দ্বিগুণ হয়েছে শীর্ষ পাঁচ ধনীর সম্পদ, গরিব হয়েছে ৫০০ কোটি মানুষ
গত চার বছরে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অথচ একই সময়ে বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ আরও বেশি গরিব হয়েছে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অক্সফামের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
অক্সফাম বলছে, বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনীর তালিকায় রয়েছেন টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, ফরাসি বিলাসপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠা লুই ভিতোঁর প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট, আমাজনের জেফ বেজোস, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট ও ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। গত ৪ বছরে এই পাঁচ ধনকুবেরের সম্পদ প্রতি ঘণ্টায় ১৪ মিলিয়ন ডলার হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে।
অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে মূল্যস্ফীতির হিসাব বিবেচনায় নিয়েই এই পাঁচ বিলিয়নিয়ারের মোট সম্পদ ৪০৫ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ১১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ বিলিয়ন বা ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে।
অর্থাৎ চার বছরে তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৪৬৪ বিলিয়ন বা ৪৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। অক্সফাম বলছে, তাদের সম্পদ এমন গতিতে বাড়তে থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ারের দেখা মিলতে পারে।
এদিকে, একই সময়ের মধ্যে, দরিদ্রতম চার ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ৪৭৭ কোটি মানুষের (বিশ্ব জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ) মোট সম্পদ ০ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কারণে তাদের দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। অক্সফাম বলছে, এই দারিদ্র্য দূর করতে ২৩০ বছরের মতো সময় লেগে যাবে।
অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ পাঁচ ধনীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে ইলন মাস্কের। তিনি টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সসহ (পূর্বে টুইটার) বেশ কয়েকটি সংস্থার মালিক। গত বছরের নভেম্বরের শেষ নাগাদ তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ৭৩৭ শতাংশ বেশি।
ইলন মাস্কের ঠিক পরেই রয়েছেন লুই ভিতোঁর চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট। তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১৩০ কোটি ডলার, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারে, যা আগের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, একই সময়ে ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারে, যা আগের তুলনায় ১০৭ শতাংশ বেশি। আর গত চার বছরে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেটের সম্পদ ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১১৯ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯২০ কোটি ডলার হয়েছে।
অক্সফাম জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সব বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এবং তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হারের চেয়েও তিন গুণ বেশি।
ইনইকুয়ালিটি ইনকরপোরেশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১০টি বড় করপোরেশনের মধ্যে ৭টিরই বিলিয়নেয়ার সিইও কিংবা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান স্থবির রয়েছে। বিশ্বের ৫২টি দেশে প্রায় ৮০ কোটি শ্রমিকের গড় প্রকৃত মজুরি কমেছে। এই শ্রমিকরা গত দুই বছরে সম্মিলিতভাবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ১ শতাংশ বৈশ্বিক আর্থিক সম্পদের ৫৯ শতাংশের মালিক। শুধু যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তি সব আর্থিক সম্পদের ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশের মালিক, যার মূল্য ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ইউরো।
অক্সফামের অন্তর্বর্তী প্রধান নির্বাহী আলেমা শিবজি বলেছেন, এমন চরম পরিস্থিতিকে কখনোই আদর্শ হিসেবে নেওয়া যায় না। বিশ্ব এমন বিভাজন ও বৈষম্য সৈহ্য করতে পারে না। দরিদ্রতম দেশগুলোতে চরম দারিদ্র্য এখনো করোনা মহামারির আগ মুহূর্তের চেয়ে বেশি। এরপরও বিলিয়নেয়াদের কয়েকজন আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিওনিয়ার হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন।
‘ধনী ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে সম্পদের এই অতি বিস্তর পার্থক্য দুর্ঘটনাজনিত নয়, আবার অনিবার্যও নয়। বিশ্বব্যাপী সব দেশের সরকার নিজের স্বার্থে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদের এই বিকৃত কেন্দ্রীকরণকে সমর্থন ও উৎসাত দিয়ে আসছে। যেখানে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেছ।’
আলেমা শিবজি আরও বলেন, এরপরও একটি ন্যায্য অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যা আমাদের সবার জন্য সুষমভাবে কাজ করবে। এর জন্য যা দরকার তা হলো একটি সমন্বিত নীতি যা শুধু সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য নয়, সবার জন্য ন্যায্য কর প্রদান ও সবাইকে সাহায্য করবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএএইচ