ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

তরুণদের জন্য ব্যাংকিং পেশা কেন আকর্ষণীয়?

ইসমাম হোসাইন | প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২২

মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ধামরাই উপজেলার বালিয়া শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি তার ব্যাংকে চাকরি, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক ইসমাম হোসাইন

জাগো নিউজ: শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: আমার দুরন্ত শৈশব কেটেছে নিজ গ্রামে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা বগুড়ায়। শৈশবে মাছ ধরা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, ফুটবল, ক্রিকেট খেলে এবং দৌড়ঝাঁপ করেই সময় কেটেছে। তবে পড়াশোনার ব্যাপারে মায়ের ছিল কড়া শাসন। সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। প্রথম শ্রেণি থেকেই রোল ১, ২, ৩ এর মধ্যে থেকেছে। পড়াশোনার হাতেখড়ি গৃহশিক্ষক রফিকুল ইসলামের হাতে। পরে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করি। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কৃষি অর্থনীতি’ নিয়ে পিএইচডি গবেষণারত।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: না। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আমরা চার ভাই। সবার জন্যই আমাদের বাড়িতে একজন গৃহশিক্ষক থাকতেন। স্যারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও কড়া অনুশাসনে পড়াশোনা করেছি। আমার পড়াশোনার নেপথ্যের কারিগর আমার মা।

জাগো নিউজ: এত পেশা থাকতে ব্যাংকিং পেশা কেন বেছে নিলেন?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: সত্য বলতে, আমার চাকরিজীবী বা ব্যাংকার হওয়ার কোনো ইচ্ছাই কখনো ছিল না। প্রবল ইচ্ছা ছিল, চাকরি করব না। আমি অন্যকে চাকরি দেব। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় কিছু কাছের বন্ধুকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। কিছুদিন ব্যবসা করার পর অনভিজ্ঞতা ও পুঁজি সংকটের কারণে ব্যবসা থেকে আশানুরূপ রিটার্ন পাচ্ছিলাম না। এদিকে দেশের অন্য দশটা পরিবারের মতো আমার পরিবারও সরকারি চাকরি করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। পরিবারের চাপ এবং সামাজিক মর্যাদার কারণে চাকরির পড়াশোনা শুরু করি স্নাতকোত্তর পাসের পর। প্রথমে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ করি। পরে ২০১২ সলে গণমানুষের ব্যাংক বলে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে যোগদান করি। বর্তমানে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বালিয়া শাখার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

জাগো নিউজ: কে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে? কার কথা মনে পড়ে?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: অবশ্যই আমার মা-বাবা। আমার জীবনে যতটুকু সফলতা, তার মূল কারিগর আমার মা। তিনিই আমাকে সর্বদা সার্বিক সহযোগিতা ও সাহস জুগিয়েছেন। পাশাপাশি আমার প্রতি আমার সুহৃদদের যে প্রত্যাশা, সেটাও আমার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়াও আমার অগ্রজ তিন ভাই আব্দুল মান্নান, আব্দুল হান্নান, আব্দুল খালেক, আব্দুল মান্নান স্যার, রফিক স্যার, আ. আজিজ স্যার, বাসেত স্যার, রেজাউল স্যার, আতোয়ার স্যার, আব্দুল হালিম বেগ স্যার ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার মেন্টর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান মিয়াজী স্যারসহ সবার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। তাদের সবার অবদান অনস্বীকার্য।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্পটি শুনতে চাই—
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: শুরুতেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমার ইচ্ছা ছিল না, আমি চাকরি করব। তা হোক সরকারি বা বেসরকারি। কিন্তু ব্যবসায়ে অল্প সময়ে সফলতা না পাওয়া এবং পারিবারিক চাপে একটু দেরীতে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ২০১১ সালে বিকেবির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি। ২০১২ সালে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বিকেবিতে যোগদান করি।

জাগো নিউজ: ভাইবার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: ভাইবার জন্য নিজ জেলা, অনার্সের পঠিত বিষয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেই ভালো করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সফল হতে হলে লেগে থাকতে হবে। জীবনে দু’একটি খুচরা সমস্যা আসবেই। তা বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। ভাইবার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং হতাশ না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

জাগো নিউজ: ব্যাংকার হিসেবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কি?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: অনেকের ধারণা, যারা বাণিজ্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে; তারাই ব্যাংকার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলে। আমাদের দেশে বিসিএসের মতো যে কোনো বিষয়ের স্নাতকরা ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। তবে এ কথা ঠিক যে, অন্যান্য বিষয়ের স্নাতকদের তুলনায় বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকরা সহজেই ব্যাংকিংয়ের বিষয়াদি বুঝে উঠতে পারেন। আমি কলা অনুষদের শিক্ষার্থী হওয়ায় শুরুতে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হলেও অভিজ্ঞ সহকর্মীদের সহযোগিতায় ছোটখাটো প্রতিবন্ধকতা দ্রুতই কেটে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এ জন্য আমার প্রথম কর্মস্থলের সহকর্মী তৎকালীন ম্যানেজার ইনামুল স্যার, উত্তম দাদা, ওলী ভাই, দেলোয়ার ভাই এবং বারেক ভাইয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। পরের কর্মস্থল ফেনীর সাবেক মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মুস্তাফিজুর রহমান স্যার, শরীয়তপুরের মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) কাজী কামরুজ্জামান স্যার ও প্রধান কার্যালয়ের ভিজিল্যান্স স্কোয়াড বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) শাহ মুহাম্মাদ মাঈনুল হাসান স্যার ব্যাংকিং বুঝতে নিরন্তর সহযোগিতা করে চলেছেন। বর্তমানে ঢাকার মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম স্যারের সহযোগিতার জন্য স্যারের প্রতি জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।

জাগো নিউজ: আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই—
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: ছাত্রজীবনের সুপ্ত বাসনা বা যে চিন্তা ছিল, তা আমি গণমানুষের বাংলাদেশে কৃষি অর্থায়নে সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে দায়িত্ব পালনকালীন প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রান্তিক পর্যায়ে বিস্তৃত ১০৩৮টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে একটি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার শাখার আওতায় ৫টি ইউনিয়নব্যাপী প্রায় ৬০০০ ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, সে ক্ষেত্রে বৃহৎ ভূমিকা পালন করছে কৃষকদের অর্থলগ্নীকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। বিশেষত শস্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ খাতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করছি। যা দেশের
কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা পালন করতে পেরে ভালো লাগছে। দেশ মাটি ও মানুষের জন্য নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ: নতুন প্রজন্মের যারা ব্যাংকার হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: আমি মনে করি, যারা সৎ উপায়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য অবশ্যই ব্যাংকিং ক্যারিয়ার আকর্ষণীয়। কারণ ব্যাংকে বেতনের পাশাপাশি স্বল্প সুদে কোটি টাকার উপরে গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ঋণ, মোটরগাড়ি ঋণ, মোটরসাইকেল ঋণ, কম্পিউটার ঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ ও লাঞ্চ সাবসিডিসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধার কারণে একজন ব্যাংকার স্বল্প সময়ে সৎ উপায়ে বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পারেন। যে কারণে বর্তমানে তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ব্যাংকের চাকরি।

জাগো নিউজ: নিজেকে একজন ব্যাংকার হিসেবে কতটুকু সফল মনে হয়?
মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান: আমি সফল না ব্যর্থ, তা আমার সম্মানিত গ্রাহকগণ, সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বলতে পারবেন। তবে আমাকে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা সর্বদা নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করেছি।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন