তরুণদের ইংরেজি শেখাতে কাজ করছেন সৈয়দ ওয়াসি
সৈয়দ ওয়াসি সেন্টার ফর ইনোভেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিংয়ের (সিআইএলএল) প্রধান নির্বাহী ও প্রধান প্রশিক্ষক। তারুণ্যের এই শিক্ষক জাগো নিউজকে জানালেন তার নানা সফলতার কথা। তরুণদের জন্য দিলেন নানা পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন—
সৈয়দ ওয়াসি: আমি একজন ইংরেজির শিক্ষক। তবে আমার কাজ হলো পেশাদারিত্বের সাথে ইংরেজি শিক্ষাকে ব্যবহারিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তাই নিজেকে ‘প্রফেশনাল ট্রেইনার অব ইংলিশ’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনোভেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিংয়ের (সিআইএলএল) সিইও ও চিফ ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার মালিবাগে অবস্থিত।
আপনার শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতার ওপর যদি সংক্ষেপে বলেন—
সৈয়দ ওয়াসি: আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। বিষয় ছিল ‘ইংরেজি: লিঙ্গুইস্টিক্স ও টিসল (টিইএসওএল)। মাস্টার্স ডিগ্রিতে আমি সর্বোচ্চ ডিস্টিংকশন ‘সুমা কাম লডে’ অর্জন করি। পাশাপাশি আমি পিটিইতে (পিয়ারসন টেস্ট অব ইংলিশ) সর্বোচ্চ স্কোরধারী (৯০/৯০: স্পিকিং ৯০, রাইটিং ৯০, রিডিং ৯০, লিসেনিং ৯০)। আইএলটিএস পরীক্ষায় ১৩ বছর আগে ৮ প্রাপ্ত। ক্যারিয়ার শুরু হয় একটি ইংলিশ ইনস্টিটিউটে পড়ানোর মাধ্যমে। পরে বিডিজবসে কিছুদিন বিজনেস কমিউনিকেশনের ওপর ট্রেইনিং করাই। এর আগে চাকরি করতাম স্কলাস্টিকা স্কুলের ট্রেইনিং উইং-স্পীডে। সেখানে স্কলাস্টিকা স্কুলের টিচার ট্রেইনিং, তাদের বিভিন্ন কর্পোরেট ট্রেইনিং (ইংলিশ ও বিজনেস কমিউনিকেশন) এবং অন্যান্য ইংরেজি সংশ্লিষ্ট ট্রেইনিংগুলো করাতাম। এরপর আমার প্রতিষ্ঠান সিআইএলএলের (সিল) দায়িত্ব নিই। বিগত ৭ বছর এ দায়িত্ব পালন করছি।
২০১৬ সালে যখন পিটি পরীক্ষা বাংলাদেশে চালু হয়; তখন থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পিটিই টেস্ট সেন্টারের প্রথম পিটিই ট্রেইনার ছিলাম। পিয়ারসনের (পিটিই’র মূল প্রতিষ্ঠান) অফিশিয়াল পিটিই ওয়েবসাইটে এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আমার ওপর লেখা একটি ফিচার পাবেন। তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সৈয়দ ওয়াসি নাম সার্চ করলে আর্টিকেলটি পড়তে পারবেন। এর বাইরে এ পর্যন্ত বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রাইভেট ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইংলিশ ও বিজনেস কমিউনিকেশন ট্রেইনিং করিয়েছি। এর মধ্যে ব্রিটিশ হাই কমিশন, এনসিসি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, জিআইজেড বাংলাদেশ, রেড ক্রস, আইডিএলসি, বেবিলন গ্রুপ, স্কয়ার ফার্মা, স্কয়ার টেক্সটাইলস, ডেকো ফুড, এপিক গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি প্রফেশনাল ট্রান্সলেশনের কাজও করি (ইংরেজি থেকে বাংলা/বাংলা থেকে ইংরেজি)। বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম, স্কলাস্টিকা স্কুল ও এসেন্ট গ্রুপের জন্য আমার করা ট্রান্সলেশনের কাজ উল্লেখযোগ্য। দুটি জাতীয় পত্রিকায় আমার কিছু লেখা ছাপা হয়েছে।
উদ্যোক্তা হলেন যেভাবে—
সৈয়দ ওয়াসি: আমি যখন ইংলিশ ট্রেইনার হিসেবে চাকরি করি; তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল নিজের একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবো। এতে নিজের মেধা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। আর এমনিতেও ইংরেজি ভাষা নিয়ে কাজ করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া—এসব আমার শুধু পেশা নয়, নেশা। ২০১৩ সালে নিজের প্রতিষ্ঠান দেওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়। তবে এটি সম্ভব হতো না, যদি না আমার বড় আপা (ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড়) আমাকে উৎসাহ দিতেন। তার আর্থিক সহায়তায় আমি সিল’র একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হই।
ইংরেজি শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার অবদান কী?
সৈয়দ ওয়াসি: আমি বিশ্বাস করি, সিল মানে আমার প্রতিষ্ঠান। অত্যন্ত দক্ষ ও সর্বোপরি একটি সৎ ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমার অবদান এখনো যদিও বিশাল কোনো পরিসরে পৌঁছায়নি। তারপরও যতটুকু পারছি বাংলাদেশের ইংরেজি শিক্ষার্থীদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দিচ্ছি। এ ভাষার ব্যবহারের ওপর দক্ষতা আনতে সাহায্য করে যাচ্ছি। এ প্রতিষ্ঠানে ফুল মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম চালু আছে। যার মাধ্যমে ইংরেজিতে দুর্বল যে কোনো শিক্ষার্থী একদম বেসিক থেকে ধাপে ধাপে তার ইংরেজির দক্ষতা বাড়াতে সফল হবে। এ ক্ষেত্রে একেক জনের একেক সময় লাগে। তাই আমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কাউকে তথাকথিত এক্সপার্ট করার আশ্বাস না দিয়ে যার যত দিন প্রয়োজন, সে হিসেবে কোর্স করিয়ে তাদের ইংরেজিতে সফল করে তুলি।
আমাদের এ প্রোগ্রামের অধীনে শত শত শিক্ষার্থী ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে এখন দেশের বাইরে আছেন। কোর্সগুলোর মধ্যে বেসিক ইংলিশ (লেভেল ১) ও স্পোকেন, গ্রামার অ্যান্ড রাইটিং (লেভেল ২) ও স্পোকেন, অ্যাডভান্সড স্পিকিং (লেভেল ৩), পিটি, আইইএলটিএস, ডুয়োলিঙ্গো ইংলিশ, টোফেল, ইংলিশ টিচার ট্রেইনিং উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ইংরেজি শিক্ষার উপর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যেমন যে কাউকেই তার বর্তমান ভাষার দক্ষতা যাচাই না করে যে কোনো কোর্স করানো যায় না। ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রীম গ্যারান্টি নয়, সময় নিয়ে সঠিক জায়গা থেকে ধৈর্যের সাথে শেখাটা হচ্ছে সফলতার মূলমন্ত্র—বিষয়গুলোর ওপর সচেতনতা তৈরিতে এক প্রকার সংগ্রাম করছি। এর বাইরে ভার্চুয়াল ইংরেজি শিক্ষার ওপর অনেক বছর ধরে কাজ করছি। তা সফলভাবে পরিচালনা করছি। আমার মাস্টার্সের থিসিসের বিষয়ও ছিল ভার্চুয়াল ইংলিশ টিচিং। যা এখন থেকে ১০ বছর আগে আমি সম্পন্ন করি। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানে অফলাইন ও অনলাইন ক্লাস যুগপৎভাবে চলে।
তরুণ ইংরেজি শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ—
সৈয়দ ওয়াসি: তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যতের কাণ্ডারি। কিন্তু তাদের অনেকেই অযথা সময় নষ্ট করছে টিকটক, আড্ডা, ফেসবুকিং করে। আবার কিছু তরুণ ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে চেষ্টা করছে। কিন্ত তা পর্যাপ্ত নয় অথবা ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করছে। তাদের প্রতি পরামর্শ হলো—এ যুগে যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা থাকা আবশ্যক। কিন্তু আপনি যে দক্ষতাই অর্জন করেন না কেন, ইংরেজিতে দুর্বল হলে সব ক্ষেত্রেই ভুগতে হবে। ইংরেজির ব্যাপারে তাই সচেতন হতে হবে। কোনো মিথ্যা প্রলোভন নয়, নিজের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে, ধাপে ধাপে সময় নিয়ে পরিশ্রম করলেই কেবল সফল হবেন।
এসইউ/জেআইএম