যুক্তরাজ্যে নির্বাচন
ঋষি সুনাক হারলে রুয়ান্ডা নীতিতে ক্ষতি ৫ হাজার কোটি টাকা
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর বিতর্কিত প্রকল্পে ব্রিটিশ সরকার এরই মধ্যে ৩২ কোটি পাউন্ড খরচ করে ফেলেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী ৪ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে সুনাকের দল হেরে গেলে এর পুরোটাই মাটি হতে পারে।
এই অর্থ খরচ করা হয়েছে রুয়ান্ডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। এর মধ্যে অভিবাসী স্থানান্তর প্রকল্পের অর্থও রয়েছে। কিন্তু সুনাকের প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টি জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে নীতিটি বাতিল করবে।
আরও পড়ুন>>
- নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ৭৮ ব্রিটিশ এমপি, বিপাকে ঋষি সুনাক
- নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হারবে ঋষি সুনাকের দল, বলছে জরিপ
- বিরোধীদের রেকর্ডভাঙা জয়ের পূর্বাভাস, কত আসন পাবে লেবার পার্টি
নির্বাচিত হলে এই পরিকল্পনা বাদ দিয়ে একটি নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ড প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে লেবার পার্টি। এর সাহায্যে ছোট নৌকায় চ্যানেল পার হতে আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা দেওয়া মানবপাচার চক্রকে ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
লেবার পার্টির অভিবাসন বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী স্টিফেন কিনোক বলেছেন, ঋষি সুনাকের রুয়ান্ডা নীতি ইতিহাসের সবচেয়ে অযৌক্তিক এবং অপচয় করা স্বরাষ্ট্র নীতিগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এটি ব্রিটিশ করদাতাদের জন্য অপমানজনক। এই পরিকল্পনায় জড়িত অল্প সংখ্যক মানুষের কর্মকাণ্ডে চ্যানেল অতিক্রমকারীদের কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।
তবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি জানিয়েছে, নির্বাচনে তারা জয়ী হলে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে রুয়ান্ডার উদ্দেশ্যে প্রথম ফ্লাইটটি উড়াল দেবে আগামী ২৪ জুলাই।
আরও পড়ুন>>
- বিতর্কিত রুয়ান্ডা পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিলেন ব্রিটিশ এমপিরা
- যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় স্থানান্তর ‘বেআইনি’: ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট
- যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার নতুন ফাঁদ
ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ন্যাশনাল অডিট অফিসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এপ্রিলের মধ্যেই রুয়ান্ডার অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থের পুরোটাই অফেরতযোগ্য।
পরিকল্পনা বাতিল হলে আরও কিছু খাতের অর্থও ক্ষতির খাতায় যোগ হবে। এর মধ্যে রয়েছে রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আইনি ফি বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা, প্রকল্পে কর্মরত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবলের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২২ সালের এপ্রিলে চুক্তিটির ঘোষণার পর থেকে তিনজন স্বরাষ্ট্র সচিবের রুয়ান্ডা যাতায়াতের জন্য খরচ হয়েছে ছয় কোটি টাকারও বেশি। রুয়ান্ডায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে শতাধিক আশ্রয়প্রার্থীকে গ্রেফতার ও আটক করার জন্য খরচ হয়েছে আনুমানিক সাড়ে সাত কোটি টাকা।
গ্রেফতার ও আটক এসব আশ্রয়প্রার্থীকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেআইনিভাবে আটকের জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন। তাদের জামিন শুনানির জন্যেও সরকারের বড় অংকের অর্থ খরচ হয়েছে।
এছাড়া রুয়ান্ডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং রুয়ান্ডা থেকে অসহায় শরণার্থীদের যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের মতো খাতে অর্থ খরচ হয়েছে।
কনজারভেটিভরা নির্বাচনে না জিতলে অফেরতযোগ্য এই হাজার হাজার কোটি টাকার কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলেও দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ইনফোমাইগ্রেন্টস
কেএএ/