংরেজির দক্ষতা আমাকে সব সময় এগিয়ে রেখেছে। মূলত গোছানো প্রিপারেশনই আমার দ্রুত সফলতার কারণ।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কি কাজে লেগেছে?
আতিক জাফর: সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারী এবং অপকারী দুটি দিকই আছে। এ ক্ষেত্রে সেলফ কন্ট্রোলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ জ্ঞান সংক্রান্ত তথ্যের আপডেট পেতাম। যেটি আমার পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করে। আমি বিভিন্ন জব প্রিপারেশনের গ্রুপগুলোয় যুক্ত থাকতাম। ফলে ফেসবুকে অবসরে ব্রাউজ করতে গেলেই সেসব গ্রুপের আপডেট তথ্যগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিতাম। এ ছাড়া পরীক্ষার রুটিন, সময়সূচি, সফলদের অভিজ্ঞতা শেয়ারসহ বিভিন্ন তথ্য গোছানোভাবে পেতাম। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারী দিকগুলো গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। যা আমার প্রিপারেশনে কাজ দিয়েছে। তবে অনেকেই আছেন যারা এর সদ্ব্যবহার করতে পারছেন না। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পরিহার করা উচিত।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
আতিক জাফর: ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ডাক্তার আসিফ জাফর। ছোট থেকেই আমি তাকে অনুসরণ করতাম। আমাদের সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুর মতো। ভাইকে দেখতাম সারাদিন পড়াশোনায় মগ্ন থাকতেন। আমাদের গ্রাম থেকে প্রথম প্রাথমিক বৃত্তি পেয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। তার অর্জন, নীতি-নৈতিকতা দেখে সব সময় অনুপ্রাণিত হয়ে এসেছি। এ ছাড়া পরিবার, শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয়-স্বজন সবাই সব সময় অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন। এখনো মনে আছে, আগের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকেই আমাকে বাধা দিচ্ছিলেন। তখন আমার পরিবার এবং শ্বশুরবাড়ির সবাই আমাকে সাপোর্ট করেন। যা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। সর্বোপরি মা-বাবার দোয়া ছাড়া কোনো সন্তান সফলতার মুখ দেখতে পারে না। আমার মা-বাবা সব সময় আমার জন্য দোয়া করেছেন।

জাগো নিউজ: যারা ব্যাংকের চাকরিতে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
আতিক জাফর: যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রিপারেশন নিতে চান, তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে পড়াশোনাকে বিভিন্ন সেগমেন্টে গুছিয়ে নিয়ে শুরু করবেন। গোছানো প্রিপারেশন প্রার্থীদের সব সময় এগিয়ে রাখে। প্রিলিতে বাংলা, সাধারণ জ্ঞান ও আইসিটি বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক অ্যানাইলাইসিস করে টপিক নির্ধারণ করে ফেলা। এরপর সেই টপিকের বিস্তারিত বাজারের কোনো বই থেকে পড়ে ফেলা। গণিত এবং ইংরেজির জন্য প্রিলি ও লিখিত একসাথে প্রিপারেশন নিতে হবে। বেসিক বুঝে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের গণিত শেষ করা, ইংরেজিতে গ্রামারের জন্য ক্লিফস টোফেল শেষ করে বাজারের কোনো একটি বই থেকে গ্রামারের টপিকগুলোর অনুশীলন করতে হবে। লিখিতের ক্ষেত্রে ইংরেজির জন্য যে কোন দুটি জাতীয় দৈনিক অথবা সম্পাদকীয় যে কোনো বই থেকে প্রতিসপ্তাহে অনুবাদ চর্চা করা। ফোকাস রাইটিংয়ের জন্য ফ্রি হ্যান্ড চর্চা করার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করা। লিখিততে বর্তমানে সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন দেখা যায়। এর জন্য বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, মুদ্রা, নোবেল লরিয়েটদের লেখা বই, আন্তর্জাতিক পুরস্কারসমূহ, করোনাভাইরাস, খেলাধুলা, বাজেট, সাম্প্রতিক ইস্যু এবং ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন টার্মস পড়লেই যথেষ্ট। এভাবে গুছিয়ে পড়তে পারলে খুব দ্রুত সফলতা আসবে।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?
আতিক জাফর: মূলত ব্যাংকের ভাইবার প্রিপারেশন তেমন কষ্টকর নয়। ২৫ নম্বরের বরাদ্দ থাকার কারণে এ নম্বর খুব বেশি পার্থক্য করতে দেখা যায় না। নিজের অনার্সের বিষয়, ব্যাংকিংয়ে বিভিন্ন টার্মসের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে গেলেই ভাইবায় ভালো করা যায়। আর কনফিডেন্স ধরে রাখাটা ভাইবায় মুখ্য বিষয়।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আতিক জাফর: আমি সব সময় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ধরে কাজ করার চেষ্টা করি। তাতে সফল না হওয়া পর্যন্ত এগিয়ে যেতে থাকি। আগের চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় বন্ধুমহলে সৌখিন বেকার উপাধি পেয়েছিলাম। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি দিয়ে আপাতত বেকারের তালিকা থেকে নাম কাটালাম। ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে নিজের নাম লেখানোর ইচ্ছে আছে। সেটা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে অর্থনীতির বিভিন্ন নীতি নির্ধারক পর্যায়ে থাকার ইচ্ছে থাকবে। সবার দোয়া নিয়ে সব সময় সৎ থেকে দেশ ও জনগণের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন