ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

গাজার রাফা শহর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:০৮ পিএম, ১১ মে ২০২৪

গাজা উপত্যকার সবচেয়ে দক্ষিণের শহর রাফা। ইসরায়েলি বাহিনী হামলা শুরুর পর থেকেই বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরটি। আলোচনায় রয়েছে রাফা ক্রসিংও। এটি হলো মিশর ও গাজা ভূখণ্ডের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত পারাপারের পথ, যা মিশরের সিনাই মরুভূমি ঘেঁষে অবস্থিত।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আচমকা হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

আরও পড়ুন>>

সেসময় ইসরায়েল রাফাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করলে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি শহরটিতে আশ্রয় নেন। এখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফায় বড় ধরনের আক্রমণ শুরুর ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এ অবস্থায় নিরীহ মানুষজন শহরটি ছাড়তে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বেশিরভাগই মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ শহরের দিকে পা বাড়িয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাফায় ইসরায়েলি ট্যাংক প্রবেশ করছে। আকাশ থেকেও বোমাবর্ষণ চলছে।

সেইসঙ্গে, রাফা ক্রসিং এবং এর দুই পাশে বিস্তৃত সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য, যুদ্ধে জর্জরিত গাজাবাসী যাতে এই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করতে না পারে এবং রাফা সীমান্ত দিয়ে কোনো সাহায্যও যেন প্রবেশ করতে না পারে।

রাফায় অভিযানের কারণ হিসেবে এই অঞ্চল থেকে হামাসের ঘাঁটি উপড়ে ফেলার কথা বলছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজা থেকে বের হওয়া পথ
গাজা উপত্যকাটির দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার। প্রস্থে কোথাও ছয় আবার কোথাও ১২ কিলোমিটার। এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করেন। উপত্যকার উত্তর ও পূর্ব দিকে ইসরায়েল, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর আর দক্ষিণে মিশর।

গাজার আকাশসীমা এবং এর সমুদ্র উপকূল নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। অন্যদিকে, রাফা ক্রসিং দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন>>

রাফাহ ক্রসিং ছাড়াও স্থলপথে গাজার আরও দুটি ক্রসিং রয়েছে। একটি রাফাহ ক্রসিং থেকে কিছুটা পূর্বে এগিয়ে গেলে ইসরায়েলের সাথে সীমান্ত পথ কেরেম শালম ক্রসিং। আরেকটি ক্রসিং লোল একদম উত্তরের বেইত হানুন বা ইরেজ ক্রসিং। এর বাইরে গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের আরও চারটি ক্রসিং থাকলেও কয়েক বছর ধরে সেগুলো বন্ধ রয়েছে।

হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর সময় থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার দুটি ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা থাকে কেবল রাফা ক্রসিং।

উপকূলও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সমুদ্রপথে এই অঞ্চল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না। গাজার বিমানবন্দরও ২০০১ সালে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল।

এমন অবস্থায় রাফা ক্রসিং হয়ে উঠেছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের গাজা ছেড়ে যাওয়া এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র স্থলপথ। একে তখন গাজার লাইফলাইনও বলা হয়েছিল। এখন সেই পথেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল।

গত ৬ মে হামাস মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিলেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এতে সায় দেয়নি। বরং তারা রাফায় অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে।

ইসরায়েল এই রাফাহ শহর ও রাফাহ ক্রসিং নিয়ে যা করছে তা অসলো শান্তি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিপর্যয়কর প্রভাব
রাফায় আক্রমণ করলে বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে ইসরায়েলকে হামলা না চালাতে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, রাফায় সামরিক অভিযান চালানো হলে এর পরিণাম বিপর্যয়কর হবে।

আরও পড়ুন>>

অন্যদিকে, পূর্ব রাফা থেকে এক লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মানবিক নীতির চরম লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ দেওয়া বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ’র মতে, রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় গত সোমবার থেকে এই পথ দিয়ে কোনো ত্রাণবাহী যান বা ট্রাক গাজায় ঢুকতে পারছে না। এতে গাজার মানবেতর পরিস্থিতি আরও প্রকট হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।

রাফায় হামলাকে ইসরায়েলের ‘কৌশলগত ভুল, রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মানবতার দুঃস্বপ্ন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এমন অবস্থায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরায়েল ও হামাসকে আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত অক্টোবর থেকে শুরু করে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সাত মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/