ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘে প্রস্তাব পাসে গাজা যুদ্ধ কি বন্ধ হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৪

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে

গত ২৫ মার্চ গৃহীত প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা উচিত এবং ‘একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে রমজান মাসের প্রতি সব পক্ষেরই শ্রদ্ধা দেখানো উচিত’।

নিরাপত্তা পরিষদের ২৭২৮ নম্বর প্রস্তাবটিতে সব জিম্মিকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন>>

এখন এই প্রস্তাবনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিতর্ক চলছে।

প্রস্তাবের পক্ষে কারা?
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ১৪টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে কেউ ভোট দেয়নি। কেবল যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেসময় তারা বলেছিল, ওই প্রস্তাবগুলো জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে না অথবা প্রস্তাবগুলোতে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার যথাযথ নিন্দা জানানো হয়নি।

বাইডেন-নেতানিয়াহুগাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ফাইল ছবি: এএফপি

প্রস্তাব পাসে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী?
গাজায় আগ্রাসনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, দুঃখজনকভাবে আজও এই পরিষদ ৭ অক্টোবরের গণহত্যার নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এটি লজ্জার।

আরও পড়ুন>>

এদিকে, ইসরায়েলের দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওয়াশিংটনে পূর্বনির্ধারিত যে সফর করার কথা ছিল, প্রস্তাব পাসের পর সেটি বাতিল করে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

তার কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার যে অবস্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, তারা সেটি পরিত্যাগ করেছে। দুঃখজনকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি।

এই প্রস্তাব মানা কি বাধ্যতামূলক?
জাতিসংঘ সনদের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বর্তমান সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্মত।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেয়ে থাকে, সেগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৫ মার্চ পাস হওয়া ২৭২৮ নম্বর প্রস্তাবটিকে বাধ্যতামূলক নয় বলে বর্ণনা করেছে। তাদের যুক্তি, ওই প্রস্তাবে ‘যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ কথাগুলোর পরিবর্তে ‘যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করা হয়েছে’ অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি বাধ্যতামূলক প্রস্তাব নয়।

আরও পড়ুন>>

কিন্তু জাতিসংঘের অন্য কর্মকর্তারা বলছেন উল্টো কথা। জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মানা বাধ্যতামূলক।

২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্ক লায়াল-গ্রান্ট বিবিসি রেডিওর এক অনুষ্ঠানে বলেন, এই প্রস্তাবনা পাসের অর্থ ইসরায়েল এখন পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে একটি বাধ্যবাধকতার অধীনে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রস্তাবনা আইনত ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক, কিন্তু হামাসের জন্য নয়। কারণ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি কোনো রাষ্ট্র নয়।

জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাগুলো আন্তর্জাতিক আইন। সুতরাং, এগুলো আন্তর্জাতিক আইনের মতোই বাধ্যতামূলক।

গাজায় লাশের সারিগাজায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায় ব্যবহার হবে?
সদস্য দেশগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রস্তাব মানতে বাধ্য করার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হাইতিতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বহুজাতিক পুলিশ বাহিনী পাঠাতে এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড এবং ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচারের সময় এটির ব্যবহার হয়েছিল।

আরও পড়ুন>>

২০০৬ সালে এই সপ্তম অধ্যায়ের অধীনেই ইরানকে অন্যান্য দেশে অস্ত্র সরবরাহ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এ বিষয়ে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

প্যাট্রিক জোহানসনের নর্ডিক জার্নাল অব ইন্টারন্যাশনাল ল’তে প্রকাশিত লেখা অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ‘একটি সপ্তম অধ্যায় প্রস্তাবনা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি ‘বিবেচনাধীন পরিস্থিতি মানুষের শান্তির জন্য হুমকি, শান্তি লঙ্ঘন বা আগ্রাসনের মতো ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়’।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর এই অধ্যায়টি ব্যবহার করানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এসেছি। এখন তারা বলছেন, এটি বাধ্যতামূলক নয়। আমরা তা মানবো না ... নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাধ্যতামূলক।

রিয়াদ মনসুর বলেন, ইসরায়েল যদি এটি বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যায় সাত ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ব্রাসেলস-ভিত্তিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মায়া উঙ্গার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আইনি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে যা হয়তো কেউ কেউ মেনে নিতে পারে।

তিনি সিএনএন’কে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ‘সিদ্ধান্ত’ বা সপ্তম অধ্যায়ের ‘আহ্বান’ শব্দটি ব্যবহার না করলে প্রস্তাবনাটি বাধ্যতামূলক হবে না।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/