হঠাৎ অভিষেকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিজেপির এমপি, তৃণমূলে ফেরার জল্পনা
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি বিজেপি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ১৮ আসনে জিতেছিল দলটি। কিন্তু এবারের নির্বাচনে রাজ্যটিতে তারা ১২টি আসন ধরে রাখতে পেরেছে। দখল হারিয়েছে ছয় আসনে। গত নির্বাচনের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও নিজেদের আসন ধরে রাখতে পারেননি। যে ১২টি আসন বিজেপি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে, সেগুলোর মধ্যে বিষ্ণুপুর অন্যতম।
আসনটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী নিজের সাবেক স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। সুজাতার চেয়ে ৫ হাজার ৫৬৭ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন সৌমিত্র। কিন্তু এই ফলাফলের পর থেকেই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন>>
- একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক স্বামী-স্ত্রী
- পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ঝড়: জিতলেন দেব, রচনা, শতাব্দী
- চূড়ান্ত ফল ঘোষণা: বিজেপি ২৪০, কংগ্রেস ৯৯
নিজে বিজয়ী হলেও দলের পরিকল্পনার সমালোচনা করে সৌমিত্র বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে কিছু নেতার ‘সেটিংয়ের’ কারণেই কিছু জায়গায় হেরেছে বিজেপি। আর তিনি জিতেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) জোরালো প্রচেষ্টার কারণে। আরএসএস কর্মীদের জন্যই এই জয় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন এ নেতা।
কিন্তু, নিজ দলের নেতাদের সমালোচনা করলেও তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জীর ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। অভিষেকের নির্বাচনী পরিকল্পনার পাশাপাশি নিজের সাবেক স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলেরও প্রশংসা করেছেন তিনি।
সাবেক স্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, সুজাতা ভালো লড়াই দিয়েছে। সুজাতার জায়গায় অন্য কেউ প্রার্থী হলে এই জয় আমার জন্য আরও সহজ হতো।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে এ বিজেপি নেতা বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন, যা রাজ্যের অনেক বড় বড় নেতা ধরতে পারেননি। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিটি লোকসভা আসনে দুটি করে বিধানসভা আসন জোড়া দিয়েছিল। আমাদের এখানে কোতুলপুর ও ইন্দাস ওদের লক্ষ্য ছিল। আমি কোতুলপুর সামলালেও ইন্দাস পুরোটা সামলাতে পারিনি।
আরও পড়ুন>>
- বিজেপির স্বপ্ন গুঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে বড় ব্যবধানে এগিয়ে তৃণমূল
- যে কারণে পশ্চিমবঙ্গে ধরাশায়ী বিজেপি
- ভারতের নির্বাচন: ৭৮ মুসলিম প্রার্থীর মধ্যে জয়ী মাত্র ১৫ জন
সৌমিত্র আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ভোট নেই। অভিষেক ভালো কাজ করেছেন বলেই (তৃণমূল) জিতেছে। এছাড়া, গণনার জন্য আমাদের পার্টি কর্মীদের সেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। সবদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম।
বিষ্ণুপুরে বিজেপির সংসদ সদস্য সৌমিত্র খাঁর মুখে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাবাক্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে।
জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবনের শুরু করেন সৌমিত্র খাঁ। ২০১১ সালের জাতীয় কংগ্রেসের টিকিট এ বিধায়ক হন তিনি। ২০১৪ সালের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ২০১৯ সালে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন সৌমিত্র। সেই বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর থেকে জয়ী হন তিনি। তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। ২০২৪ সালেও বিজেপির টিকিটে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন সৌমিত্র। তবে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সুর না চড়িয়ে উল্টো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন বিজেপি নেতা।
এর ফলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাহলে কি সৌমিত্র নিজের পুরোনো দলে ফেরার পথ তৈরি করছেন? বিজেপি ছেড়ে তিনি কি আবারও তৃণমূলে যোগ দেবেন?
সেই সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন সৌমিত্র। তিনি বলেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন বিজেপিতে যোগ দেবেন, সেদিন আমি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ভাববো।
ডিডি/কেএএ/