আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা জার্মানির
জার্মানির রক্ষণশীল বিরোধী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দেশটিতে আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায়। বিষয়টি নিয়ে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে ‘বেসিক প্রিন্সিপলস প্রোগ্রাম’- নামে একটি খসড়া পরিকল্পনাও তৈরি করেছে দলটি।
পরিকল্পনা অনুসারে, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মডেল অনুসরণ করে জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করা অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো হবে। ২০২৪ সালে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খসড়াটি প্রকাশের পর সিডিইউয়ে আইনপ্রণেতা ইয়েন্স স্পান দাবি করেছেন, এমন পরিকল্পনা জার্মানিতে ‘অনিয়মিত অভিবাসন’ ব্যাপক হারে কমিয়ে দেবে
আরও পড়ুন: জার্মানিতে বাজেট সংকট, সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
বড়দিনের আগে জার্মান সংবাদমাধ্যম নয়ে ওসনাব্র্যুকার সাইটুংকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা যদি এই কাজ চার, ছয় বা আট সপ্তাহ ধরে চালু রাখতে পারি, তাহলে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যাবে।
স্পান বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে অভিবাসীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। স্পানের ধারণা, অনেক দেশই আশ্রয়প্রার্থীদের প্রক্রিয়াকরণে রাজি হবে। তিনি বলেন, সম্ভবত রুয়ান্ডা রাজি হবে, ঘানাও রাজি হতে পারে। আমাদের এ বিষয়ে জর্জিয়া ও মলদোভার মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গেও কথা বলা উচিত।
আরও পড়ুন: অভিবাসন প্রত্যাশীদের দুঃসংবাদ দিলো জার্মানি
এর আগে, ২০২২ সালে রুয়ান্ডার সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করেছিল যুক্তরাজ্য। তবে এ বছরের নভেম্বরে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠালে তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হতে পারেন বলে উল্লেখ করে এই চুক্তি স্থগিতের পক্ষে রায় দেয়। আদালত মনে করে, রুয়ান্ডার আশ্রয়ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং মানবিক কিনা—তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই।
আদালতের রায়ের পরও অবশ্য ব্রিটিশ সরকার রুয়ান্ডা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি বরং কিছু সংশোধন করে রুয়ান্ডার সঙ্গে নতুন এক চুক্তি সই করেছে ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটেন অবশ্য এরই মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রুয়ান্ডাকে ২৪০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা) দিয়েছে। আগামী বছর দেওয়ার কথা রয়েছে আরও ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) ৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত একজন অভিবাসীকেও সেখানে পাঠানো হয়নি।
আরও পড়ুন: জার্মানির ছোট শহর-গ্রামাঞ্চলে কর্মী সংকট
অন্য নানা সমস্যার পাশাপাশি ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট এটিও জানিয়েছে যে,২০১৩ সালে রুয়ান্ডার সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার চুক্তিটি করার আগে আগের সেই চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখেনি।
এদিকে, ইউরোপের আরেক দেশ ডেনমার্কও একই ধরনের পরিকল্পনা করতে রুয়ান্ডার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একা নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে এমন চুক্তি করতে চায় ডেনমার্ক।
আরও পড়ুন: জার্মানিতে বাসস্থান সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। পরিকল্পনা অনুসারে আশ্রয়প্রার্থীদের ইউরোপের সীমান্তেই যাচাইবাছাই করা হবে। আবেদন খারিজ হলে তাদের সেখান থেকেই ফেরত পাঠানো হবে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এসএএইচ