পোলিশদের আর কখনো অপমান না করতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি
পোল্যান্ডের নাগরিকদের আর কখনো অপমান না করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সতর্ক করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কিকে বলতে চাই, আপনি জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে যেভাবে পোলিশদের অপমান করেছেন, তা আর কখনো করবেন না।
ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে সরবরাহ ইস্যুতে কিয়েভের সঙ্গে উত্তপ্ত বিরোধের মধ্যেই এমন মন্তব্য করলেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, পোল্যান্ড গত সপ্তাহে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে আর অস্ত্র দেবে না পোল্যান্ড, কারণ কী?
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপে ইউক্রেনের কিছু মিত্র যেভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সংহতি দেখাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। তারা শস্য নিয়ে নাটক করছে।
জেলেনস্কির এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ওয়ারশ নিন্দা জানিয়ে বলে, পোল্যান্ডকে নিয়ে অযৌক্তিক মন্তব্য করা হয়েছে, অথচ আমরা যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছি। পরে ওয়ারশতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পাশাপাশি এখন থেকে আর অস্ত্র না পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় গণমাধ্যমে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তার দেশ ইউক্রেনে আর অস্ত্র পাঠাবে না। আমরা ইউক্রেনকে আর অস্ত্র দেবো না, কারণ এখন পোল্যান্ডকে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়োজন অনুভব করছি।
আরও পড়ুন: পোল্যান্ডের সঙ্গে ইউক্রেনের দ্বন্দ্ব চরমে, বন্ধ হলো অস্ত্র সহায়তা
গত বছর ইউক্রেনে রুশ ‘সামরিক অভিযান’ শুরু হওয়ার পর থেকেই কিয়েভকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছিল পোল্যান্ড। তবে গত কয়েকদিনে কিয়েভ ও ওয়ারশর মধ্যে সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতা একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। জেলেনস্কি দাবি, পোল্যান্ডের এমন আচরণে রাশিয়া লাভবান হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, পোল্যান্ডের সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১৫ অক্টোবর। সেই নির্বাচনের আগে নিজেদের ইউক্রেন নীতি নিয়ে ডানপন্থিদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মোরাউইকির ক্ষমতাসীন জাতীয়তাবাদী আইন ও বিচার (পিআইএস) পার্টি।
বিশ্লেষকের দাবি, পিআইএস আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে টিকে থাকতে পারলেও, সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না বলে মনে হচ্ছে। আর এ বিষয়টিই পিআইএসকে কিয়েভ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে।
কিয়েভ থেকে ইউক্রেনীয় খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অভিযোগে প্রতিবেশী তিনটি দেশের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা দায়ের করে ইউক্রেন। ওই তিনটি দেশ হচ্ছে- স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি।
মূলত গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের প্রধান লেন বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে ইউক্রেন স্থলপথে শস্য রপ্তানির বিকল্প রুট ব্যবহার করায় মধ্য ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে শস্য ঢুকতে থাকে। যার ফলে স্থানীয় শস্যের দাম কমতে থাকে ও কৃষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে ন্যাটোকে যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টা করছে ইউক্রেন?
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউক্রেনীয় শস্য ঢোকার শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলোর কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনীয় শস্যের চালানের ফলে স্থানীয় বাজার ক্ষতির মুখে পড়ছে।
রাশিয়ার আক্রমণ মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অনেক সহায়তা দিয়েছে পোল্যান্ড। দেশটি এরই মধ্যে ইউক্রেনকে ৩২০টি সোভিয়েত যুগের ট্যাংক ও ১৪টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দিয়েছে। এছাড়া রুশ আগ্রাসনের জেরে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা ১৫ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স
এসএএইচ