ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করলো ইউরোপের কয়েকটি দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের একাধিক দেশ সিরীয় নাগরিকদের আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। এসব দেশের মধ্যে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও গ্রিস অন্যতম। খবর বিবিসির।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি সিরীয় নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশত্যাগ করেছে।

জার্মানি মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বড় সিরীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ সিরীয় নাগরিক বাস করছেন, যার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শরণার্থী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। বাশার আল-আসাদের পতনে পর জার্মানিও সিরিয়ান শরনার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও গ্রিসও জানিয়েছে যে তারা আপাতত সিরিয়ানদের আশ্রয় দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখবে।

জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক ফেডারেল অফিস সিরীয়দের সব মুলতুবি আবেদন স্থগিত রেখেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই অনিশ্চিত যে দেশটি নিরাপদ কি না, তা এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

বর্তমানে জার্মানিতে ৪৭ হাজার ২৭০ জন সিরীয় নাগরিক তাদের আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে যাদের এরই মধ্যে আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হয়েছে, তারা এই প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকার সব সিরীয় নাগরিকের আশ্রয়প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে ও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তাদের দাবি, সিরিয়ার পরিস্থিতি যথেষ্ট বদলেছে।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার, যিনি অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, অস্ট্রিয়ায় আশ্রয় নেওয়া যেসব সিরিয়ান নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যেতে চান, তাদের আমরা সহায়তা করবো। সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে তাদের নির্বাসন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব হয়।

বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় প্রায় ৯৫ হাজার সিরীয় নাগরিক বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ২০১৫ ও ২০১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় দেশটিতে এসেছেন। এই শরণার্থীদের প্রতি জনসাধারণের বিরূপ মনোভাব অস্ট্রিয়ার ডানপন্থি ও রক্ষণশীল দলগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার নিশ্চিত করেছেন যে যুক্তরাজ্য সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়ের আবেদনগুলোর সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। কারণ হোম অফিস দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করছে।

কুপার বলেন, আসাদ শাসনের পতনের পর দেশটির পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে’ ও কিছু মানুষ এরই মধ্যে সিরিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন।

২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি সিরীয় নাগরিককে আশ্রয় প্রদান করা হয়। এদের বেশিরভাগকেই মানবিক প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হয়, যারা তুরস্ক ও লেবাননের মতো দেশ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ২০১৯ সালে হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪৭ হাজার সিরীয় নাগরিক বসবাস করতেন। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা কমে প্রায় ৩০ হাজার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জার্মানির মতো ফ্রান্সও অনুরূপ একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে ও দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে, লেবানন ও জর্ডানে আশ্রয় নেওয়া হাজারো সিরীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তবে লেবাননের সীমান্তে যাতায়াত উভয় দিকেই চলছে। লেবাননে ১০ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী রয়েছে। তবে দেশটি তাদের প্রবেশে নিয়ম কঠোর করছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদক জানান, লেবাননে প্রবেশ করতে চাওয়া সিরীয়দের সংখ্যা বাড়ছে, যা সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণ হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে দেশে অস্থিতিশীলতা বা অপরাধ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন, তবে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে এমন কিছু হবে না।

অন্যদিকে, সিরীয় শরণার্থীদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য ইয়ায়লাদাগি সীমান্ত খুলে দিচ্ছে তুরস্ক। রোববার, আসাদ সরকারের পতনের পর যারা নিজ ভিটেতে ফিরতে চান, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে খুলে দেওয়া হচ্ছে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে এ সীমান্তটি।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় নাগরিক।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। আশা করি শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বাড়বে এখন। আর তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিতে আমরা ইয়ায়লাদাগি সীমান্ত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

এসএএইচ