আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে
বিশ্বে সম্মানজনক পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম আইন পেশা। অনেকেই এ সম্মানজনক পেশায় আসতে চান এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম আইন বিষয়ে কোর্স চালু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২১ সালে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। আইন বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত জেনে নিন।
ভর্তির যোগ্যতা
যে কোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে। আইন সব শিক্ষার্থীর পছন্দের বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে চাইলে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আসতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার প্রথম দিকে থাকা শিক্ষার্থীরাই আইন পড়ার সুযোগ পান। এ ছাড়া চার বছর মেয়াদি এলএলবি না করেও আইন পেশায় আসতে পারেন। এ জন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ থেকে অনার্স বা ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনো ল’ কলেজে ২ বছর অথবা ৩ বছর মেয়াদি এলএলবি (পাস) ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
কোথায় ভর্তি হবেন
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয় পড়ানো হয়। এরমধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। পাশাপাশি পটুয়াখালীসহ কয়েকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও আইন পড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন এবং ভূমি আইন দুটো আলাদা বিষয়ের ওপর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের সুযোগ আছে। প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও আইন পড়ানো হয়। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে আইন কলেজে ২ বছর ও ৩ বছর মেয়াদি এলএলবি (পাস) ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে।
যেসব বিষয়ে পড়বেন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি বিষয়ের যে কোনো একটিতে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি (৪ বছর মেয়াদি) দেওয়া যায়। বিষয় তিনটি হলো- আইন, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ। আইন বিষয়ের ওপরে বর্ণিত সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হলেও আইন ও ভূমি ব্যবস্থপনা বিষয়ে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আইন বিষয়ে পড়ানো হয়।
আইন বিভাগে সাধারণত জুরিসপ্রুডেন্স বা আইন বিজ্ঞান, ব্যক্তিগত আইন, পারিবারিক আইন, সংবিধান, চুক্তি, বাণিজ্যিক আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, সাইবার ল’, রেজিস্ট্রেশন আইন, পরিবেশ আইন, আয়কর আইন, শ্রম আইন, অপরাধ আইন, দেওয়ানি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন, ক্রিমিনোলজি, রিয়েল এস্টেট আইন, সমুদ্র আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি ইত্যাদি বিষয়াবলি সম্পর্কিত আইন পড়ানো হয়। সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে, তার প্রায় সবকিছুই এ বিভাগের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভূমি ব্যবস্থা ও আইন বিভাগে ভূমি সম্পর্কিত আইনের পাশাপাশি আইনের সাধারণ বিষয়াবলীও পড়ানো হয়ে থাকে। আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজে বর্তমান প্রচলিত আইনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ইসলামী আইনের বেশ কিছু কোর্স পড়তে হয়। সে ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বিভিন্ন সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে।
খরচ কেমন
আইনে পড়ার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন খরচ নেই। সবমিলিয়ে ৫০-৮০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ল’ কলেজ থেকে এলএলবি (পাস) কোর্স পড়তে খরচ হবে ২০-২৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশের প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের জন্য এলএলবি অনার্স কোর্স চালু আছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ তুলনামূলক বেশি। এখানে পড়তে হলে প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৩-৭ লাখ টাকা।
চাকরির সুযোগ
আইনে চাকরির ব্যাপক চাহিদা আছে। একজন শিক্ষার্থী যখন আইন পড়েন; তখন তার স্বপ্ন থাকে বিচার বিভাগের একটি অংশ হয়ে কাজ করার। আইনের শিক্ষার্থীরাই জজ অথবা অ্যাডভোকেট হতে পারেন। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে। এর পাশাপাশি বিসিএস ও অন্য যে কোনো নন-ক্যাডারের চাকরি, ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে অন্য বিষয়ে স্নাতকদের মতোই আইনের স্নাতকদের সমান সুযোগ আছে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আইনের গ্রাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা আছে। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন কলেজে আইন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষকতার সুযোগ আছে। এ ছাড়াও শুধু আইনে স্নাতকরা বার কাউন্সিলের অধীনে অ্যাডভোকেটশিপ পরীক্ষার মাধ্যমে নিম্ন আদালত ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ আছে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
দেশ-বিদেশে আইনে উচ্চশিক্ষার বিশেষ সুযোগ আছে। দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ওপর এম.ফিল ও পি.এইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করা যায়। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইনের শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে পারেন। তা ছাড়া বার-অ্যাট-ল’ সম্পন্ন করে ব্যারিস্টার হওয়ার সুযোগ আছে। সবমিলিয়ে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার গঠনের জন্য আইন বিষয়ে পড়া যেতেই পারে।
এসইউ/এমএস