লোকসভা নির্বাচন
ষষ্ঠ দফার ভোটেও পশ্চিমবঙ্গে তুমুল সহিংসতা
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায়ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এদিন রাজ্যের আট আসনে ভোটগ্রহণ হয়। এগুলো হলো তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর। সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোট চলে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
কিন্তু ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে, শুক্রবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে এক তৃণমূল নেতাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বেতকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক সদস্য শেখ মইবুল রাতে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় মইবুলকে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত মইবুলের মৃত্যুতে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে এই খুনের অভিযোগ উঠলেও তারা তা অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন>>
- পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার মধ্যে শেষ হলো পঞ্চম দফার ভোট
- পঞ্চম দফার ১৫৯ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা
- চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণে সহিংসতা, তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু
আবার, রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী। তার অভিযোগ, পুলিশ নন্দীগ্রাম এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করছে। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত হলদিয়ায় স্থানীয় মানুষদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অভিজিৎ গাঙ্গুলী। জালভোটের অভিযোগ পেয়ে তিনি যখন স্থানীয় একটি ভোটকেন্দ্রে যান, তখন বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে ধরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর নামানো হয় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
ভোটের সকালে উত্তপ্ত হয় কেশপুর। ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা হিরণ চ্যাটার্জির গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। রাস্তার ওপর অগ্নিসংযোগ করে চন্দ্রকোনা মেদিনীপুর রাজ্য সড়কে হিরণকে আটকানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এর নেতৃত্ব দেন কেশপুর ব্লকের ৫ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি শেখ হাসানুর জামান। এর আগে, কেশপুরে হিরণের গাড়িবহর আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে।
তবে ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারীকে (দেব) দেখা গেছে ভিন্ন মুডে। এদিন মোটারসাইকেলে চড়ে বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন>>
- পশ্চিমবঙ্গে মোদী-মমতার পাল্টাপাল্টি জনসভা
- পশ্চিমবঙ্গে ৩০ আসনে জিতবে বিজেপি: অমিত শাহ
- দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা তৃণমূল, উজ্জীবিত বিরোধীরা
আবার, আক্রমণাত্মক রূপে দেখা গেছে মেদিনীপুরে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে। একটি বুথের ভেতর গিয়ে বিজেপির বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে অভাব্য আচরণ করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ওই বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টের সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়ান জুন মালিয়া।
তৃণমূলের লোগো বুকে লাগিয়ে বুথে বুথে ঘুরে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। যদিও সুজাতার দাবি, কোনো বিধিভঙ্গ হয়নি।
ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর ওপর গড়বেতার ফুলকুশমায় হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রার্থীকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট-পাথর ছোঁড়া হয়েছে। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রণতের দাবি, ১০০ থেকে ২০০ জন হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে রোহিঙ্গারা রয়েছে। আজ নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে বেঁচে ফিরতাম না।
মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে বুথের মধ্যে পুলিশ সদস্যকে দেখে ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্র পাল। এদিন কান্দামারি আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের একটি বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে ভয় দেখিয়ে উঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ শুনে সেখানে যান অগ্নিমিত্রা। কথা বলেন প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে। তার অভিযোগ, দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের পুলিশ ভোট করাচ্ছে আর কেন্দ্রীয় বাহিনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম খারাপ হওয়ার খবর এসেছে। কোথাও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বুথে আসতে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিন ভোট শুরুর আগে এক্স হ্যান্ডেলে নারী ও নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, গণতন্ত্র তখনই বিকশিত হয়, প্রাণবন্ত দেখায়, যখন জনসাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে।
আগামী ১ জুন সপ্তম ও শেষ দফার ভোট নেওয়া হবে ভারতে। ভোট গণনা হবে আগামী ৪ জুন।
ডিডি/কেএএ/