এমপি আনোয়ারুল আজীম খুন
জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় ভারতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদারকে আজ আদালতে তোলা হলে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাকে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত জজ কোর্টে তোলা হয়েছে। এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জিহাদ নিজের নাম সিয়াম বলে জানান। পরবর্তীতে তার আসল পরিচয় জানা যায়।
জানা গেছে, এ ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১ ও ১২০বি ধারায় চারটি মামলা দেওয়া হয়েছে। সবগুলো ধারাই জামিন অযোগ্য। ৩৬৪ অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ। ৩০২ অপরাধমূলক নরহত্যা। ২০১ তথ্য লোপাট, অর্থাৎ অস্ত্র ও মরদেহ পরিকল্পনা করে সরিয়ে ফেলা এবং ১২০বি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করা (একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে)। পুলিশই এই মামলা করেছে।
এই ধরনের মামলায় সর্বোচ্চ রায় হিসেবে বিচারক আমৃত্যু যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে।
অপরদিকে আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলায় বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান।
শুক্রবার (২৪ মে) দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের জন্য তাদের দশদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফজুর। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জিহাদ পেশায় একজন কসাই বলে জানা গেছে। ২৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে। পুলিশকে বিভ্রান্তে ফেলার জন্য নিজের নাম সিয়াম বলে জানিয়েছিলেন জিহাদ। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সঠিক নাম এবং বাংলাদেশের ঠিকানা জানান জিহাদ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। বলা হয়েছে, এই সিয়াম হচ্ছে জিহাদ। আততায়ীরা মুম্বাই থেকে জিহাদ নামে পেশায় ওই কসাইকে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে মুম্বাইতে বসবাস করছিলেন জিহাদ। ২ মাস আগে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনিই এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ ৪ জন ওই এমপিকে তার নিউটাউনের ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। তারপর তারা ফ্ল্যাটের মধ্যেই পুরো শরীর থেকে মাংস আলাদা করেন এবং মাংসের কিমা করেন। তারপর তারা সব কিছু পলিথিনের প্যাকে রেখে দেয়। পাশাপাশি হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে প্যাক করেন। পরে সেই প্যাকেটগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে, বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে কলকাতা ও এর আশপাশের এলাকায় ফেলে দেয়।
- আরও পড়ুন:
- এমপি আনোয়ারুল আজীম হত্যা/ জিহাদকে আদালতে তোলা হয়েছে
- সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারী জিহাদকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি
- এমপিকে হত্যা করতে ফয়সাল-মোস্তাফিজুরের পাসপোর্ট করা হয় এপ্রিলে
- আনোয়ারুল হত্যা: সিলিস্তি-আমানসহ তিনজন গ্রেফতার
- এমপি আনোয়ারুলের সন্দেহভাজন ৪ খুনির আখ্যান
এর আগে আনারের মরদেহ গুমে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে গাড়ির চালককেও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভোররাতে জব্দ করা হয় সাদা রঙের মারুতি গাড়িটি।
ক্যাবচালক জুবেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। এরপরই তাকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়। আনারের টুকরো টুকরো লাশের সন্ধানে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় সিআইডির প্রতিনিধি দল তল্লাশি চালায়।
টিটিএন