ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ কি ইনফ্লুয়েন্সারদের হাতে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৩৫ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩

কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য বড় ব্যবসা হয়ে উঠছে ইনফ্লুয়েন্সিং বা প্রভাব বিস্তার। বিষয়টি নজরে পড়েছে বড় বড় কোম্পানিগুলোরও। ঐতিহ্যগতভাবে, ব্র্যান্ডগুলো ওয়ান-অফ স্পনসর করা পণ্য প্লেসমেন্টে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তাদের মূল বিপণন কৌশলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের একীভূত করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলো তাদের নিজস্ব কর্মীদের ইন-হাউজ ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।

অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সাফল্য পেয়েছে; যেমন- টিকটক তারকা চার্লি ডি’অ্যামেলিওর সঙ্গে ডানকিন এবং সাবরিনা বাহসুনের সঙ্গে ম্যাকের অংশীদারত্ব।

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হাবের মতে, ২০২৩ সালে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং শিল্পের আকার দাঁড়াতে পারে প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং চ্যানেল হিসেবে এগিয়ে থাকবে টিকটক।

আরও পড়ুন>> ভারতে ইউটিউবারদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আয়কর বিভাগ

কোম্পানিগুলোর জন্য তাদের পণ্য ও সেবার প্রচারে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে অংশীদারত্ব নতুন কিছু নয়। বহু সেলিব্রিটি, এমনকি রাজপরিবারের সদস্যরাও ১৮০০’র দশকের শেষের দিকে পণ্যের বাণিজ্যিক প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তবে বর্তমান যুগে সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোর উত্থান মূলধারার পার্টনার মার্কেটিংয়ের (অংশীদার বিপণন) চাহিদাকে আকাশছোঁয়া করে তুলেছে।

স্টকহোম-ভিত্তিক রেডজার্ট কমসের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ম্যানেজার হিলারি গরবোল্ড বলেন, আমরা এমন এক যুগে রয়েছি, যেখানে তথ্য প্রচারের একচেটিয়া অধিকার আর ঐতিহ্যবাহী মিডিয়ার হাতে নেই।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি কেবল রাজস্বের জন্য নতুন চ্যানেলই সরবরাহ করে না, তা ব্যবসাগুলোকে আদর্শ গ্রাহকদের সঠিকভাবে স্পর্শ করতেও সক্ষম করে তোলে। ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের বার্তা একটি সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং।

আরও পড়ুন>> অনলাইনে ভিউয়ের জন্য প্লেন দুর্ঘটনার নাটক, সাজার মুখে ইউটিউবার

ফলস্বরূপ, ছোট-বড় উভয় ধরনের কোম্পানিই এখন ইনফ্লুয়েন্সার পার্টনারশিপকে ততটা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে, যতটা গুরুত্ব তারা কয়েক দশক ধরে অন্যান্য বিপণন প্রচারাভিযানে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান ইনফ্লুয়েন্সার পার্টনারশিপই একসময় হয়ে উঠবে ব্যবসার অনিবার্য ভবিষ্যৎ।

jagonews24

ছোট-বড় ইনফ্লুয়েন্সারদের উত্থান
বর্তমানে অনেক ব্র্যান্ড সরাসরি হাইপ্রোফাইল ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে যাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের কোটি কোটি অনুসারী রয়েছে; যেমন- ডি’অ্যামেলিও অথবা ক্রীড়াবিদ অথবা বিনোদন জগতের সেলিব্রেটিরা। গরবোল্ড এদের নাম দিয়েছেন ‘মেগা ইনফ্লুয়েন্সার’। তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে সাধারণত বিশাল অংকের অর্থ খরচ করতে হয় কোম্পানিগুলোকে।

সে কারণেই উত্থান হয়েছে ‘মাইক্রো’ ইনফ্লুয়েন্সারদের। এদের অনুসারী থাকে সাধারণত ১০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে। আর যাদের পাঁচ লাখ পর্যন্ত অনুসারী রয়েছে, তাদের ধরা হয় ‘মধ্যম’ পর্যায়ের ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে। মুনাফা অর্জনে এ দুই ধরনের ইনফ্লুয়েন্সাররাই অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন>> বিষয় যৌতুক নয়, ভিউ পেতে মোটরসাইকেল মাটিচাপা দেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর

এর কারণ শুধু যে তাদের পেছনে খরচ কম হয়, তা নয়। বরং ছোট ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রায়ই উৎসাহী ও বিশেষ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরও ভালো যোগাযোগ করতে পারেন।

গরবোল্ড জানান, তিনি ছয় মাসের প্রচারাভিযানে বড় ইনফ্লুয়েন্সারদের পেছনে দেড় লাখ পাউন্ড পর্যন্ত খরচ করতে দেখেছেন। কিন্তু ছোট ইনফ্লুয়েন্সাররা ওয়ান-অফ কোলাবোরেশন বা একক চুক্তিতে মাত্র ৩০০ পাউন্ডেই যেকোনো কাজ করে দিতে পারেন।

লাভজনক কৌশল
এসব অংশীদারত্বের কেন্দ্রে অবশ্যই একটি পরিমাপযোগ্য লাভের বিষয়টি জড়িত।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পরামর্শক এবং জিমশার্কের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং প্রোগ্রামের সাবেক পরিচালক স্যামুয়েল বার্গেস বলেন, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের একটি সাধারণ মেট্রিক হলো সেলস কনভার্শন (বিক্রয় রূপান্তর)। ব্র্যান্ডগুলো লিংক বা ডিসকাউন্ট কোডের মাধ্যমে একজন ইনফ্লুয়েন্সারের প্রভাব ট্র্যাক করতে পারে।

আরও পড়ুন>> এখন ইনস্টাগ্রামেও চ্যানেল খুলে আয় করতে পারবেন

বার্গেস জানান, তিনি ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে চার থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি বাড়তে দেখেছেন। এমনকি কিছু কিছু ব্র্যান্ডের মোট বিক্রয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশই ইনফ্লুয়েন্সারদের সাহায্যে আসে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দোধারী তলোয়ার
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে মার্কেটিং ঝুঁকির ঊর্ধ্বে নয়। একটি বিলবোর্ড বা টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন যেভাবে মুহূর্তেই ঝামেলা পাকিয়ে ফেলতে পারে, তেমনি কন্টেন্ট পার্টনারশিপেও রয়েছে একই ধরনের ঝুঁকি।

jagonews24

যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিল ইউনিভার্সিটির কৌশলগত যোগাযোগের অধ্যাপক কারেন ফ্রেবার্গ বলেন, ব্র্যান্ড প্রচারণায় ইনফ্লুয়েন্সাররা আকর্ষণীয় হতে পারেন। তবে, মাত্র একটি বিতর্কই একটি ব্র্যান্ডের খ্যাতিকে মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন>> প্রেমিকের খোঁজে বিজ্ঞাপন, একদিনে ৩ হাজারেরও বেশি আবেদন!

এরপরও প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করা উচিত বলে বিশ্বাস করেন বেন জেফ্রিস। তিনি নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংস্থা ইনফ্লুয়েন্সারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। সংস্থাটি ক্রিয়েটর ও তাদের প্রচারাভিযানের রিয়েল টাইম ডেটা নিয়ে কাজ করে।

জেফ্রিসের মতে, কোনো ব্র্যান্ড যদি ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংকে উপেক্ষা করে, তাহলে সেটি আধুনিক বিপণন কৌশল থেকে পিছিয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবণতা পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপণনকারী এবং ইনফ্লুয়েন্সার উভয়ই পাশাপাশি বিকশিত হবে। সর্বোপরি, অনেক ইনফ্লুয়েন্সারের জন্য এটি কেবল প্রবণতা নয়, এটি তাদের জীবিকাও বটে।

সূত্র: বিবিসি
কেএএ/