ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

নার্সিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে যা করবেন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০২২

তাসমিনা বেগমের জন্ম সিলেটের গোলাপগঞ্জের উপর ঘাগুয়ায়। বাবা মো. জয়নাল আবেদীন ও মা হাজেরা বেগম। তিনি জহিরিয়া এম ইউ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, মেট্রোসিটি উইমেন্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও সিলেট নার্সিং কলেজ থেকে নার্সিং পাস করেছেন। বর্তমানে সীমান্তিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে নার্সিং, মিডওয়াইফারি, ম্যাটস ও প্যারামেডিক কোর্সের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার বিভিন্ন বিষয় ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: আপনার জীবনের গল্প শুনতে চাই—
তাসমিনা বেগম: কুশিয়ারার তীরঘেঁষা ছোট্ট একটি গ্রাম ঘাগুয়া, যা গোলাপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। সেই গ্রামে জন্ম। শৈশব ও কৈশোরের শুরুটা সেখানেই কাটিয়েছি। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন পরিবারের সাথে চলে আসি পাহাড়ি এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল মানুষ ও দেশের জন্য কিছু করার। ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও ২০১৪ সালে জিপিএ ৪.৪০ পেয়ে এইচএসসি পাস করি। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজের জন্য কিছু করার কথা চিন্তা করে সমাজিক, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। সমাজ পরিবর্তনে অবদান ও হতদরিদ্রের ক্ষমতায়নের জন্য ২০২০ সালে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করি। ২০২১ সালে পড়াশোনা শেষ করে সীমান্তিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে জয়েন করি। যাতে মানবসেবার কারিগর দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ গড়ে তুলতে পারি। যারা অসহায় মানুষের পাশে সেবার ব্রত নিয়ে দাঁড়াবে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনবে।

jagonews24

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
তাসমিনা বেগম: পড়ালেখার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে আমি কখনো কোন বাধা পাইনি। বরং পরিবারই আমার মূল প্রেরণা। কিন্তু কিছু আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী আছেন, যারা নার্সিং পেশাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেন না। আমি আমার অবস্থান থেকে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি।

জাগো নিউজ: পেশা হিসেবে নার্সিং কেমন?
তাসমিনা বেগম: প্রথমত নার্সিং একটি মহৎ ও সেবামূলক পেশা। আমি বলতে চাই, নার্সিং পেশার তুলনা শুধু এ পেশাই। নার্সিং পেশার মাধ্যমে যেমন আপনি করতে পারবেন মানুষের সেবা; তেমনি আপনি আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারবেন। করোনা মহামারির সময়সহ অনেক খারাপ সময় যখন পরিবারের কেউ পাশে থাকেন না, তখন কিন্তু একজন নার্স তার দায়িত্ববোধ থেকে মানবতা থেকে ভরসার জায়গা হয়ে রোগীর কাছে থাকেন।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে নার্সিং পড়াশোনার ধাপগুলো কী কী?
তাসমিনা বেগম: বাংলাদেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ২টি ধাপে নার্সিং কোর্সটি সম্পন্ন করা যায়। এইচএসসি যে কোনো বিভাগ থেকে পাস করে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে বিএসসি ইন নার্সিং সম্পন্ন করে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব। এ ছাড়াও বাংলাদেশে ২০১২ সাল থেকে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চলমান।

jagonews24

জাগো নিউজ: শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন লাগে?
তাসমিনা বেগম: বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে মোট ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ পয়েন্ট পেতে হয়। আলাদাভাবে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ৩.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ২.৫ এর নিচে হলে আবেদন করা যাবে না। নার্সিংয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে সরকারি কলেজগুলোয় ভর্তি করানো হয়। বেসরকারি কলেজগুলোয় ভর্তি হতে হলে ন্যূনতম ৪০ মার্ক পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে হয়। তবে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে ভর্তি হতে হলে যে কোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে আবেদন করা যায়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে মোট ন্যূনতম জিপিএ ৬.০০ পেতে হয় এবং ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হতে হয়।

জাগো নিউজ: কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়?
তাসমিনা বেগম: বিএনএমসির আওতাভুক্ত সরকারিভাবে ৪৬টি এবং বেসরকারি ৩৩৬টি কলেজে ডিপ্লোমা নার্সিং এবং সরকারিভাবে ১৩টি ও বেসরকারিভাবে ১৫০টি কলেজে বিএসসি ইন নার্সিংয়ের আসন আছে। সুবিধার্থে বলে রাখি, বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে আসন সংখ্যাসহ প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম জানা যাবে।

jagonews24

জাগো নিউজ: দেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন?
তাসমিনা বেগম: দেশে নার্সিং থেকে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু এগুলোর জন্য ধাপে ধাপে এগোতে হয়। যারা বিএসসি নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করেন, তারা সরাসরি মাস্টার্স ইন নার্সিং এবং মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ কোর্স করতে পারেন। পরে দেশেই পিএইচডি করতে পারেন। যারা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স সম্পন্ন করেন, তারা পোস্ট বেসিক বিএসসি করার পর ধাপে ধাপে পিএইচডি পর্যন্ত করতে পারেন।

জাগো নিউজ: নার্সদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে?
তাসমিনা বেগম: দেশের মতো বিদেশেও নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে। উন্নত বিশ্বের যে কোনো দেশ কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডনসহ অন্য যে কোনো দেশ থেকে নার্সিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা যায়। আইইএলটিএসে ভালো স্কোর থাকলে কানাডা, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে ফুল ফ্রি স্কলারশিপও পাওয়া যায়। কাজ করা যায় সেখানকার প্রফেসরদের টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে।

jagonews24

জাগো নিউজ: স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ, আপনারা কতটুকু মূল্যায়ন পাচ্ছেন?
তাসমিনা বেগম: নার্স ছাড়া স্বাস্থ্যখাত চিন্তাও করা যায় না। বলা হয়ে থাকে যে, একটা হাসপাতালের ব্রেইন হলো ডাক্তার আর নার্স হলো হার্ট। তাই হার্ট ছাড়া যেমন মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব না; তেমনি দক্ষ নার্স ছাড়া স্বাস্থ্যখাত চিন্তা করা অসম্ভব। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নার্সবান্ধব। তিনি এ পর্যন্ত ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। নার্সিং পেশার পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নত করেছেন। তা ছাড়াও নার্সরা এখন সরকারি নার্সিং কলেজে ও ইনস্টিটিউটে ১ম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে লেকচারার হিসেবে সরাসরি নিয়োগ পাচ্ছেন। কিন্তু সামজিকভাবে নার্সদের মূল্যায়ন এখনো অনেক কম। যা বিভিন্ন নিউজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা জানতে পারি। তবে আশাবাদী যে নার্সিং প্রফেশনের মান সমাজিকভাবে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

জাগো নিউজ: যারা নার্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ—
তাসমিনা বেগম: যারা নার্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের স্বাগত জানাই নার্সিং পেশায়। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যারা নার্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান; তাদের এখন থেকেই প্রচুর পড়াশোনা শুরু করতে হবে। ভবিষ্যতেও করার মন-মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা নার্সিংয়ের সব পড়াশোনা ইংরেজিতে। বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি মাধ্যমে এসে অনেকেই হিমশিম খান। আমি চাই, তরুণরা এ পেশায় আসুক, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ভূমিকা রাখুক।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন