৬ মাসে মূল্য দ্বিগুণ
এনভিডিয়া যেভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হলো
অ্যাপল কিংবা মাইক্রোসফটের নাম শোনেনি, আজকাল এমন মানুষ পাওয়া ভার। সেই তুলনায় এনভিডিয়া কিছুটা কম পরিচিত কোম্পানি। কম্পিউটার, গেমিং, গ্রাফিকস কার্ড নিয়ে যাদের মোটামুটি জানাশোনা আছে, তাদের কাছেই এনভিডিয়ার নাম বেশি পরিচিত।
কিন্তু আগামী দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি হয়তো দ্রুত বদলাবে। অ্যাপল-মাইক্রোসফটের মতো এনভিডিয়ার নামও ছড়িয়ে পড়বে মুখে মুখে। এরই মধ্যে তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। অ্যাপল-মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলে গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির তালিকায় শীষে উঠে এসেছে এনভিডিয়া।
এনভিডিয়ার পরিচয়
১৯৯৩ সালে কম্পিউটার চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন তাইওয়ানে জন্ম নেওয়া প্রযুক্তিবিদ জেনসেন হুয়াং। পরবর্তীতে ভারী গ্রাফিক্স-নির্ভর ভিডিও গেমগুলোতে ব্যবহৃত চিপ তৈরির জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে এনভিডিয়া।
আরও পড়ুন>>
- শীর্ষস্থান হারালো মাইক্রোসফট/ বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি এখন এনভিডিয়া
- দেউলিয়া হয়ে গেলো বিশ্বের বৃহত্তম সিফুড রেস্তোরাঁ ‘রেড লবস্টার’
- যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী চান ব্যবসায়ীরা
সম্প্রতি এআই ল্যাবরেটরি এবং এআই অ্যালগরিদম পরিচালনার জন্য একই চিপের ব্যবহার শুরু করেছেন গবেষকরা। এর ফলে এনভিডিয়ার চিপের চাহিদা যেমন বেড়ে গেছে, তেমনি কোম্পানিটির ওপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বেড়েছে।
এআই-নির্ভর যন্ত্রে ব্যবহৃত চিপকে ‘প্রযুক্তি খাতের নতুন সোনা বা তেল’ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা।
কীভাবে শীর্ষে উঠলো এনভিডিয়া
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি সূচকে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এনভিডিয়া।
পাঁচ বছর আগেও ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৭৯ মার্কিন ডলার। সেটি ক্রমাগত বেড়ে এখন ১৩৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে এনভিডিয়ার শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ শতাংশ।
এর মধ্যে বিগত ১২ মাসে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ২০৯ শতাংশ উত্থান দেখেছে, আর গত ছয় মাসের হিসাবে এর পরিমাণ ১৮১ শতাংশ। সেই তুলনায় এ বছর মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের শেয়ারের দর বেড়েছে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৩ এবং ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন>>
- এক ভুলেই দেউলিয়া বিশ্বের বৃহত্তম সিফুড রেস্তোরাঁ?
- ভারতে নির্বাচন/ শেয়ারবাজার কারসাজির জন্যই কি বুথফেরত জরিপে ‘কারচুপি’?
- পাউডারে ক্যানসারের উপাদান/ ৭০ কোটি ডলারে আপসরফা করছে জনসন অ্যান্ড জনসন
চলতি মাসের শুরুর দিকেই বাজারমূল্যে অ্যাপলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এনভিডিয়া। গত মঙ্গলবার এর শেয়ারের দাম ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১৩৬ ডলারে পৌঁছায়। এর ফলে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের চেয়েও দামি কোম্পানি হয়ে ওঠে তারা।
বর্তমানে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা চলতি বছরের শুরুর দিকে থাকা দামের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফটের বর্তমান বাজারমূল্য ৩ লাখ ৩২ হাজার কোটি ডলার এবং অ্যাপলের বাজারমূল্য ৩ লাখ ২৯ হাজার কোটি ডলার।
শীর্ষধনীদের কাতারে হুয়াং
এনভিডিয়ার উত্থানের পাশাপাশি হু হু করে সম্পদ বেড়েছে এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াংয়েরও।
আরও পড়ুন>>
- ‘সর্বকালের সর্বোচ্চ’/ বিশ্বে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়ে ২ কোটি ২৮ লাখ
- চিপ রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা, চীনের চরম অসন্তোষ
- মেক্সিকোয় পণ্য বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে চীন
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের হিসাবে, এ বছরের শুরু থেকে এনভিডিয়া প্রধানের সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তিনি রয়েছেন ১২তম স্থানে।
শুধুই উত্থানের গল্প
শিল্প বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক এবং পরিবর্তিত বাজার পরিস্থিতি সত্ত্বেও আগামী দিনগুলোতে এনভিডিয়ার ভালো পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকবে।
কোম্পানিটি বলেছে, তারা জুলাই মাসে শেষ হতে চলা প্রান্তিকে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার মুনাফা আশা করছে। গত এপ্রিলে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করেছিল এনভিডিয়া, যা তার আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৮ শতাংশ এবং বার্ষিক হিসাবে ২৬২ শতাংশ বেশি।
এই সময়ের মধ্যে তাদের নেট আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬২৮ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।
৪ লাখ কোটি ডলারের লক্ষ্য
বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হিসেবে এনভিডিয়া শীর্ষে উঠে আসার পর কোম্পানিটির টেলিযোগাযোগ ব্যবসা উন্নয়নের বৈশ্বিক প্রধান ক্রিস পেনরোজ বলেছেন, তারা তাদের উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগুলোকে আরও উন্নত করতে কাজ করছেন।
সম্প্রতি কোপেনহেগেনে একটি অনষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, জেনারেটিভ এআই যাত্রা বিশ্বজুড়ে ব্যবসা এবং টেলিযোগাযোগকে সত্যিই বদলে দিচ্ছে। আমরা এর প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছি।
বেসরকারি ব্যাংকিং সংস্থা ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজ এক নোটে বলেছে, আমাদের বিশ্বাস, আগামী বছর প্রযুক্তি শিল্পে চার লাখ কোটি ডলার বাজারমূল্যের প্রতিযোগিতাটি এনভিডিয়া, অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য ন্যাশনাল
কেএএ/