মণিপুরের তিন জেলায় কারফিউ জারি
বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুরে এবার কারফিউ জারি করা হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের তিন জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় গুলি বিনিময়, বোমা বিস্ফোরণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু, মণিপুর রাইফেলসের দুটি ব্যাটেলিয়নের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রশস্ত্র লুটের চেষ্টাসহ একাধিক ঘটনায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও যৌথ বাহিনী।
সহিংসতা বাড়তে থাকায় ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট এবং থাউবাল জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এর আগে এক নির্দেশনায় ইম্ফল ইস্ট এবং ইম্ফল ওয়েস্টের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেন। তবে সহিংসতা বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে কারফিউ শিথিলের নির্দেশ বাতিল করে পুণরায় ওই দুই জেলায় কারফিউ জারি করা হয়।
তবে মিডিয়া, বিদ্যুৎ, আদালত এবং স্বাস্থ্যখাতের মতো জরুরি সেবা কারফিউয়ের আওতার মধ্যে পড়বে না বলেও জানানো হয়। মণিপুরে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৮ জন নিহত এবং আরও প্রায় ১২ জন আহত হয়েছে। সেখানে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও হামলা চালানো হচ্ছে।
এদিকে রাজ্যে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন বহু মানুষ। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিপুল সংখ্যক নারী ইম্ফলে রাস্তায় নামেন। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তারা।
মণিপুরে কুকি ও মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জেরে রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজধানী ইম্ফলে গভর্নরের বাসভবন বা রাজভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক স্কুল ছাত্র এই বিক্ষোভ করে যাচ্ছে।
জানা গেছে, রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্য রাজ্যপাল বা গভর্নরকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় এই আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হবে।
শিক্ষার্থীরা এখন রাজ্যপাল লক্ষ্মণ আচার্যের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই সঙ্গে তারা এও ঘোষণা দিয়েছে যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজভবনের সামনে অবস্থান করবে। রাজ্যপাল যদি তাদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, সোমবার কিছু উত্তেজিত বিক্ষোভকারী ইট-পাথর ছুঁড়লে নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজভবনের সামনে থেকে সরে গিয়ে ইমা মার্কেটে অবস্থান নেয়। সেখানেই রাতভর বিক্ষোভ করে তারা।
অন্যদিকে, রাজভবন, ইমা মার্কেট ও আশেপাশের এলাকায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োগের কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার। তবে পুলিশ সদস্যরা ইমা মার্কেট খালি করতে বললেও, বিক্ষোভকারীরা তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সেখানেই অবস্থান করছে।
গত বছরের মে থেকে ইম্ফল উপত্যকা-ভিত্তিক মেইতেই এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি কুকি-জো গোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
প্রায় চার মাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও সহিংস সংঘর্ষের কারণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে মণিপুরে। নতুন করে ইম্ফলের কৌত্রুক এলাকায় সশস্ত্র আক্রমণে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়, আহত হন একাধিক ব্যক্তি।
অভিযোগ উঠেছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা পাহাড় থেকে কৌত্রুক ও পার্শ্ববর্তী কাদাংবন্দের নিচু এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হতাহতের পাশাপাশি বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশেই রয়েছে কুকি জনবহুল পার্বত্য জেলা কাংপোকপি। এরপর থেকেই বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুরের পরিস্থিতি।
গত সপ্তাহে কুকিরা মইরাংয়ে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করে বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় এক বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এর পাশাপাশি মণিপুরের জিরিবাম জেলায় সহিংসতায় চারজন সন্দেহভাজন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আসাম সীমান্তবর্তী জিরিবামের মংবুং গ্রামের কাছে ওই হামলা চালানো হয়।
- আরও পড়ুন:
- মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪০
- মণিপুর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ, মিজোরামে শরণার্থীর ঢল
পুলিশের দাবি, রাজ্যে সাম্প্রতিক হিংসায় অত্যাধুনিক ড্রোন ও আরপিজি (রকেটচালিত বন্দুক) ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের অস্ত্র সাধারণত যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়।
টিটিএন