ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ৩১ মে ২০২৪

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা এবারই প্রথম। এর আগে কখনো দেশটির কোনো সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টকে কোনো ধরনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতে দেখা যায়নি।

এমনকি অপরাধ সাব্যস্ত হওয়ার পর বড় কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া ট্রাম্পই প্রথম ব্যক্তি। ব্যবসায়িক নথিপত্র গোপন করে সাবেক এক পর্ণ তারকাকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে আনা ৩৪টি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

তবে আদালত আগামী ১১ জুলাই এ মামলায় সাজা ঘোষণা করবে। এর চারদিন পরেই রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন দেয়ার কথা। ট্রাম্প আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার বিরুদ্ধে হওয়া এই রায়কে অসম্মানজনক বলে অভিহিত করেছেন এবং মামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বিচারক মার্চানের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি শুক্রবার ম্যানহাটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।

তবে এ রায়ের প্রভাব কী হবে, বিশেষ করে ট্রাম্পের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের পদক্ষেপগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ম্যানহাটনের ১২ বিচারকের প্যানেল বৃহস্পতিবার সর্বসম্মত ভাবে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। ছয় সপ্তাহের বিচার ও দুই সপ্তাহের যুক্তিতর্ক শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়।

এই রায়কে অন্যায্য বলেছে ট্রাম্পের লিগ্যাল টিম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ আইনজীবীদের একজন ফক্স নিউজকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনি দল আপিলের সব বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে। উইল স্ক্যার্ফ নামের ওই আইনজীবী বলেন, এই মামলার সবগুলো দিকই আপিলের উপযুক্ত। যতটা দ্রুত পারি আমরা আপিল করতে যাচ্ছি।

ট্রাম্পের আইনি দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য টড ব্লাঞ্চে ফক্স নিউজকে বলেছেন, তার মক্কেল ন্যায় বিচার পাননি। এক বছর ধরেই আমরা বলে আসছি যে ম্যানহাটনে আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। তার অভিযোগ ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন ট্রাম্পকে ধ্বংস করার লাইফ মিশনে নেমেছেন। এখানে কিছু লোক ছিল যাদের বিচারে সাক্ষী করা উচিত হয়নি।

রায়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন বলেছেন যে, তিনি স্বস্তিবোধ করছেন কিন্তু তিনি বিস্মিত হননি। দিন শেষে সত্যের জয় হলো। এটা জবাবদিহিতা, এটা তাই যা আমেরিকার এখন দরকার।

এর আগে কোহেনই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি তথ্য গোপনের জন্য পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের জন্য সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। আদালতে ট্রাম্পের আইনি দল তাকে জেরা করেছে। অ্যাটর্নি টড ব্লাঞ্চে তাকে ‘সর্বকালের সেরা মিথ্যাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জবাবে কোহেন ব্লাঞ্চেকে ‘সর্বকালের সবচেয়ে বোকা আইনজীবী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ম্যানহাটনের সাবেক প্রসিকিউটর ডানকান লেভিন বলেছেন, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস মামলাটি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থ দিয়ে তা মিথ্যা তথ্যে ঢেকে দিতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি বলেন, তার ক্ষমতা দিয়ে বিচার প্রশাসনকে হেয় করার জন্য সবকিছু করেছেন এবং তিনি বিচার পেয়েছেন যা মৌলিকভাবে ন্যায্য। প্রসিকিউশনের জন্য এটা বড় একটি জয়।

এদিকে ডেমোক্র্যাট দলীয় আইন প্রণেতাদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের প্রশংসা করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাডাম স্কিফ লিখেছেন, আজ আমেরিকার সাধারণ জনগণ একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে পেয়েছেন যিনি কয়েক ডজন অপরাধ করেছেন। বিচার প্রলম্বিত করতে তার সব চেষ্টা সত্ত্বেও ন্যায় বিচার হয়েছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অ্যাডাম স্কিফ ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনা তদন্ত করা হাউজ সিলেক্ট কমিটিতে ছিলেন। সাউথ ক্যারোলাইনার জিম ক্লিবার্ন লিখেছেন, বিচারকরা বলেছেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওয়াশিংটনের প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পাল বলেছেন, এটি আমেরিকার জবাবদিহিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীরা রায়ের সমালোচনা করে বলেছেন, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার এক সহযোগী লিখেছেন, এ রায় দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারের দুর্নীতিময় ফল। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে আছি।

স্পিকার মাইক জনসনও সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ আমেরিকার ইতিহাসে একটি লজ্জার দিন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং তিনি জিতবেন।

ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার শঙ্কা সবকিছু মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কারাদণ্ড হতে পারে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।

ট্রাম্প মূলত ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির ৩৪টি অপরাধমূলক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ঘুস দিয়েছিলেন তার আইনজীবী।

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রচারণা এবং জো বাইডেনকে হারিয়ে ফের হোয়াইট হাউজে ফিরে যাওয়ার দৌঁড়ে ট্রাম্প যখন উঠেপড়ে লেগেছেন ঠিক সে সময়ই তার বিরুদ্ধে এমন রায় ঘোষণা হলো।

ছয় সপ্তাহ ধরে সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসসহ ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শুনেছেন আদালত। মূলত যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগই এই মামলার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সাবেক এই পর্ন তারকাকে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প তার সাবেক আইনজীবীর মাধ্যমে ঘুষ দিয়েছিলেন।

তবে এই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন ড্যানিয়েলস। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। তার দাবি, তার মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাকে টাকা দিয়েছিলেন।

সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রেসিডেন্সিয়াল হিস্ট্রির পরিচালক জেফ্রি অ্যাঙ্গেল বলেছেন, কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো ধরনের ইঙ্গিত পেতে আমরা প্রায়ই ইতিহাসের আশ্রয় নেই। কিন্তু এই ঘটনার কাছাকাছি এমন কোনো ধরনের রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে আগামী ১১ জুলাই ট্রাম্পের সাজা ঘোষণার কয়েক দিন পরই রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনেই তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা। ফলে তার সাজা ঘোষণার কারণে ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম বলে এ বিষয়ে আগে থেকেই কোনো ধারণা করার কোনো উপায়ও নেই।

টিটিএন