ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে যা জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪

আমাদের বাড়িটা এলাকার সব থেকে উঁচু জায়গায়। তাই প্রতিবেশীরা সবাই আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাড়িতেও যে পানি ঢুকে যাবে, এটা কেউ ভাবতেও পারিনি।

এভাবেই ত্রিপুরার বন্যা পরিস্থিতির বর্ণনা করেন ত্রিপুরার উদয়পুর শহরের সাংবাদিক আয়ুব সরকার । তিনদিন ধরে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন তিনি।

বন্যায় পুরো রাজ্যে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারিভাবে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন দুজন।

আয়ুব সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত লাগাতার ৩৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে এখানে। সেই পানি তো ছিলই। তারপরে ডম্বুর ড্যামের পানি ঢুকতে শুরু করে। আবার জেলার কিছু অংশে মিজোরামের দিক থেকেও পানি চলে এসেছিল। সব মিলিয়ে যে অবস্থা তা ভয়াবহ। মাত্র দুঘণ্টার মধ্যে আমাদের ঘরে চার ফুট পানি জমে গিয়েছিল। রাতে বাধ্য হয়েই সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।

আরও পড়ুন>

তিনি বলেন, নানা সময়ে আমিই এগিয়ে যেতাম মানুষজনকে রেসকিউ করতে, এবার আমি নিজেই ভিক্টিম।

ত্রিপুরায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা তারা দেখেছেন ১৯৮৩ সালে। তবে এবছরের বন্যা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। দশ বছর পরে ১৯৯৩ সালেও বন্যা হয়েছিল।

আয়ুব সরকার বলেন, কোথাও শুধু বাড়ির টিনের ছাদ দেখা যাচ্ছে, কারও বাড়ির শুধু দোতলাটা দেখা যাচ্ছে, মানে একতলা পুরো ডুবে গেছে।

গোমতী জেলারই আরেকটি এলাকা মহারাণী। সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিক মোছলেম মিঞা শুক্রবার দুপুরে যা দেখতে পাচ্ছেন, তারই বর্ণনা দিয়েছেন।

মোছলেম মিঞা বলেন, চারদিকে শুধুই পানি, মাঝে মাঝে কিছু মানুষের ঘরবাড়ি আর গাছপালা দেখা যায়। আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। মহারাণী এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িতেই বুক সমান পানি এখন, কারও বাড়িতে দশ হাত পর্যন্ত পানি উঠেছে। গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। কোথাও কোনো গাড়ি চলার উপায় নেই।

তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস, তার ৯৫ শতাংশ মানুষই এখন হয় আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। অনেকে আবার টিলা এলাকার বাড়ি বা অফিস-কাছারিগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, কেউ জানেন না। অনেকে চেষ্টা করছেন যে নৌকা বা ভেলায় করে নিজের বাড়ির দিকে যাওয়ার, যাতে একবার চোখের দেখা দেখে আসতে পারেন।

তিনি বলেন, ওই এলাকা গোমতী নদীর তীরে, লাগাতার বৃষ্টির কারণে সেই পানি পাড় উপচিয়ে এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের ডম্বুর বাঁধের পানি ঢুকে এলাকা আরও ডুবিয়েছে।

নিজে সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দুদিনের পরে তার পক্ষে পেশাগত কাজ করা আর সম্ভব হয়নি।

আয়ুব সরকার বলছেন, এখানে পানি নেমে যাচ্ছে। কিন্তু গোমতী নদীর ধারে সোনামুড়া শহরের দিকে রাত থেকে পানি বাড়ছে বলে খবর পেয়েছি। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতেও কথা বলতে পেরেছিলাম, কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা হেলিকপ্টারে করে গোমতী আর দক্ষিণ জেলায় গিয়েছিলেন। বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

রাজ্যের অনেক এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর ত্রিপুরার চারটি জেলায় আগামী তিনদিন অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।

তবে দুপুরে নতুন উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে তারা। এখন বলা হচ্ছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার দুটি এলাকায় আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্যের অন্য কিছু এলাকায় শুধুই বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টির আশঙ্কা দেখছে তারা।

পুরো রাজ্যে আগামী দুদিনের জন্য হলুদ সতর্কবার্তা রয়েছে শুক্রবার দুপুর থেকে। তবে রোববার দক্ষিণ জেলার কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেদিন ওই অঞ্চলে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএসএম