ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতিতে বেসিক জানা জরুরি
মেহেদী হাসান মুন্না পিরোজপুর সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত রুস্তম আলী বেপারী কৃষক ছিলেন। মা মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। মুন্না ২০১০ সালে জুজখোলা সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১২ সালে আমানউল্লাহ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে এইচএসসি পাস করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (জেনারেল) পদে কর্মরত। সম্প্রতি তার ব্যাংকে চাকরি, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
মেহেদী হাসান মুন্না: আমি এমন একটি এলাকা থেকে উঠে এসেছি, যেখানে শিক্ষার জন্য একটু সংগ্রাম করতে হয়। তখন গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ খুব সহজ ছিল না। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর খাবার ও শিক্ষা একই সঙ্গে পেতে সংগ্রাম করতে হতো। ছোট থেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি ২-১টি ক্লাস ছাড়া সব সময় ক্লাসের প্রথম হতাম। এজন্য স্যাররা আমাকে পছন্দ করতেন। সব প্রয়োজনে শিক্ষকদের পাশে পেতাম। স্কুলে থাকতেই বির্তক করতাম। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম। তারপর এসএসসিতে স্কুল থেকে প্রথমবারের মতো গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম। প্রথম আলোয় আমাকে নিয়ে ‘আঁধার ফুরে আলোর পানে যাত্রা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি অনেকের নজর কেড়েছে। তখন আমার পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকেই এগিয়ে আসেন।
জাগো নিউজ: কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?
মেহেদী হাসান মুন্না: তেমন বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তবে দারিদ্র্য একটি প্রতিবন্ধকতা বলতে পারি। কারণ আমার বাবা কৃষক ছিলেন। তিনি আমাকে খুব বেশি আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারতেন না। তবে আমার মানসিক ও ইচ্ছাশক্তির অভাব ছিল না। সবার সহযোগিতা ও বাবা-মায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এগিয়ে গেছি। স্কুলজীবন থেকে স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ার। এইচএসসিতে ৪.৬০ পেয়েছিলাম। পরে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাইনি। শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হই।
জাগে নিউজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মেহেদী হাসান মুন্না: যখন মনে হলো, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে জায়ান্ট হতে চলছে; তখন ব্যাংক নিয়ে মনে ভাবনা আসে। অনার্স চলাকালীন ক্যারিয়ার ও জব নিয়ে যখন ভাবি, তখন থেকে ব্যাংকে চাকরির ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খেত। ডিপার্টমেন্টের ফলাফলে টপে আসতে পারিনি, তবে রেজাল্ট ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি।
জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?
মেহেদী হাসান মুন্না: প্রথম যখন ঢাকায় আসি, আমাকে সাপোর্ট করার মতো তেমন কেউ ছিলেন না। কিছুদিন মামার বাসায় ছিলাম। স্কুলজীবন থেকেই টিউশনি করতাম। ভার্সিটিতেও টিউশনি করিয়ে নিজের সব খরচ চালিয়েছি। পরিবারকেও সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। টিউশনি আমার চাকরির প্রস্তুতিতে সাহায্য করেছে। গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়াতাম। ব্যাংক জবে গণিতের দক্ষতা কাজে লেগেছে। সব সময় চেষ্টা করতাম ইনফরমেশনে আপডেট থাকতে। পত্রিকা বেশি পড়া হতো। তাছাড়া নিজের ব্যক্তিগত কিছু দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছি। ভাষাগত সমস্যা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা; এগুলো উন্নয়নে কাজ করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই চাকরির পরীক্ষার জন্য বিশেষ কিছু পড়তাম না। তবে নিজে রুটিন করে বেসিক ম্যাথ ও ইংরেজি নিয়ে কাজ করেছি। একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে প্রিলির জন্য বেশ কয়েকদিন সময় পেয়েছি। তখন সাম্প্রতিক বিষয়গুলো, সাধারণ গণিত ও পুরোনো প্রশ্নগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। প্রিলির একমাস পর রিটেন পরীক্ষা হয়েছিল। রিটেনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে ফোকাস রাইটিং কীভাবে হতে পারে, তা নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি। এই বিষয়গুলো নিজে নোট করে রাখতাম। এটি অনেক কাজে দিয়েছে। এভাবে প্রস্তুতি নেওয়ায় রিটেন অনেক ভালো হয়েছে। এরপর ভাইবার জন্য পড়াশোনা করেছি। ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে ‘আইন’র সম্পর্ক ও নিজের একাডেমিক বিষয়গুলো পড়ার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি কিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন, যেগুলো দিয়ে সাধারণ বুদ্ধিমত্তা যাচাই করা হয় তা দেখেছি। আমার জবটা খুব তাড়াতাড়ি হয়েছিল। মাস্টার্স শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি হয়েছিল। এর আগে আমি কখনো রিটেন বা ভাইবা দেইনি। দুই-একটা প্রিলি দিয়েছিলাম, তবে পাস করিনি। এটাই প্রথম প্রিলি, রিটেন ও ভাইবা পাস ছিল।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেয়েছেন, জানার পর আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
মেহেদী হাসান মুন্না: রেজাল্ট শোনার পর কান্না করেছিলাম। আমার চাকরির তিনমাস আগে বাবা মারা যান। তখন মানসিক চাপ ও হতাশায় ছিলাম। চাকরির সংবাদ জানানোর জন্য মাকে ফোন করে কেঁদে ফেলি। মা আমাকে সান্ত্বনা দেন। মূলত কান্নার বিষয়টি তখন বেশি ছিল।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
মেহেদী হাসান মুন্না: আমার মা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাছাড়া পরিবারের বাইরে শিক্ষকরা, এলাকার বিশেষ কিছু মানুষ এবং আমার বন্ধুরা সব সময় সহযোগিতা ও সাহস দিয়েছেন।
জাগো নিউজ: যারা ব্যাংকে চাকরি করতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মেহেদী হাসান মুন্না: ব্যাংক জবের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের তথ্যগুলোয় আপডেট থাকতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে। ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে শুরুতেই জবের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রিলি ও রিটেনের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেসিক ইংরেজি ও অঙ্কগুলো করতে হবে। অনার্স পড়াকালীন বেসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
জাগো নিউজ: ভাইভার প্রস্তুতি কেমন হবে?
মেহেদী হাসান মুন্না: নিজের সম্পর্কে জানতে হবে। অনার্সের শুরুতেই ভাষাগত এবং যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশ করতে হবে। নিজের পঠিত বিষয়ের সঙ্গে ব্যাংকিংয়ের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সব কিছু জানা জরুরি। সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। ব্যাংকিংয়ের মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। নিজেকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন এবং মার্জিত আচরণ করতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাইবা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে এবং জড়তা রাখা যাবে না।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মেহেদী হাসান মুন্না: যেহেতু আমি আইনে পড়েছি, আইন বিষয়ে নিজেকে আরও দক্ষ এবং জ্ঞান অর্জন করে ব্যাংকিং পেশায় কাজে লাগাতে চাই। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।
এসইউ/জেআইএম