নারীদের অনুপ্রেরণার গল্প হতে পারেন শায়লা আশরাফ
শায়লা আশরাফ। রেনেসাঁ গ্রুপের কর্পোরেট এইচআর হেড হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—
আপনার ছোটবেলা আর পরিবারের কথা যদি বলতেন—
শায়লা আশরাফ: আমার ছেলেবেলা কেটেছে আরামবাগ, মতিঝিল এলাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুলে পড়তাম। বাবা ব্যাংকার ছিলেন। সেই সুবাদে ওই এলাকায় বেশি থাকা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করি। পরে আবার ‘শিক্ষা’ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করি। আমরা ৪ ভাই-বোন, আমি সবার বড়। ভাইয়েরা যার যার স্থানে প্রতিষ্ঠিত। আমার ২ ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে ভার্সিটিতে পড়ছে, মেয়ে এ লেভেল দেবে। আমার স্বামী সরকারি চাকরি করছেন।
ক্যারিয়ার কবে থেকে কিভাবে এগিয়ে চললো?
শায়লা আশরাফ: মাস্টার্স পাস করার পরপরই বেক্সিমকোতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসাবে চাকরি হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বেক্সিমকো ফার্মায় কিছুদিন কাজ করি। সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। মোট ১০ বছর কাজ করেছিলাম। আমি তখন সম্পূর্ণরূপে এইচআরে কাজ করতাম। বাংলাদেশে কর্পোরেট কালচার বলতে যা বোঝায়, তার সব কিছুই সেখানে বিদ্যমান ছিল। পরে ইউটা গ্রুপে, ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস লিমিটেডে যখন কাজ করি; তখন এইচআরের পাশাপাশি কমপ্লায়েন্সে কাজ করতাম। ধীরে ধীরে কমপ্লায়েন্সে অনেক বেশি জড়িত হয়ে গেলাম। এরপর জার্মান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে (জিআইজেড) সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসাবে কাজ করি। বর্তমানে রেনেসাঁ গ্রুপে কর্পোরেট এইচআর হেড হিসাবে কাজ করছি। আমি বোর্ড পরীক্ষার পরে এলাকার স্কুলে চাকরি করতাম, ভালোই লাগতো। মনে হলো, মানুষ নিয়ে কাজ করলে হয়তো আমি খারাপ করবো না। এটাও উপলব্ধি করলাম, একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে মানুষ। যেকোনো প্রতিষ্ঠান উন্নতির শিখরে যাওয়ার জন্য এ মানবসম্পদকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে।
আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যাপারে একজন তরুণের মধ্যে কী গুণগুলো দেখতে চান?
শায়লা আশরাফ: প্রথমে যেটি দেখতে চাইবো; সেটি হলো- তার কাজ শেখার প্রতি আগ্রহ। একজন মানুষ হয়তো অনেক কিছু জানতে পারে। কিন্তু কাজ শেখার প্রতি যদি কোনো প্রকার আগ্রহ না থাকে, তাহলে বিপদ। কারণ, কাজের প্রতি যাদের আগ্রহ থাকে, তারা যেকোনো জিনিসই শিখতে পারবে।
কোভিডের সময় বিভিন্ন টেকনোলজির ব্যবহার দেখতে পেয়েছি আমরা। যেমন- জুম বা টিমের সাহায্যে বিভিন্ন মিটিং হচ্ছে। এমনকি নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষাও আমরা জুমের মাধ্যমে নিয়েছি এবং পরবর্তীতে ভাইবাও নিয়েছি। সুতরাং এ সম্পর্কিত ধারণা থাকা জরুরি। এ ছাড়াও এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট রীতিমত স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে হবে, না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকবে।
এমনকি ইন্টারপার্সোনাল স্কিল ও নেগোশিয়েশন স্কিলও খুব জরুরি। অনেকে আছেন, যারা যথেষ্ঠ পরিমাণ জ্ঞান-বুদ্ধি রাখেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে সেগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন না। সুতরাং কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী রাখা খুব জরুরি। কোনো বিষয় সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা না থাকে, সেটা সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে নতুন নতুন কি থিওরি বা রীতি-নীতি চলছে সে সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করে ধারণা নিতে হবে।
নতুনদের জন্য কেমন পরামর্শ দেবেন?
শায়লা আশরাফ: প্রথমত নিজের সম্বন্ধে জানুন, সবাই যা করছে আপনাকেও তা-ই করতে হবে; এটা ঠিক নয়। অমুকে এটা করে, অনেক কিছু করে ফেলছে, আমিও ওটা করতে চাই; না এটা ঠিক নয়। যেকোনো জিনিস করার আগে নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্বন্ধে একটি গবেষণা করে ফেলতে হবে। সবার যে টেকনিক্যাল বিষয় ভালো লাগবে তা নয়, যার যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ আছে; সেটা চিন্তা করে বের করে ইউটিউবে দেখতে পারেন বা ইন্টারনেট থেকে সে বিষয়ের উপর যেকোনো রিসার্চ দেখতে পারেন। মোদ্দাকথা, নিজের যা গুণ আছে, সেটাকে প্রকাশ করতে হবে। আর একটি কথা, জীবনে সব সময় একটি ‘প্লান বি’ রাখতে হবে, সে জন্য প্রত্যেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্য যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করবেন। সর্বোপরি, জীবনে উন্নতি করতে গেলে ধৈর্য, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন, সুস্পষ্ট যোগাযোগ, আত্মবিশ্বাস- এসবের কোনো বিকল্প নেই। উন্নতির জন্য কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই।
এসইউ/এএ/জেআইএম