দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
২০২৪ সালে ক্ষমতার নতুন ভারসাম্য দেখবে মধ্যপ্রাচ্য
২০২৩ সালে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনামুক্ত হওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের মার্চে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে রাজি হয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতেও রাজি হয়। লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে যে গৃহযুদ্ধ চলছে সেখানেও একটি অচলাবস্থা এসেছে। উপসাগরীয় দেশগুলো অঞ্চলটিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। তারা চেয়েছে সবাইকে শান্ত রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মনোযোগ দেওয়া।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে চুক্তির পরই সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপরেই আসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই পাল্টা হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনো চলছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের বহু পুরোনো সংঘাত আবার সামনে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো অঞ্চলই ঝুঁকিতে পড়েছে।
আরও পড়ুন>ইসরায়েল-হামাস চুক্তিতে বাইডেনের লাভ হলো না ক্ষতি?
গাজা যুদ্ধের পরিণতি দিয়েই নির্ধারিত হবে ২০২৪ সালের পরিস্থিতি। মনে করা হচ্ছে, সৌদি আবর ও ইরানের মধ্যে ভঙ্গুর কূটনীতিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ৭ অক্টোবরের হামলায় ইরানের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের সহযোগিতায় গাজা, লেবানন ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা করা হচ্ছে। হামলা হয়েছে সিরিয়া ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতেও। এক্ষেত্রে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো। বিশেষ করে তারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে চায় না। যেমনটা ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল ক্ষেত্র হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তারা ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তবে অনেক কিছুই আলোর মুখ নাও দেখতে পারে। ইরানে উপসাগরীয় দেশগুলোর বিনিয়োগ কেবল আলোচনার পর্যায়েই থেকে যাবে।
একই সঙ্গে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেষ্টায় দেরি হবে। তবে একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যাবে না। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার জন্য সৌদির প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহী থাকবেন। আলোচনা চলতে থাকবে। কিন্ত তা হবে আগের তুলনায় ধীর ও জটিল। ইসরায়েল ইস্যুতে সৌদির নাগরিকরা আরও বেশি সতর্ক থাকবে। চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা জরুরি। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনী বছরে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। তাই ২০২৪ সালে বিষয়টির সমাধান করা অসম্ভব।
নতুন বছরকে কেন্দ্র করে উপসাগরীয় দেশগুলোর বাইরে আরব দেশগুলো অনেকটাই নার্ভাস থাকবে। যার বড় উদাহরণ মিশর। দেশটির দুইটি সীমান্তে যুদ্ধ চলমান। একটি ইসরায়েল হামাস অন্যটি সুদানে। ২০২৪ সালে দেশটিকে ২৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সমস্যা আছে দেশটির অর্থনীতি নিয়েও।
তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে টিকে থাকা। দেশ দুইটি গাজার সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। যেমন ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহয়তা দেওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে মিশর।
আরও পড়ুন>২০২৪ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে তিন ঝুঁকি, আস্থা কমেছে বাইডেনে
অঞ্চলটিতে আরব দেশগুলো ক্ষমতার নতুন ভারসাম্য নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা করছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটাই দূরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে আছে চীন ও রাশিয়া। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কয়েক দশকের মধ্যে গভীর সংকটে পড়েছে অঞ্চলটি। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে রণতরীসহ বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে রাশিয়া পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও দ্বিধায় চীন।
আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকাকে নিয়ে কাজ করতে চায় না। গাজা যুদ্ধের আগে সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছিল। কিন্তু সেই আলোচনার গুরুত্ব এখন অনেকটাই হারিয়েছে। সৌদিরা যেকোনো সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংঘাতের সমাধান করতে চায়। ফলে যেকোনো প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকে এগোনো কঠিন। কিন্তু এই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মতো সময় এখন বাইডেনের হাতে নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অর্থনৈতিক ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বিশ্বাস করা উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য ভুল ছিল না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত যে ফের মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে এটা না বুঝতে পারা তাদের ভুল ছিল। আসন্ন বছরে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নতুন প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। কারণ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলা যুদ্ধ কখন শেষ হবে তার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
এমএসএম