অবৈধ পথে ইউরোপযাত্রা
ভূমধ্যসাগর থেকে ৩০ বাংলাদেশিসহ উদ্ধার ৫১, নিহত ১০
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় মারা গেছেন ১০ অভিবাসনপ্রত্যাশী। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৫১ জনকে, তাদের মধ্যে ৩০ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছেন কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইউরোপে অভিবাসন বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস জানায়, ৬১ জন যাত্রী নিয়ে লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে যাত্রা করা একটি নৌকা গত সোমবার (১৭ জুন) ইটালির লাম্পেদুসা উপকূল থেকে ৪০ মাইল (৬০ কিলোমিটার) দূরে এসে ঝুঁকিতে পড়ে।
আরও পড়ুন>>
- ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা
- ইউরোপে আশ্রয় আবেদনে বাংলাদেশিদের নজিরবিহীন রেকর্ড
- ইতালি পৌঁছাতে মরিয়া কেন বাংলাদেশিরা
ভূমধ্যসাগরের সক্রিয় সংস্থা অ্যালার্ম ফোন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের মাল্টা উপকূলে অবস্থিত সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ জোন থেকে উদ্ধার করে জার্মান এনজিও রেসকিউশিপের মানবিক উদ্ধার জাহাজ ‘নাডির’।
রেসকিউশিপের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্টিফেন সেফার্ট বলেন, আমরা যখন নৌকাটি খুঁজে পাই, তখন বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের উদ্ধারকর্মীরা প্রথমে ওপরের ডেকে থাকা লোকদের উদ্ধার করে। পরে দেখতে পাই, নৌকার ডেকের নিচেও মানুষ রয়েছে। স্থানটি পানি এবং পেট্রলের মিশ্রণে ভরা ছিল। সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় ১২ জনকে উদ্ধার করা হলেও তাদের মধ্যে মাত্র দুজন জীবিত রয়েছেন।
(1/2) #Nadir is currently caring for 51 people on board. The rescue came too late for 10 people.
— RESQSHIP (@resqship_int) June 17, 2024
A total of 61 people were on the wooden boat, which was full of water. Our crew was able to evacuate 51 people, two of whom were unconscious - they had to be cut free with an axe.
সেফার্ট বলেন, ভেতর থেকে অচেতন ব্যক্তিদের বের করতে আমাদের একটি কুড়াল দিয়ে নৌকার বেশ কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছিল। ১২ জনের মধ্যে ১০ জন মারা যান। আমাদের ধারণা, তারা গ্যাসোলিনের ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। যাত্রীরা সম্ভবত পেট্রল মিশ্রিত নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে নৌকায় পানি ঢুকলে অজ্ঞান ব্যক্তিরা ডুবে যান।
আরও পড়ুন>>
- ভূমধ্যসাগর থেকে ৩০ বাংলাদেশি উদ্ধার
- ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন মরক্কোর জনপ্রতিনিধিরাও
- ইতালির কাছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাডুবি, শিশুসহ নিখোঁজ ৩
রেসকিউশিপের তথ্য অনুসারে, জীবিত উদ্ধার হওয়া ৫১ জনের মধ্যে ৩০ জন বাংলাদেশি। বাকিরা পাকিস্তান, মিশর এবং সিরিয়ার নাগরিক। নিহতদের সবাই পুরুষ। প্রাথমিকভাবে তাদের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রেসকিউশিপ জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে যাত্রা করা কাঠের নৌকাটি অভিবাসনপ্রত্যাশীতে বোঝাই ছিল। এর ফলে স্থান সংকুলান হওয়ায় লোকদের ডেকের নিচে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার দুজনকে উদ্ধারকারী জাহাজ নাডিরে এনে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
এই ঘটনার দুই ঘণ্টা পর ইতালির উপকূলরক্ষীরা এসে পৌঁছান। তারা ওই দুই ব্যক্তিসহ মোট ৫১ জনকে উদ্ধার করেন।
রেসকিউশিপ অভিযোগ করেছে, ইতালীয় কোস্টগার্ড মরদেহগুলো না নেওয়ায় সেগুলো আমাদের জাহাজে রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে মরদেহ রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। আমরা তাদের নামিয়ে দিতে লাম্পেদুসা উপকূলের দিকে যাচ্ছি। আশা করছি, সোমবার রাতের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যাবো।
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিবাসন রুটগুলোর মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর। যুদ্ধ এবং দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে এশিয়া-আফ্রিকা থেকে যাওয়া অসংখ্য অভিবানপ্রত্যাশী ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের চেষ্টায় এই রুট ব্যবহার করেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাবে, গত বছর প্রায় ৩ হাজার ১৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ২ হাজার ৪১১ জন।
কেএএ/