ইরানে ইসরায়েলের হামলা, স্যাটেলাইটে ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ
সম্প্রতি ইরানের হামলার জবাব হিসেবে তেহরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। যদিও ইরানের হামলার তুলনায় ইসরায়েলের হামলা খুবই ছোট আকারের ছিল এবং কয়েকটি ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের বিমান ঘাঁটিতে সম্ভাব্য ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিবিসি ভেরিফাই দুটি ছবি বিশ্লেষণ করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে ইসফাহানের একটি বিমানঘাঁটিতে একটি বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যদিও ইসরায়েলের কোনো কর্মকর্তা ওই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এমনকি ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে ওই হামলার দায় স্বীকার করা হয়নি।
যদিও ইরান বলছে, কয়েকটি ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এগুলো তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন গণমাধ্যমের খবর সত্য নয়।
ইরানের চালানো হামলার জবাব দিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তেহরানের ওই হামলার জবাব দেওয়া হবে এমনটা আগেই স্পষ্ট করেছিল তেল আবিব। পুরো সপ্তাহজুড়েই ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছিল যেন ইরানি হামলার জবাবে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালানো না হয়।
যদিও ইরানের হামলা রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো এ ধরনের হামলা চালিয়েছে তেহরান। কিন্তু সেটাও আসলে ছিল একটা প্রতিশোধ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এর আগে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের ইসফাহান বিমানবন্দরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইবারস্পেস’-এর পক্ষ থেকে সে সময় ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করা হয়। সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থাটির মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেন, ইসফাহান বা দেশের অন্য কোনো জায়গায় সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) পাঠানোর ব্যর্থ ও বিব্রতকর একটি প্রয়াস চালিয়েছে এবং সেসব ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
এদিকে ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে বলেও জানা যায়। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইসরায়েল তাদের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এই হামলার বিষয়টিকে সমর্থন করেনি।
ওই হামলার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঘনিষ্ঠ আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ একটি ভিডিও পোস্ট করে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, ইসফাহানের পারমাণবিক কার্যক্রমের কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিরাপদ আছে। যদিও সেখানে হামলার পর থেকেই কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। এর মধ্যেই স্যাটেলাইটের কিছু ছবি সামনে এলো।
স্যাটেলাইটের ছবিতে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি
শুক্রবার ইসফাহানে ধারণ করা অপটিক্যাল এবং সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিবিসি ভেরিফাই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মূল্যায়ন করেছে।
গত ১৫ এপ্রিল আম্ব্রা স্পেসে ধারণ করা এরকম একটি চিত্রে ওই বিমান ঘাঁটির উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি এস-৩০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অবস্থান স্পষ্ট হয়।
ওই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রাডার, স্বতন্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত বেশ কয়েকটি যানবাহন অবস্থান করছিল। শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার পর একটি আমব্রা স্পেস ইমেজে ওই বিমানঘাঁটির চারপাশে ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকে রাডারের অবস্থান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেখান থেকে অন্যান্য যানবাহনও সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে ইরানের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি এবং ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারটিও তারা নিশ্চিত করেনি।
টিটিএন