ভবনের নিরাপত্তায় আবরার মাসুমের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
তরুণ উদ্যোক্তা মো. আবরার মাসুম শান্ত। বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করার পর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন রকম কাজ শুরু করলেন। এরমধ্যে একটি আইডিয়া বাজিমাত করলো। যুক্ত হলো স্টার্টআপকে জীবন হিসেবে বেছে নেওয়ার নেশা। সেই গল্প সাক্ষাৎকারে তুলে এনেছেন বেনজির আবরার—
জাগো নিউজ: আপনার সম্পর্কে বলুন—
আবরার মাসুম শান্ত: ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজ করতে ভালো লাগে। মানুষের সমস্যা সমাধান করতে ভালো লাগে। এখনো চেষ্টা করি বিভিন্নভাবে সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে। মানুষের সমস্যা সমধান করতে। টেকনোলজির মাধ্যমে খুব সহজেই হাজার হাজার মানুষের সমস্যা সমধান করা সম্ভব। আমার ইচ্ছা এবং স্বপ্ন বাংলাদেশের সমস্যাগুলো টেকনোলজির মাধ্যমে সমাধান করা।
জাগো নিউজ: কিভাবে মাথায় এলো রক্ষী গড়ার পরিকল্পনা?
আবরার মাসুম শান্ত: রক্ষীর আইডিয়া মাথায় আসে অনেক আগে ২০১৫ সালে। আমার চাচা বাড়িওয়ালা ছিলেন। আমি তাকে দেখেছি, একটা বিল্ডিং ম্যানেজ করা কতটা কঠিন। সারাদিন অফিস শেষে বাসায় এসে প্রায়ই বিলের হিসাব-নিকাশ, খরচের হিসাব-নিকাশ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো!
ম্যানেজার ঠিকঠাকভাবে হিসাব দিতে পারতেন না, মাঝে মাঝে হিসাবে সমস্যা করতেন। আবার পুরো বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি নিশ্চিত করা, কোয়ালিটি সার্ভিস নিশ্চিত করার জন্য অনেক কষ্ট করতে হতো। তখনই ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে; যেখানে বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। তাহলে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের চিন্তা যেমন কমে যাবে; তেমন বিল্ডিংয়ের বাসিন্দারা একটি বেটার লাইফস্টাইল লিড করতে পারবেন।
এরপর কিছুদিন আরও বিভিন্ন সমস্যার কথা ভাবি। পরে ২০১৮ সালের শেষের দিকে কয়েকজন বন্ধু মিলে এ আইডিয়ার উপরে প্ল্যান করা শুরু করি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে আমাদের সাথে যুক্ত হন আরও দু’জন অভিজ্ঞ আইটি এক্সপার্ট। তারা আমাদের তাদের জ্ঞান, ইনভেস্টমেন্ট, অফিস স্পেসসহ বিভিন্নভাবে হেল্প করছেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে অফিসিয়ালি আমাদের যাত্রা শুরু হয়!
জাগো নিউজ: রক্ষীর মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের সুরক্ষা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে?
আবরার মাসুম শান্ত: যেকোনো বিল্ডিংয়ের জন্য আমাদের রক্ষী হলো একটি পরিপূর্ণ বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। টোটাল বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, বিল ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট। আমাদের ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ম্যানেজার বা বাড়িওয়ালা খুব সহজেই টোটাল বিল্ডিংয়ের বিল, খরচ বা ফান্ডের হিসাব-নিকাশ রাখতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ভাড়াটিয়ারাও বিল দেওয়ার সাথে সাথে নোটিফিকেশন পাবেন।
দ্বিতীয়ত, সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট। আমরা গার্ডের রেজিস্ট্রার খাতার পরিবর্তে আমাদের মোবাইল অ্যাপ নিয়ে এসেছি। যার মাধ্যমে এখন ভিজিটরের যাওয়া-আসা, সার্ভিস ওয়ারকারের অ্যাটেনডেন্স, পারসেল ম্যানেজমেন্ট বা গাড়ির যাওয়া-আসা সব কিছু হবে ডিজিটালি। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক বাসিন্দা বাসা, অফিস যেকোনো জায়গা থেকে এসব তথ্যের নোটিফিকেশন পাবেন সঙ্গে সঙ্গে।
তৃতীয়ত, সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট। একটি বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন ধরনের সার্ভিসিং নিশ্চিত করতে হয় প্রতিনিয়ত। যেমন নিরাপত্তা বা গার্ড সার্ভিসিং, ক্লিনিং সার্ভিস, লিফট সার্ভিসিং, ওয়াটার ট্যাঙ্ক ক্লিনিং বা জেনারেটর সার্ভিসিং। বেশিরভাগ বাড়িওয়ালারই আইডিয়া থাকে না কোন সার্ভিস কোথা থেকে নিলে সবচেয়ে বেস্ট কোয়ালিটি পাওয়া সম্ভব। আমরা বিল্ডিংয়ের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সল্যুশন্স নিয়ে এসেছি, যেন তাদের এ ব্যাপারে আর ঝামেলা করতে না হয়। তিনটি সেকশনেই কাজ করছি আমরা। আমাদের ভিশন একটাই, ওয়ান স্টপ প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আমরা বিভিন্ন ভালো প্লাটফর্মে আমাদের উদ্যোগের জন্য সম্মানিত হয়েছি।
জাগো নিউজ: চাকরির বাজারে বিল্ডিং অটোমেশন ইন্ডাস্ট্রির বাজার বড় হচ্ছে। এটা নিয়ে যদি পাঠকদের বলতেন—
আবরার মাসুম শান্ত: অটোমেশন নিয়ে বাজারে অনেক ধরনের মতামত আছে। সত্য কথা বলতে, আমরা চাই বা না চাই আস্তে আস্তে অটোমেশন মানুষকে রিপ্লেস করবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আমরা যা করছি, সেটা কিন্তু ফুল অটোমেশন নয়। আমরা বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা হার্ডওয়ারও প্রভাইড করি। কিন্তু আমাদের সফটওয়্যার কিন্তু বিল্ডিংয়ের মানুষই ব্যবহার করবে। ম্যানেজার, কেয়ারটেকার, বিল্ডিং ওনার, গার্ড বা রেসিডেন্ট সবাই আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। আমরা বিল্ডিংয়ের সমস্যাগুলো সমাধান করে সবার জীবন সহজ করার চেষ্টা করছি। সত্য বলতে, আমরা ফুল অটোমেশনের জন্য রেডি না। আমাদের দেশে অটোমেশনের চাইতে মানুষের জবের প্রয়োজন বেশি। ফিন্যান্সিয়াল দিক থেকেও ফুল অটোমেশনের চেয়ে বাড়িওয়ালার জন্য সেমি অটোমেশনে যাওয়া লাভজনক। কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের দেশের মানুষের অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে এবং চাহিদার সাথে সাথে আমরাও যাব ফুল অটোমেশনে।
জাগো নিউজ: আপনি বুয়েটে পড়ার পর এরকম রিস্ক নিয়েছেন এবং বেশ সফলভাবে এগোচ্ছেন। তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী—
আবরার মাসুম শান্ত: পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা আমার হয়েছে কি-না জানি না। তাদের উদ্দেশে কিছু কথা অবশ্যই বলতে চাই, যেগুলো আমি বিশ্বাস করি। আমাদের দেশে তরুণদের সংখ্যা অনেক বেশি। এটা দেশের জন্য বড় সুযোগ, যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি। দেশে চাহিদার তুলনায় জব সংখ্যা অনেক কম। যে কারণে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে। পর্যাপ্ত জব না থাকার প্রধান কারণ তরুণরা একটা ভালো জব করতে চান। খুব কম তরুণের সাহস আর উদ্দেশ্য থাকে নিজে কিছু করার। আমরা যদি আমাদের জন্য জবের সুযোগ তৈরি করতে না পারি, তাহলে বাইরে থেকে কেউ করবে না। তরুণদের জন্য ঝুঁকি নেওয়া বা নতুন কিছু করা সবচেয়ে সহজ। টেকনোলজির এ যুগে নতুন কিছু শিখে নতুন কিছু শুরু করাটাও অনেক সহজ। আমার অনুরোধ, যাদের একবারও মনে হয়েছে যে নিজে কিছু করার; সে যেন একবার হলেও চেষ্টা করে। কারণ আমি জীবনটাকে যেভাবে দেখি, সেটা হলো নিজের ইচ্ছার দাম সবচেয়ে বেশি। যদি ফেলও করি, তাহলেও নিজেকে বলতে পারব অন্তত চেষ্টা করেছিলাম।
এসইউ/এমএস