ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করে সফল নিশাত
‘পাপড়ি’স ড্রিম’র প্রতিষ্ঠাতা নিশাত তাসমিনের পরিবারে তার মা-ই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু মায়ের পক্ষে একা পুরো পরিবারের খরচ চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল। তাই নিশাত তার মাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে পরিবারটি একটু ভালোভাবে চলতে পারে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ২ বছর পর নিশাত লক্ষ্য করেন, অনেকেই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ঘরে রান্না করা খাবার বিক্রি করছেন। যা তার কাছে খুব সময়োপযোগী ও ভালো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বলে মনে হয়।
তাই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে যারা ঘরে রান্না করা খাবার বিক্রি করছেন, নিশাত সেই পেজগুলো সার্চ করতেন। তাদের ব্যবসার ধরন বোঝার জন্য পেজগুলোতে নিয়মিত চোখ রাখতেন। এসব করতেই করতেই রান্নাঘর থেকে আয় করার পরিকল্পনাটি তার মাথায় আসে।
নিশাত তাসনিম বলেন, ‘অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ২০১৮ সালে মায়ের রান্না করা খাবারের ছবি দিয়ে একটি ফেসবুক পেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেই। খাবারের ছবিগুলো ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও শেয়ার করি। কিছুদিন পরই প্রথম অর্ডার পাই। প্রথম অর্ডারটি ছিল চিকেন রোস্টের। যা মায়ের হাতের রান্না করা প্রিয় খাবার।’
নিশাত আজও সেদিনের কথা স্মরণ করেন। প্রথম অর্ডার পাওয়ার পর তার মাকে ফেসবুক পেজটি সম্পর্কে বলেন। প্রথমে তার মা অবাক হন এবং একই সাথে বেশ খুশিও হন। তার মা যেহেতু বাড়ির বাইরে ছিলেন, তাই নিশাতকে চিকেন রোস্ট রান্না করার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বলেন। নিশাত তার কথামতো সবকিছু কিনে আনেন। তার মা কাজ থেকে ফেরার পর রোস্ট রান্না করেন। এভাবেই তারা প্রথম অর্ডার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
এরপর প্রায় ২ বছর কেটে গেছে। এখন যে কয়েকটি স্বনামধন্য বাংলা খাবারের পেজ আছে; সেগুলোর মধ্যে ‘পাপড়ি’স ড্রিম’ অন্যতম। নিশাতের মা এখন চাকরি ছেড়ে পুরো সময় মেয়ের ব্যবসায় দিচ্ছেন। তারা যৌথভাবে পুরো ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা, অর্ডার নেওয়া ও খাবার তৈরি করতে কাজ করছেন।
নিশাত বলেন, ‘পাপড়ি’স ড্রিমে চিকেন রোস্ট, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দেশি ভর্তা পাওয়া যায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশেষ খাবার হলো ‘খুদের ভাত ভর্তা’। ২০১৯ সালে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সবচেয়ে বেশি খাবার বিক্রি করায় ‘হোমশেফ’ আয়োজিত ‘সেরা তরুণ উদ্যোক্তা’ পুরস্কারও পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মা এবং আমি অনেক অর্থকষ্টের সম্মুখীন হয়েছি। আমরা কৃতজ্ঞ যে, সেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছি। আমি মনে করি, আমার মায়ের রান্না করা খাবার দিয়ে ফেসবুক পেজ খোলার সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনের সেরা ও সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।’
যেহেতু তাদের অর্ডার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তাই তারা ব্যবসা আরও বড় পরিসরে শুরু করতে চান। এজন্য প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে তারা জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। একদিন তারা হয়ে উঠবেন রান্না করা খাবারের মডেল।
এসইউ/এএ/জেআইএম