ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনায় সিরিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ
সিরিয়ায় ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনার জের ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে দেশটির নতুন কর্তৃপক্ষকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। সুকায়লাবিয়াহ শহরের প্রধান চত্বরে ক্রিসমাস ট্রিতে আগুনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই শহরটি খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জানিয়েছে, এ ঘটনায় কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধাকে আটক করা হয়েছে। এই সংগঠনের নেতৃত্বেই সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। এইচটিএসের সপ্রতিনিধিরা সিরিয়ার ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ক্রিসমাসের আগের রাতে ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দিচ্ছে দুই মুখোশধারী। ভিডিওতে দেখা যায় ওই ঘটনার পর সুকায়লাবিয়াহ চত্বরে বিক্ষুব্ধদের সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন এইচটিএস-এর ধর্মীয় নেতা।
খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে তাকে ক্রস ধরে থাকতে দেখা যায়, যা সাধারণত রক্ষণশীলরা করেন না।
মঙ্গলবার রাজধানী দামেস্কের একাংশসহ বিভিন্ন এলাকায় আগের চেয়ে বেশি বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। দামেস্কের কাছাকাছি অবস্থিত কাসা এলাকায় লোকজনকে বিদেশি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।
তারা বলছিলেন, সিরিয়া এখন মুক্ত, নন-সিরিয়ানদের চলে যাওয়া উচিত। দামেস্কের কাছে বাব তৌমা এলাকায় বিক্ষোভকারীরা একটি ক্রস আর সিরিয়ার পতাকা বহন করছিলেন। তারা বলছিলেন, আমরা আমাদের ক্রসের জন্য জীবন দেব।
জর্জেস নামের একজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমরা যদি আমাদের খ্রিষ্টান ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আমাদের দেশে বাস করতে না পারি তাহলে আমরা এখানে থাকব না।
সিরিয়ায় অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর বসবাস আছে। এর মধ্যে আছে কুর্দি, আর্মেনিয়ান, আসিরিয়ান, খ্রিষ্টান, দ্রুজ, আলাউয়ি শিয়া ও আরব সুন্নি। শিয়া ও সুন্নি মিলে দেশটির মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।
দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহীদের হাতে উৎখাত হন দীর্ঘদিন যাবত প্রেসিডেন্ট থাকা বাশার আল-আসাদ। তিনি ও তার বাবা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করেছেন।
এরপর বাস্তুচ্যুত সিরিয়ানদের অনেকে নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। মঙ্গলবার তুরস্ক জানিয়েছে যে, ২৫ হাজারের বেশি সিরিয়ান দেশে ফিরেছে। এদিকে এইচটিএস কীভাবে সিরিয়া শাসন করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এই গোষ্ঠীটি একটি জিহাদি গ্রুপ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। তখন শরিয়াভিত্তিক শাসনের জন্য সহিংসতার নীতি থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা আরও বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করেছে।
চলতি মাসের শুরুতে যোদ্ধারা যখন দামেস্কের দিকে যাত্রা শুরু করে তখন এর নেতারা সব সিরীয়দের জন্য এক সিরিয়া বিনির্মাণের কথা বলেন।
মঙ্গলবার নতুন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তাদের নেতা আহমেদ আল-শারা বিপ্লবী সব গ্রুপগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন যে সব গ্রুপকে এক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হবে। বার্তা সংস্থা সানার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বাশির বলেছেন বিদ্রোহী যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়টি পুনর্গঠন করা হবে।
সিরিয়ায় অনেকগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। এর মধ্যে কয়েকটি এইচটিএস এর বিরোধিতাও করেছে। আরও কয়েকটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্পষ্ট নয়। এইচটিএস এখনও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় আছে। যদিও এটি পরিবর্তনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলমান আছে।
- আরও পড়ুন:
- মোজাম্বিকে নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত ২১
- হাইতিতে হাসপাতালে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৩
- তুরস্কে হাসপাতালের ওপর ভেঙে পড়লো হেলিকপ্টার, নিহত ৪
যুক্তরাষ্ট্র এক সময় আহমেদ আল-শারার মাথার দাম এক কোটি ডলার ঘোষণা করেছিল। শুক্রবার তারা সেটি বাতিল করেছে। তবে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত আছে। শুক্রবার তারা দেইর এজ্জর শহরে বিমান হামলা করেছে। এতে ইসলামিক স্টেট জিহাদি গ্রুপের দুজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
টিটিএন