গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি
ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সংস্থাটির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ এবং কয়েক মাসের তদন্ত ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে উল্লিখিত আইনি সংজ্ঞা অনুযায়ী গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে তারা।
অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের নিষিদ্ধ পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্তত তিনটি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যার মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের জীবনযাত্রাকে মানবেতর করে তুলেছে।
সংস্থাটির সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, মাসের পর মাস, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদেরকে মানবাধিকার এবং মর্যাদার অযোগ্য একটি অবমানবিক গোষ্ঠী হিসাবে আচরণ করেছে, তাদের শারীরিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায় দেখিয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গাজায় চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একাধিকবার সতর্কবার্তা এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে আন্তর্জাতিক আদালতের আইনি সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। দেশটির দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে গাজায় হামলা চালাচ্ছে। অবশ্য অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলেও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা পুনরায় উত্থাপিত করতে কাতার, মিশর ও তুরস্কের সঙ্গে নতুন করে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাসের পক্ষ থেকেও আগ্রহ দেখা গেছে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ