ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ভারত-মালদ্বীপের মধ্যে বিবাদ শুরু যেভাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৩৯ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবিতে মালদ্বীপের মন্ত্রী মরিয়াম শিউনা এবং অন্যান্য নেতাদের আপত্তিজনক মন্তব্য ঘিরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর ক্ষমতায় আসার পরপরই মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুইজ্জু ভারতীয় সেনাদের দেশটি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে আগে থেকেই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিল। এর মধ্যে মালদ্বীপ সরকারের মন্ত্রী মরিয়ম শিউনাসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তার মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> মোদীকে কটাক্ষ করে বরখাস্ত হলেন মালদ্বীপের ৩ মন্ত্রী

ওই আপত্তিকর পোস্ট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর গত সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভারত মালদ্বীপের হাইকমিশনারকে তলব করে। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের অবস্থানের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, ভারতের সাধারণ নাগরিক এবং একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তি মালদ্বীপ ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। ভারতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে যেমন #বয়কটমালদ্বীপ ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে, তেমন ট্রেন্ড করছে এক্সপ্লোরলাক্ষাদ্বীপ-ও।

এদিকে, বিতর্ক জোরালো হতেই মালদ্বীপ সরকার নিজেদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সচেষ্ট হয়েছে। প্রথমে, ওই মন্তব্যের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগ নেই বলে একটি লিখিত বিবৃতি জারি করা হয়। পরে যারা ওই মন্তব্য করেছিলেন, তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

তিন মন্ত্রী বরখাস্ত
মালদ্বীপ সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে অপমান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করেছে। সরকারি পদে থাকাকালীন যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের পোস্ট করেছেন তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট ‌‘ভারতবিরোধী’ মোহামেদ মুইজ্জু

রিপোর্ট বলছে, মরিয়ম শিউনা ছাড়াও বরখাস্ত হয়েছেন মালশা শরিফ ও মাহজুম মজিদও।

মালদ্বীপের সাবেক ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদ সদস্য ইভা আবদুল্লাহ মন্ত্রীদের বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে উল্লেখ করেছেন, মালদ্বীপ সরকারের উচিত ভারতের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই’কে তিনি বলেন, মালদ্বীপ সরকার ওই মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি জানি সরকার ওই মন্ত্রীদের বরখাস্ত করেছে, তবে আমার মনে হয় মালদ্বীপ সরকার ভারতীয়দের কাছে ক্ষমা চাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন>> মালদ্বীপ ভ্রমণে যা করা নিষিদ্ধ

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, পর্যটন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এ দেশের মানুষ এটি জানে এবং তারা কৃতজ্ঞও। সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সরকারের জোটসহ সব রাজনৈতিক দল এই অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা করেছে।

ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ক
সাম্প্রতিককালে মালদ্বীপ এবং ভারতের সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে।

তার আগে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ। তার সরকার ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট' নীতি অনুসরণ করেছিল।

আরও পড়ুন>> ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে চীন সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

কিন্তু মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়েই ভোটে লড়েন। নির্বাচনে জেতার পর তার নীতিগত সিদ্ধান্তে দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে। মুইজ্জুকে ভারতের চেয়ে ‘চীনের ঘনিষ্ঠ’ বলে মনে করা হয়।

লাক্ষাদ্বীপে মোদী
চলতি সপ্তাহের শুরুতে লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সফরের ছবিগুলো তার অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছিল।

ছবিগুলো শেয়ার করে মোদী লেখেন, যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের অবশ্যই লাক্ষাদ্বীপে আসা উচিত।

আরও পড়ুন>> টানা চতুর্থবার পর্যটনে সেরা গন্তব্য খেতাব পেয়েছে মালদ্বীপ

ছবিতে ভারতীয় প্রধামন্ত্রীকে ‘স্নর্কেলিং’ (স্নর্কেল মাস্ক পরে ডুব সাঁতার) করতেও দেখা যায়। বলা যায়, নরেন্দ্র মোদী লাক্ষাদ্বীপের পর্যটনের প্রচারণা করেছেন।

তার পোস্ট করা ছবি দেখে কয়েক লাখ মানুষ হঠাৎ গুগলে লাক্ষাদ্বীপ সার্চ করতে থাকেন। মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপে মানুষের ছুটি কাটাতে যাওয়া উচিত, এই আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া।

প্রসঙ্গত, ভারত থেকে প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি মানুষ মালদ্বীপ ঘুরতে যান। মালদ্বীপে ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ২ লাখ ৪১ হাজার এবং ২০২৩ সালে প্রায় দুই লাখ ভারতীয় নাগরিক মালদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলেন।

মন্ত্রীর আপত্তিকর বক্তব্য
মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার আলোচনা যখন ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র হয়ে ওঠে, তখন প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে মালদ্বীপ থেকেও।

এর মধ্যে একটি মন্তব্য ছিল মালদ্বীপ সরকারের মন্ত্রী মরিয়ম শিয়ুনার। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন। পরে অবশ্য সেই টুইট মুছে ফেলেন।

আরও পড়ুন>> ৪ বছর বন্ধের পর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা মালদ্বীপের

অন্য একটি টুইটে মরিয়ম লেখেন, মালদ্বীপে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই।

মরিয়ম ছাড়াও মালদ্বীপের একাধিক নেতা একই ধরনের মন্তব্য করেছেন, যা ভারতীয়দের ক্ষুব্ধ করেছে। ওই মন্তব্যগুলোকে ঘিরে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়াও দেখতে পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বলিউডের তারকা এবং বিখ্যাত খেলোয়াড়রাও ভারতের সমর্থনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ভারতজুড়ে প্রতিক্রিয়া
মালদ্বীপের মন্ত্রীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারত আপাতত উত্তাল। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবার ডেকে পাঠানো হয় ভারতে মালদ্বীপের হাইকমিশনার ইব্রাহিম সাহিদকে।

এছাড়া, অবমাননাকর মন্তব্যকে ধিক্কার জানিয়ে সরব হয়েছেন ভারতের সাধারণ মানুষ, বলিউড তারকা, খেলোয়াড়সহ অনেকে।

আরও পড়ুন>> মালদ্বীপে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য মেডিকেল বাধ্যতামূলক

একাধিক বড় তারকা ঘুরতে যাওয়ার জন্য মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপকে বেছে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। লাক্ষাদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা জানিয়ে কেউ কেউ সেখানেই শুটিং করার ঘোষণা দিয়েছেন।

ভারতের ভ্রমণপিপাসুদের অনেকেই মালদ্বীপের যাওয়ার আসন্ন পরিকল্পনা বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন। একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা ঘোষণা করেছে, তারা মালদ্বীপের বুকিং বাতিল করছে। দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য ভ্রমণ সংস্থাও একই পথ ধরছে।

মালদ্বীপে প্রতিক্রিয়া
ভারতের এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব দেখা গেছে মালদ্বীপে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ নাশিদ তাদের সরকারকে বিষয়টি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহও মন্ত্রীর মন্তব্য ‘অসংবেদনশীল’ এবং দুই দেশের সম্পর্ক ‘নষ্ট করার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আরও পড়ুন>> মালদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ভারত

দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শাহিদ এক পোস্টে লিখেছেন, সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের শালীনতা বজায় রাখা উচিত। তাদের মেনে নিতে হবে, তার পক্ষে সোশ্যাল আক্টিভিজম সম্ভব নয় এবং তাকে দেশের স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/