বোমাবাজি-জালভোট-মারামারি
পশ্চিমবঙ্গে টানটান উত্তেজনায় শেষ হলো তৃতীয় দফার নির্বাচন
ভারতে ১৮তম লোকসভার নির্বাচনে তৃতীয় দফার ভোট শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এদিন পশ্চিমবঙ্গে দুই জেলার চার আসনে- মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদে ভোট হয়েছে। তৃতীয় দফার এই ভোটে বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল ছাড়া মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।
পশ্চিমবঙ্গের এই চার কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মালদা উত্তরে। তবে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুরে বড় ধরনের গোলমাল না হলেও একাধিক জায়গায় জাল ভোট, ভোটদানে বাধা, এজেন্টদের বসতে না দেওয়ার মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন>>
- দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা তৃণমূল, উজ্জীবিত বিরোধীরা
- পশ্চিমবঙ্গে সব দলের প্রার্থী তালিকায় পরিবারতন্ত্রের দাপট
- প্রচারের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো কাঞ্চন মল্লিককে
লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় চার কেন্দ্র মিলিয়ে বিকেল পর্যন্ত ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে মোট ৩৬১টি। দলগতভাবে অভিযোগ জমা পড়েছে ২১৭টি। এর মধ্যে সিপিএমের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, ১৫৩টি। এছাড়া কংগ্রেসের ৩৫টি, তৃণমূল কংগ্রেসের ১৭টি এবং বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
মালদা উত্তরের রতুয়া-১ ব্লকের চাঁদমনি-২ অঞ্চলের বাটনা এলাকায় ভোটারদের বাধা দিতে কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি, একাধিক জায়গায় ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ এসেছে। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন। জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে কর্তৃপক্ষ।
মালদা উত্তরের হবিপুর ব্লকের মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২২ নম্বর বুথে ভোট বয়কট করেছেন নারীরা। রাস্তা, পরিশুদ্ধ খাবার পানি এবং সেতুর দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দেন তারা।
আরও পড়ুন>>
- প্রচারে বেরিয়ে তোপের মুখে তৃণমূলের প্রার্থী
- প্রচারে বেরিয়ে নারীদের চুমু/ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ
- পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রের ইংরেজবাজার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ধীরেন সাহা স্কুলের ভোটকেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী পরিদর্শনে গেলে তাকে দেখে তৃণমূল সমর্থকরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন।
জঙ্গিপুর আসনের অন্তর্গত সুতির ৬৪ নম্বর বুথের বাইরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থী ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন। ধনঞ্জয় পাল্টা অভিযোগ করেন, তার দলের পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই খবর পেয়ে কেন্দ্রে যান তিনি। একসময় দুজনেই একে অপরের দিকে তেড়ে যান। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সরিয়ে দেন।
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের রানীনগরে বুথের বাইরে সিপিআইএম প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিমকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তৃণমূলের কর্মীরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেয় বলে অভিযোগ। এই কেন্দ্রের গোপীনাথপুরে ভুয়া এজেন্ট ধরেন সিপিআইএম প্রার্থী। ডোমকলের ঘোড়ামারায় বিরোধী ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। রানিনগরের মরিচা-নিচুপাড়ায় তৃণমূল কর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস-বাম জোটের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।
জিয়াগঞ্জের ৬ নম্বর প্রীতম সিং প্রাথমিক বিদ্যালয় জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী অরিজিৎ সিং ভোট দেন। সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তৃতীয় দফার নির্বাচনে আরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হননি।
আরও পড়ুন>>
- লোকসভা নির্বাচন/ পশ্চিমবঙ্গের ৪৩ আসনে ভোট হবে ৭ দফায়
- ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ‘অপব্যবহার’ হচ্ছে?
এদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত মালদা উত্তরে ভোটদানের হার ছিল ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই সময় মধ্যে মালদা দক্ষিণে ভোট পড়ে ৬২ দশমিক ৯০ শতাংশ, জঙ্গিপুরে ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং মুর্শিদাবাদে ৬৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিকেল ৩টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের চার কেন্দ্রে সর্বমোট ভোটদানের হার ৬৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ভগবানগোলা উপনির্বাচনের ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য,পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে সাত দফায় নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে আরও চার দফার ভোটগ্রহণ বাকি রয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ১৩ মে, পঞ্চম দফায় ২০ মে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট হবে ১ জুন। ভোট গণনা আগামী ৪ জুন।
ডিডি/কেএএ/