নার্সিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে
দেশে দেশে নার্সিং পেশার গুরুত্ব অনেক। পড়াশোনা অবস্থায় যে কাউকে সহযোগিতা করা যায়। সরাসরি মানবসেবার সাথে জড়িত। রোগীর এত কাছে কেউ থাকেন না। একজন নার্স ২৪ ঘণ্টা রোগীর সাথে থাকার সুযোগ পান। রোগীর ভালো লাগা, মন্দ লাগা জানেন। নিজের হাতে সেবা করতে পারেন। তাই নিজের ও সমাজের স্বার্থে কীভাবে নার্সিং পেশায় আসা যায়? আজ জেনে নিন সে সম্পর্কে।
ভর্তি হওয়ার উপায়: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়। সাধারণত বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি) সারাদেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এরপর মেধাক্রম ও পছন্দ অনুযায়ী সরকারি নার্সিং কলেজগুলোয় আসন বিন্যাস করে থাকে।
সরকারি নার্সিং কলেজগুলোয় মেধাতালিকা এবং অপেক্ষমান তালিকা দিয়ে নির্ধারিত আসন পূরণ হলে ভর্তি পরীক্ষায় পাসকৃত বাকি শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দমত বেসরকরি নার্সিং কলেজগুলোয় ভর্তি হতে পারে। প্রায় সব সরকারি বা বেসরকারি নার্সিং কলেজ নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অধিভুক্ত এবং বিএনএমসি আয়োজিত ভর্তি পরীক্ষার অন্তর্গত। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ফ্যাকাল্টি অব নার্সিং এবং ফ্যাকাল্টি অব হেলথ সায়েন্সের মাধ্যমে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে।
আবার বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর অধীন আর্ম ফোর্সেস নার্সিং সার্ভিসের (এএফএনএস) সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট (এন্ট্রি পোস্ট ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা) হিসেবে ফিমেল গ্রাজুয়েট নার্সদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নার্সিং কলেজগুলোর লেকচারার (৯ম গ্রেড) পদে সরাসরি নিয়োগের নীতিমালা প্রস্তাবিত পর্যায়ে রয়েছে।
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কী: এটিকে প্রচলিত ভাষায় ডিপ্লোমা নার্সিং বলে। বিএনএমসির অধীনে ৩ বছর মেয়াদী একটি ডিপ্লোমা কোর্স। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগের ডিপ্লোমা শিক্ষায় সাধারণ ভর্তি যোগ্যতা এসএসসি হলেও নার্সিংয়ের ডিপ্লোমা শিক্ষার ভর্তি যোগ্যতা যে কোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস। সাধারণত বিএনএমসি সারাদেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে এবং মেধাক্রম অনুযায়ী সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোয় আসন বিন্যাস করে থাকে।
সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোয় মেধাতালিকা এবং অপেক্ষমান তালিকা দিয়ে নির্ধারিত আসন পূরণ হলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা বাকি শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দমত বেসরকরি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোয় ভর্তি হতে পারে। ইনস্টিটিউটগুলো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় না। বিএনএমসি নিজেই এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের ভূমিকায় থাকে। একাডেমিক কোর্স সম্পন্ন হলে বিএনএমসির লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা ‘নার্স ও মিডওয়াইফ প্র্যাকটিশনার্স’ নামে রেজিস্ট্রেশন পান। এ ক্ষেত্রেও সরকারি চাকরিতে এন্ট্রি পোস্ট ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স’ (১০ম গ্রেড)। বিপিএসসি নন-ক্যাডার পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এ নিয়োগ দিয়ে থাকে। এখানে পদোন্নতি আছে।
ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কী: এটি বিএনএমসির শুধু মিডওয়াইফারি বিষয়ের একটি ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স। এ ক্ষেত্রেও ভর্তি যোগ্যতা যে কোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস। সাধারণত বিএনএমসি সারাদেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। মেধাক্রম অনুযায়ী সরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটগুলোয় আসন বিন্যাস করে থাকে। সরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটগুলোয় মেধাতালিকা এবং অপেক্ষমান তালিকার মাধ্যমে নির্ধারিত আসন পূরণ হলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা বাকিরা নিজেদের পছন্দমত বেসরকরি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটগুলোয় ভর্তি হতে পারেন।
বর্তমানে নার্সিং ইনস্টিটিউট ছাড়াও বিভিন্ন কলেজে কোর্সটি পরিচালনা করা হয়। যদিও কোর্সটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় না। বিএনএমসিই শিক্ষা বোর্ডের ভূমিকায় থাকে। একাডেমিক কোর্স সম্পন্ন হলে বিএনএমসির লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা ‘মিডওয়াইফ প্র্যাকটিশনার্স’ নামে রেজিস্ট্রেশন পান। সরকারি চাকরিতে এন্ট্রি পোস্ট ‘মিডওয়াইফ’ (১০ম গ্রেড)। বিপিএসসি নন-ক্যাডার পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এ নিয়োগ দিয়ে থাকে। এখানেও পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে।
একই সেশনে আপনি চাইলেও সাধারণ ভর্তি পরীক্ষার মতো ৩টি কোর্সেই আবেদন করতে পারবেন না। কারণ একই দিনে (ভিন্ন প্রশ্নপত্রে) ৩টি কোর্সেরই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
নার্সিংয়ের কর্মক্ষেত্র: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নার্সদের এন্ট্রি পোস্ট ‘লেফটেন্যান্ট’ (১ম শ্রেণি) হিসেবে যোগদান করেন। পরে লেফটেন্যান্ট>ক্যাপ্টেন>মেজর>লেফটেন্যান্ট কর্নেলে পদন্নোতি পান। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ দিয়ে থাকে এএফএনএস। এ চাকরির জন্য শুধু নার্সিংয়ে গ্রাজুয়েশন (৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন নার্সিং) করা এবং নারীদের সুযোগ দেওয়া হয়।
সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নার্স কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে ডিজিএনএম। এখানে বিএসসি অ্যান্ড ডিপ্লোমা ইন নার্সিং করা (নারী-পুরুষ) উভয়েরই সুযোগ থাকে।
নিয়োগ পরীক্ষা: নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। এ ক্ষেত্রে এন্ট্রি পোস্ট ২য় শ্রেণি হলেও পরে ক্রমান্বয়ে ১ম শ্রেণিতে পদোন্নতি হওয়ার সুযোগ আছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর সরকারি খরচে হায়ার এডুকেশন, লিয়েনে ফরেন কান্ট্রিতে জবের সুযোগ, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ট্রেইনিংয়ের সুযোগ পেয়ে থাকেন এসব নার্সিং কর্মকর্তারা। যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে পদায়ন পাওয়ার সুযোগ থাকে। সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল ইত্যাদি কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে ২য় শ্রেণিতে আলাদাভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
স্বায়ত্তশাসিত কিছু প্রতিষ্ঠান: বিএসএমএমইউ (হসপিটাল সাইড), বিইপিজেডএ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে ২য় শ্রেণির নার্সিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিএসএমএমইউ (নার্সিং বিভাগ-শিক্ষা) এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নার্সিং অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স ফ্যাকাল্টি) ১ম শ্রেণির লেকচারার হিসেবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এমএসসি, পিএইচডি ডিগ্রিধারী নার্সদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে: বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, এনজিও বা দাতাসংস্থা ইত্যাদিতে কাজ করার সুযোগ আছে। বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলেও চাকরির সুযোগ আছে। সব ইপিজেড ও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কর্মকর্তা পদ আছে। বেসরকারি নার্সিং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। দেশের বাইরে নার্সরা বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
এসইউ/জেআইএম