ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারে রেকর্ড সংখ্যক নারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ০৬ জুলাই ২০২৪

যুক্তরাজ্যের এবারের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে লেবার পার্টি। নির্বাচনে ৪১২টি আসনে জয়ী হয়েছে দলটি। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলকে এককভাবে পেতে হয় ৩২৬টি আসন। এবার নারী সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হয়েছেন ২৪২ জন।

যদিও গত কয়েক নির্বাচনে ধীরে ধীরে নারী আইনপ্রণেতাদের জয়ী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে নারী এমপি নির্বাচিত হন ২২০ জন। তারও আগে ২০১৭ সালে এমপি হন ২০৭ জন এবং ২০১৫ সালে জয়ী হন ১৯৬ জন। অর্থাৎ এবার রেকর্ড সংখ্যক নারী নিয়ে গঠিত হয়েছে ‍যুক্তরাজ্যের নতুন সরকার।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যের আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভায় এবার জায়গা করে নিয়েছেন ১১ জন নারী। এছাড়া দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন নারীকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাচেল রিভস
ব্রিটেন সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন র‌্যাচেল রিভস। তাকে দেশটির চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার (রাজকোষের চ্যান্সেলর) বা অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ৪৫ বছর বয়সী রিভসই প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হয়েছেন।

তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে (যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করেছেন। র‌্যাচেল বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ হলো স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ এবং সংস্কার। যুক্তরাজ্যের পাবলিক সার্ভিসের পুনর্নির্মাণে অর্থায়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন তিনি।

যুক্তরাজ্য সরকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী। দক্ষিণ লন্ডনে বেড়ে ওঠা র‌্যাচেল ২০১০ সালে লিডস ওয়েস্ট থেকে প্রথমবার সংসদ সংদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এবার তিনি লিডস ওয়েস্ট এবং ফাডজি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। র‌্যাচেল রিভস ছাড়াও নতুন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন নারী।

অ্যাঞ্জেলা রেইনার
দেশটির নতুন উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অ্যাঞ্জেলা রেইনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পদের পাশাপাশি তাকে সমতাকরণ এবং আবাসনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। স্টারমারের চেয়ে বেশি বামপন্থি চিন্তার রেইনার (৪৪) শ্রমিকদের অধিকার আরও শক্তিশালী করতে এবং ১৫ লাখ নতুন আবাসন নির্মাণের জন্য লেবার পার্টি থেকে নেতৃত্ব দেবেন। নতুন প্রজন্মের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে, সামাজিক এবং কাউন্সিলভিত্তিক আবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

ইয়েভেত্তে কুপার
দেশটির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী ইয়েভেত্তে কুপার। অভিবাসন নীতির যেসব কার্যক্রম এখনো ঝুলে আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করবেন তিনি। একই সঙ্গে পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের দায়িত্বও নেবেন কুপার। তিনি বলেছেন, সরকারের প্রথম দিনেই রুয়ান্ডা নির্বাসন প্রকল্প বাতিল করার জন্য লেবার পার্টি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা কার্যকর করা হবে।

লেবার পার্টি নেতৃত্বাধীন শেষবার যে সরকার ছিল তার একজন সাবেক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কুপার। অপরাধ এবং পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি নিতে বাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ব্রিজেট ফিলিপসন
এবার ব্রিটেন সরকারের নতুন শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন ব্রিজেট ফিলিপসন (৪০)। তিনি স্টারমারের খুবই ঘনিষ্ঠ। উন্নত শিক্ষার সঙ্গে শ্রেণিস্তর ভেঙ্গে সামাজিক গতিশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে স্টারমার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্রিজেট ফিলিপসন।

হাউটন এবং সান্ডারল্যান্ড সাউথের এই এমপি বলেছেন, তিনি স্কুলগুলোকে পরিবর্তন এবং বেসরকারি স্কুলগুলোতে ট্যাক্স বিরতির অবসান ঘটিয়ে আরও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানের পরিকল্পনা করছেন।

শাবানা মাহমুদ
এবার বিচারমন্ত্রী করা হয়েছে শাবানা মাহমুদকে। ৪৩ বছর বয়সী তুখোড় এই আইনজীবী অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। সাবেক কনজারভেটিভ নেত্রী লিজ ট্রাসের পর তিনিই দ্বিতীয় নারী হিসেবে এই দায়িত্ব পেলেন।

দেশটিতে জনাকীর্ণ কারাগারগুলো নিয়ে তাকে কাজ করতে হবে। দেশটির বেশিরভাগ কারাগারই এখন জনাকীর্ণ হয়ে উঠেছে। লেবার পার্টির সবচেয়ে সিনিয়র মুসলিম এমপিদের একজন তিনি। চলতি বছরের শুরুতেই তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, গাজা যুদ্ধে লেবার পার্টি তাদের অবস্থানের কারণে ব্রিটিশ মুসলিমদের বিশ্বাস হারাতে যাচ্ছে। তিনি দলটিকে মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের আহ্বান জানান।

লিজ কেনডাল
শ্রম এবং কারামন্ত্রী হয়েছেন লিজ কেনডাল। তিনি বলেছেন, লেবার পার্টি আরও ৮ হাজার ৫শ মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করবে। একই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, অসুস্থতা সংক্রান্ত সুবিধা বিল শ্রম আইনের অধীনে পড়বে।

লুইস হেইঘ
এবার পরিবহনমন্ত্রী করা হয়েছে লুইস হেইঘকে। সব বেসরকারি রেল অপারেটিং কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে গ্রেট ব্রিটিশ রেলওয়ের আওতায় চলে আসবে বলে জানিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী হেইঘ। আগামী চার বছরের মধ্যে এ সংক্রান্ত সব চুক্তি শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিজস্ব স্টাইল এবং রসিকতার কারণে অন্য সবার চেয়ে সহজেই আলাদা করা যায় হেইঘকে। ২০১৫ সালে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

জো স্টিভেনস
ওয়েলস বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী জো স্টিভেনস। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ওয়েলস এবং যুক্তরাজ্য সরকারের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্কের জন্য কাজ করে যাবেন।

লিসা ন্যান্ডি
লিসা ন্যান্ডিকে যুক্তরাজ্য সরকারের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী করা হয়েছে। এর আগে ৪৪ বছর বয়সী লিসা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছায়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি লেবার ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড মিডল ইস্টের প্রধানের দায়িত্বেও ছিলেন। গাজার পক্ষে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার জন্য কাজ করায় তিনি বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছেছেন। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়েও সোচ্চার হয়েছেন।

লুসি পাওয়েল
এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন লুসি পাওয়েল। ম্যানচেস্টার সেন্ট্রাল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী এই নারী। এর আগে মিলিব্যান্ড, করবিন এবং স্টারমারের অধীনে বেশ কয়েকটি ছায়া মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রচারণায় ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে সে বছর জয়ের মুখ দেখতে পারেনি লেবার পার্টি।

অ্যাঞ্জেলা স্মিথ
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাঞ্জেলা লেডি স্মিথ (৬৫)। তিনি ১৪ বছর ধরে লর্ডসের সদস্য। এছাড়া তিনি হাউজ অব কমন্সে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্যাসিলডনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

টিটিএন