ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ফের অচল হতে চলেছে মার্কিন সরকার, কেমন প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সরকার চালানো নিয়ে মহাবিপদে পড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের কট্টরপন্থি রিপাবলিকান সদস্যরা সরকারকে অস্থায়ীভাবে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাবিত একটি বিল প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তাতেই রোববার (১ অক্টোবর) থেকে আংশিকভাবে অচল হতে চলেছে দেশটির ফেডারেল (কেন্দ্রীয়) সংস্থাগুলো, সেই সঙ্গে অচল হয়ে পড়বে বাইডেন সরকার।

তবে হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি আশা ছাড়ছেন না। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আবারও ভোট হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শনিবার (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত মার্কিন সরকারকে সচল রাখতে স্থানীয় সময় শুক্রবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে স্বল্পমেয়াদি তহবিল বিল পাসের চেষ্টা করা হয়। তবে সেখানে রিপাবলিকানদের আপত্তিতে বিলটি অনুমোদন পায়নি। চূড়ান্ত পর্বে বিলের বিপক্ষে ২৩২ ও পক্ষে ১৯৮টি ভোট পড়ে।

গত এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ বারের মতো শাটডাউন হতে চলেছে। মার্কিন অর্থনীতিবিদদের ধারণা, দেশটিতে দুই থেকে চার সপ্তাহের শাটডাউন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শাটডাউনের ফলে কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ছাড়াই চাকরিচ্যুত হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী। কেবল যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকলে সরকারি কার্যক্রম চালানো সম্ভব না তাদেরই রাখা হবে, তা-ও আবার বিনা বেতনে।

এখন সরকারের শাটডাউন ঠেকাতে সামান্য কিছু বিকল্প রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের হাতে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফেডারেল কর্মীদের ছুটি দীর্ঘ করা ও সামরিক বাহিনীকে বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাওয়া।

আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আসন্ন শাটাডাউনের ফলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ, পরিবহন বিভাগসহ বিভিন্ন খাত সরাসরি প্রভাবিত হবে। ফলে দেশটিতে সরকারি সেবা অনেকটাই কমে যেতে পারে।

মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদ জাস্টিন বেগলি বলেছেন, চরম রাজনৈতিক দলাদলি আজ আমাদের এমন পরিস্থিতিতে অবস্থা এমন যে, যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়, তারাও পূর্ণ বেতন পাবেন না। তবে শাটডাউন শেষ হলে তাদের পুরো বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে, বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, শাটডাউনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়া হলে, সেটা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করার ক্ষমতাকে ক্রেডিট রেটিং বলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে বাইডেন প্রশাসন।

গত সপ্তাহের শুরুতে মুডি’স অ্যানালিটিক্স সতর্ক করে দিয়েছিল যে, শাটডাউন মার্কিন সরকারের ক্রেডিট রেটিংকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। সংস্থাটির রেটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং এখনো ‘এএএ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। তবে গত মাসে ফিচ রেটিংসের জরিপে মার্কিন ক্রেডিট রেটিং এক ধাপ নিচে নেমেছে।

‘এএএ’ মানে হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক রেকর্ড খুব ভালো ও ঋণ ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ‘বিএ’ মানে হলো, প্রতিষ্ঠানের কিছু ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে রেটিং ‘সি’ মানে হচ্ছে সেখানে আসল ও মুনাফা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

অর্থনীতির ক্ষতি

জাস্টিন বেগলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশই সরকারি ব্যয়। যদি সেই ব্যয়টি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়, তবে এটি বিনিয়োগ ও খরচের উপর খুব বাজেভ প্রভাব ফেলবে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।

হোয়াইট হাউজ কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজারের চেয়ারম্যান জ্যারেড বার্নস্টেইনের মতে, প্রতি সপ্তাহে শাটডাউন অব্যাহত থাকে, ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ০ দশমিক ১ থেকে ০ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট ক্ষতি হতে পারে।

চার সপ্তাহের শাটডাউনের ক্ষেত্রে, মুডি’স জিডিপিতে ০ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে একটি চক্রবৃদ্ধি প্রভাব থাকায় এ সংখ্যা নিশ্চিত নয়। বেগলির মতে, এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।

মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অনুমান, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হলো, পুরো ত্রৈমাসিক শাটডাউন। এটি জিডিপি বৃদ্ধিতে ২ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাসের কারণ হতে পারে। অপচয় হওয়া সময়, মজুরি, ফেডারেল কর্মীদের থেকে উৎপাদনশীলতা থেকে থাকা, এসব বিষয় জিডিপিকে নিম্মমুখী করে দেবে। তবে যদিও অর্থনীতিবিদদের আশা, সরকারী কর্মচারীদের বেতন ফেরত আসার পরে জিডিপি’র গতি কিছুটা পুনরুদ্ধার হবে।

আবার শাটডাউন যদি পুরো ত্রৈমাসিক স্থায়ী হয় ও ১ জানুয়ারিতে আঘাত হানে, তবে বাইডেন সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিবেচনামূলক খরচে এক-শতাংশ হ্রাস করতে বাধ্য হবে।

সরকারে অচলাবস্থা তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রের লাখো কর্মীর বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এর আগে সবশেষ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারে অচলাবস্থা বা শাটডাউন ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেবার হোয়াইট হাউজের ১ হাজার ৮০০ কর্মীর মধ্যে ১ হাজার ১০০ জনকেই ছাঁটাই করা হয়েছিল।

সূত্র: আল জাজিরা

এসএএইচ