অ্যাসাঞ্জ কোনো হিরো নন: সাবেক মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান
দীর্ঘ ১৪ বছর পর মুক্ত হয়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ১৪ বছর আগে মার্কিন সরকারের গোপন সামরিক তথ্য এবং নথিপত্র প্রকাশ করে হইচই ফেলে দেন তিনি। সে সময় থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন।
সুইডেনে একটি ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সাত বছর ধরে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর সেদেশের কারাগারে ছিলেন। তবে বরাবরই আসাঞ্জ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন আদালতে দোষ স্বীকার করলে এই কারাবাসকেই তার শাস্তি হিসাবে গণ্য করা হবে এবং আর কারাভোগ করতে হবে না বলে মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতার পর ব্রিটেন থেকে তিনি মুক্তি পান। তাকে মুক্তি দিতে অনেকদিন ধরেই অনুরোধ করে আসছিল তার দেশ অস্ট্রেলিয়া।
এরপর প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে হাজির হয়ে দোষ স্বীকার করার পর তাকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে অ্যাসাঞ্জের বিষয়ে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান জেমস ক্ল্যাপার বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ কোনো হিরো নন। তিনি বলেন, যারা স্বচ্ছতার প্রবক্তা এবং যারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি অন্তহীন যুক্তি। আমি বুঝতে পারছি তারা কি বলছে কিন্তু আমি তাকে কোনো হিরো মনে করি না। জেমস ক্ল্যাপার বলেন, তিনি যা করেছেন তা ছিল ভুল এবং অনৈতিক।
বেশ কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ২০০৬ সালে উইকিলিকস নামের ওয়েবসাইটটি চালু করেন অ্যাসাঞ্জ। এই সাইটে তিনি একের পর এক গোপন মার্কিন নথিপত্র প্রকাশ করতে থাকেন। এ কারণে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
২০১০ সালের জুলাইয়ে উইকিলিকস আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের প্রায় ৭০ হাজার শ্রেণিবদ্ধ নথি প্রকাশ করে। এসব তথ্য পরে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এছাড়া ওই বছরের অক্টোবর নাগাদ ইরাক আক্রমণের চার লাখ নথি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই লাখ কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান।
- আরও পড়ুন:
- অবশেষে মুক্তি পেলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
- জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ক্ষমা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প
- জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের বিষয়ে রায় আজ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের চুক্তি অনুযায়ী, তাকে আর যুক্তরাষ্ট্রে কারাভোগ করতে হবে না। তিনি যে সময়টায় যুক্তরাজ্যে কারাভোগ করেছেন সেটাই তার সাজা ভোগের সময় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তিনি মক্তি পাওয়ার পর পরই উইকিলিকসের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলা হয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন মুক্ত।
কারাগারের ছোট্ট একটি কক্ষেই ১ হাজার ৯০১ দিন কাটানোর পর স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ জুন) সকালে তিনি বেলমার্স কারাগার ত্যাগ করেন। লন্ডনের হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে এবং মুক্তি পাওয়ার পর বিকেলে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে একটি বিমানে চড়ে তিনি যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন।
টিটিএন