বাবার অনুপ্রেরণায় আইনজীবী হয়েছেন মিতা
আফরোজা ফিরোজ মিতা একজন আইনজীবী। জন্ম ৬ এপ্রিল ঢাকায়। বেড়ে ওঠা মুন্সীগঞ্জে। বাবা এবিএম ফিরোজ, মা আম্বিয়া ফিরোজ। শিক্ষা জীবনে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় ১৫তম স্থান অর্জন করেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সম্প্রতি জাগো নিউজকে তার স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হাসান—
আপনার শৈশব ও কৈশোর কেমন কেটেছে?
আফরোজা ফিরোজ মিতা: প্রতিটি মানুষের শৈশব ও কৈশোর হয় ভীষণ মধুর। আমার শৈশব ও কৈশোর ছিল মধুর ও রঙিন। একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে না উঠলেও চাচা, ফুপু, মামা, দাদি সবাইকে নিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমি পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সবার খুব আদরের ছিলাম। মহল্লাজুড়ে ঘুরে বেড়ানো, কাদা মাঠে খেলাধুলাসহ কত স্মৃতি! আমাদের পরিবার ছিল খুবই সংস্কৃতিমনা। আমার আম্মা খুব ভালো গান গাইতেন। তিনি চাইতেন আমরাও গান, নাচ, কবিতার মধ্যে বেড়ে উঠি। ছোটবেলাতেই বিটিভিতে গান গাওয়ার সুযোগ হয়। বই পড়ার প্রতি প্রচণ্ড নেশা তৈরি হয় ছোটবেলা থেকেই।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
আফরোজা ফিরোজ মিতা: সবসময়ে পড়তে বসো, পড়তে বসো—এ কথা শুনেই বড় হয়েছি। এই কী করছো, পড়ার শব্দ শুনি না কেন? আম্মার এ শাসনের কথা এখনো কানে বাজে। একটা পরিপূর্ণ পড়াশোনার পরিবেশে বড় হওয়ায় পড়াশোনাটা ন্যাচারালি হয়ে গেছে। চার বোনের পড়াশোনার জন্য মা অনেক কষ্ট করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম তিন মাস মা মুন্সীগঞ্জ থেকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতেন। মায়ের পরিশ্রমেই আমরা চার বোন উচ্চশিক্ষিত হতে পেরেছি। মা-ই আমাদের সব অর্জনের আঁতুড়ঘর। সবকিছু মিলিয়ে পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না বরং উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা ছিল।
> আরও পড়ুন- অভাবকে খুব কাছ থেকে দেখেছি : লিজা
আইন পেশায় আসার গল্প শুনতে চাই—
আফরোজা ফিরোজ মিতা: আব্বা পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে তিন বার দায়িত্ব পালন করেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছি বাবা কালো কোর্ট পরে বের হয়েছেন। তখন থেকেই কালো কোর্টের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে ছিলাম ডিটারমাইন্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উপরের দিকে ছিলাম। তাই ধরে নিয়েছি ল’ সাবজেক্ট পাবো। মজার ঘটনা ঘটলো ভাইভা বোর্ডে। শিক্ষকগণ বললেন, ‘কোন সাবজেক্ট নিতে চাও?’ আমি বললাম, ‘ল’ নেব।’ তারা বললেন, ‘ল’ কেন?’ বললাম, ‘ল’ইয়ার হবো, তাই।’ তারা বললেন, ‘ল’ তো শেষ।’ আমি বললাম, ‘না, আমার ভর্তি পরীক্ষার পজিশন অনুসারে ল’ শেষ হবার কথা না।’ একপর্যায়ে আমি কেঁদে ফেললাম ভাইভা বোর্ডে। বললাম, ‘আপনাদের এখানে পড়বো না।’ তখন শিক্ষকরা খুব বোকা হয়ে গিয়েছিলেন। আসলে তারা আমার সাথে মজা করেছিলেন। পরে ল’ পেয়ে যাই কিন্তু কেন যে কেঁদেছিলাম এখনো চিন্তা করে পাই না। (হা হা হা হা) এরপর পড়াশোনা শেষ করে অন্য কোন জবে ট্রাই করা হয়নি। সরাসরি চলে আসি আইন পেশায়। আইনজীবী হতে চেয়েছি, সেটাই করছি।
আইন পেশার চ্যালেঞ্জগুলো শুনতে চাই—
আফরোজা ফিরোজ মিতা: প্রথম দিকে পর্যাপ্ত ব্রিফ না পাওয়া হচ্ছে আইন পেশার বড় চ্যালেঞ্জ। এতে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। রাজনৈতিক দলের সাথে না থাকলে অনেক সময় কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। তবে নিজের চেম্বার না থাকলে ভালো করা যায় না। পরিবার, সংসার ও পেশার সাথে সমন্বয় করতে না পারাও একটা সমস্যা। মেয়েদের আইন পেশায় টিকে থাকতে হলে সংসার ও পেশায় সমতা আনতে হবে। চেম্বারগুলোতে চাইল্ড ডে কেয়ার ব্যবস্থা না থাকা নারী আইনজীবীদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
এ পেশায় যারা আসতে চান, তাদের উদ্দেশে পরামর্শ কী?
আফরোজা ফিরোজ মিতা: যারা শর্টকাট পথ খোঁজেন, তাদের জন্য আইন পেশা নয়। কোর্টের বারান্দায় এসে কিছু করতে পারছি না বলে অল্পতে হতাশ হয়ে পড়লে তাকে দিয়ে আইন পেশা হবে না। এ পেশায় লেগে থাকতে হবে। শুরুতেই কোন টাকা পয়সা হবে না—এমন ধারণা নিয়ে পেশাকে ভালোবেসে শুরু করতে হবে। লেগে থাকলে টাকা পিছু ছুটবে। সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। কোর্টের কিছু রুলস রেগুলেশন মেনে চলতে হয়। আইন পেশা সাধনার বিষয়। ধৈর্য থাকতে হবে।
> আরও পড়ুন- সব বাধা পেরিয়ে বিসিএস ক্যাডার মনিষা
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
আফরোজা ফিরোজ মিতা: আইন পেশার প্রতি দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বাবা ছিলেন বিশাল মনের অধিকারী, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিল তার। মানুষের প্রতি বাবার ভালোবাসা সবসময় আমাকে দারুণভাবে স্পর্শ করতো। দরিদ্র মানুষকে বাবা খুব সাহায্য করতেন। আমিও বাবার মতো কাজের মাধ্যমে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি। আইনি সেবা দিয়ে মানুষের সেবা করার বড় একটা সুযোগ রয়েছে। আব্বাই হলেন আমার বড় অনুপ্রেরণা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আফরোজা ফিরোজ মিতা: আইন পেশাতেই লেগে থাকবো। এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। রাজনীতির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে। ছোটবেলা থেকেই পারিবারে রাজনৈতিক আবহে বড় হয়েছি। তাই রাজনীতি আমাকে খুব টানে। কতটা করতে পারবো জানি না। তবে বড় পরিসরে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে রাজনীতি একটি দারুণ কার্যকরী প্লাটফর্ম। জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখি (হা হা হা)।
এসইউ/এমকেএইচ