কানাডায় নিজ্জার হত্যা
ভারতকে ‘প্রকাশ্যে ও গোপনে’ তদন্তে সাহায্য করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র
কানাডায় খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সহযোগিতার জন্য ভারতকে ‘প্রকাশ্যে ও গোপনে’ উভয়ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবারের (২৫ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উত্থাপিত অভিযোগে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, আমরা আমাদের কানাডীয় অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, কানাডার তদন্ত এগিয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। এতে সহযোগিতার জন্য আমরা প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।
আরও পড়ুন>> যাকে নিয়ে ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে, কে এই হরদীপ সিং?
এর আগে, গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার তদন্তে সহযোগিতা করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জবাবদিহিতা দেখতে চাই। তদন্তের গতি ঠিকমতো চলা ও তা ফলপ্রসূ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করবো, আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা এই তদন্তে সহযোগিতা করবে।
এদিন অভিযোগের বিশদ বিবরণ না দিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দমনপীড়নের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন>> ভারত-কানাডা বিরোধ নিয়ে শঙ্কায় পশ্চিমারাও
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন খালিস্তানি আন্দোলেনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার।
এই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত থাকতে পারে বলে গত সপ্তাহে অভিযোগ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার হাউজ অব কমন্সের সভায় ট্রুডো বলেন, হরদীপ সিং হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা।
তিনি বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিক হত্যায় বিদেশি কোনো সরকারের সংশ্লিষ্টতা আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, তার সম্পূর্ণ পরিপন্থি এ ধরনের ঘটনা।
আরও পড়ুন>> কানাডীয় কূটনীতিককে ভারত ছাড়ার নির্দেশ
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত থাকার গুরুতর এই অভিযোগকে ‘মনগড়া’ এবং ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, এই ধরনের ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থিদের ওপর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
ট্রুডোর অভিযোগের পরপরই কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার জেরে পবন কুমার নামে একজন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জবাবে দিল্লিতে কানাডার রাষ্ট্রদূত ক্যামেরুন ম্যাকেকে ডেকে পাঠায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>> কানাডীয়দের ভিসা দেওয়া বন্ধ করলো ভারত
এখানেই শেষ নয়, ঘটনাক্রমে কানাডীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা ইস্যু করা স্থগিত করে ভারত। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
পাশাপাশি, কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে নয়াদিল্লি। পাল্টা জবাবে ভারতে বসবাসরত কানাডীয় নাগরিকদের জন্যেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে অটোয়া।
সূত্র: পিটিআই, সিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
কেএএ/