রাফায় হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আইসিজের নির্দেশ
ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফা শহরে হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। শুক্রবার (২৪ মে) জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালেতের ১৫ বিচারকের একটি প্যানেল এই নির্দেশ দেয়।
এদিন আদালতের প্রধান বিচারপতি নওয়াফ সালাম বলেন, রাফায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি, বরং আরও অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি রাফা থেকে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের ঝুঁকি কমানোর জন্য ইসরায়েল যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছি বলে মনে হয় না।
‘বর্তমানে রাফায় মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে রাফায় তার সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এমন যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা গাজাবাসীর জীবনকে আরও মর্মান্তিক করে তুলতে পারে।’
আরও পড়ুন:
- আইসিজের রায়ের পরেই রাফায় বিমান হামলা চালালো ইসরায়েল
- রাফায় হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আইসিজের নির্দেশ
- গাজার রাফা শহর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
- ভয়াবহ হয়ে উঠছে রাফা শহরের পরিস্থিতি
- গাজায় আরও হামলা চালানোর হুমকি ইসরায়েলের
এছাড়া আইসিজে কর্তৃক আদেশকৃত ব্যবস্থা প্রয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে ইসরায়েলকে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য ইসরায়েলকে রাফা সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে, আইসিজের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনা বলেছেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। এটি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
অন্যদিকে, এই রায় ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ইসরায়েল তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করছে। যারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে, তারা আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে চায়। আমরা কোনোভাবেই তাতে রাজি হবো না ও যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।
আরও পড়ুন:
- রাফায় হামলা: দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত হামাস
- ইসরায়েলি অভিযান, রাফা ছেড়েছেন ৬ লাখ ফিলিস্তিনি
- ইসরায়েলের পূর্ণ মাত্রার অভিযানেও হামাস নির্মূল হবে না: ব্লিঙ্কেন
- শেষ নিরাপদ স্থান থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাজাবাসীকে
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাফাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করে ইসরায়েল। সেসময় গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি শহরটিতে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ লাখ মানুষের আবাসস্থল হয়ে ওঠে শহরটি। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে এখানেও ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ায় লাখ লাখ গাজাবাসী শেষ নিরাপদ স্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা আইসিজেকে জরুরি ব্যবস্থা আরোপ করার অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে গাজাবাসীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাফায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করা নির্দেশ দিতেও আদালতের প্রতি আহ্বান জানান।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে গণহত্যা গাজায় গণহত্যা বন্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আইসিজে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। বরং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গাজায় একের পর এক ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেই চলেছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে, গাজায় গণহত্যার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে ইসরায়েল। এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে গাজায় সামরিক অভিযানকে আত্মরক্ষার উপায় ও হামাসকে নির্মূল করার মিশন বলে দাবি করে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি
এসএএইচ