পুতিনের বাবুর্চি থেকে বিদ্রোহের নেতা, কে এই প্রিগোজিন?
প্লেন দুর্ঘটনায় রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। তবে ওয়াগনার ঘনিষ্ঠ একটি চ্যানেল বলছে, প্লেনটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। প্রিগোজিনের মৃত্যুর পেছনে সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, গত জুনে পুতিনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করার পর থেকেই এমন ভয়ংকর পরিণতি ‘অনিবার্য’ হয়ে পড়েছিল প্রিগোজিনের জন্য।
কে এই প্রিগোজিন
ইভজেনি প্রিগোজিনের জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। একই শহরে জন্ম পুতিনেরও। ১৯৭৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথমবার অপরাধী সাব্যস্ত হন প্রিগোজিন। চুরির দায়ে আড়াই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
এর দুই বছর পরেই চুরি ও ডাকাতির মামলায় ১৩ বছর কারাদণ্ড হয় প্রিগোজিনের। এর মধ্যে নয় বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল তাকে।
আরও পড়ুন>> প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিন নিহত
কারাভোগ শেষে ব্যবসা শুরু করেন প্রিগোজিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে দোকান দিয়ে হট ডগ বিক্রি শুরু করেন তিনি। ব্যবসা বেশ ভালো চলতে শুরু করে।
নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে অরাজকতার মধ্যেই শহরটিতে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ চালু করেন প্রিগোজিন। তখন থেকেই বিত্তবান, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় তার। রেস্তোরাঁর সূত্রেই পরিচয় হয় পুতিনের সঙ্গে। তখন তিনি শহরটির ডেপুটি মেয়র। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও পুতিন তার বিদেশি অতিথিদের প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতেন।
আরও পড়ুন>> পুতিনের বিশ্বাসভঙ্গকারী প্রিগোজিনের এমন মৃত্যু ‘অনিবার্য ছিল’
এভাবে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন প্রিগোজিন। কয়েক বছর পরে তার মালিকানাধীন ক্যাটারিং কোম্পানি কনকর্ড ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায়। এর মধ্য দিয়ে ‘পুতিনের বাবুর্চি’ বলে পরিচিতি পান প্রিগোজিন। এরপর সামরিক বাহিনী ও সরকারি স্কুলেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায় কনকর্ড।
২০০০ সালের পর থেকে নজরকাড়া উত্থান শুরু হয় প্রিগোজিনের। একসঙ্গে একাধিক কোম্পানির মালিক হয়ে যান তিনি। তার কোম্পানিগুলো একচেটিয়াভাবে রুশ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পেতে শুরু করে। এভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন তিনি।
ধারণা করা হয়, এই অর্থ দিয়েই ওয়াগনার বাহিনী গড়ে তোলেন প্রিগোজিন। পরে তিনি নিজেই বাহিনীর শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার পদে যুক্ত হন।
আরও পড়ুন>> প্রিগোজিনের প্লেন দুর্ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন পুতিন?
ওয়াগনার বাহিনী কারা?
এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্ভবত চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। তবে এর বড় উত্থান ঘটে প্রিগোজিনের হাত ধরে।
ক্রিমিয়া দখলের জন্য ২০১৪ সালের যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে প্রথমবার মাঠে নামে ওয়াগনার গ্রুপ। তখনই এ বাহিনীর অস্তিত্ব টের পায় পুরো বিশ্ব। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকার সমর্থিত বাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। সেসময় সিরিয়ার তেলের খনিগুলো পাহারা দিতো এই বাহিনীর সদস্যরা। ইউক্রেন যুদ্ধেও সক্রিয় অংশ নিয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ।
আরও পড়ুন>> প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবরে ‘আশ্চর্য নন’ বাইডেন
প্রথমদিকে এই গ্রুপের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার, যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। তবে ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় নিয়োগ দিতে শুরু করে। বর্তমানে তাদের সৈন্যসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যার ৮০ শতাংশই এসেছে রাশিয়ার কারাবন্দিদের মধ্য থেকে।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/