অধিকাংশ আরব তরুণের চোখে তুরস্ক-চীন এখন ‘শক্তিশালী মিত্র’
আরব বিশ্বের তরুণ সমাজের কাছে বদলে যেতে শুরু করেছে মিত্র দেশের ধারণা। এক জরিপে উঠেছে এসেছে, অধিকাংশ আরব তরুণ এখন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রকে নয়, চীন ও তুরস্ককে নিজেদের শক্তিশালী মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আরব ইয়ুথ সার্ভের ১৫ তম জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ বলছে, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আরব তরুণ এখন তুরস্ক ও চীনকে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী মিত্র হিসেবে দেখছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৮-২৪ বছর বয়সী আরব তরুণদের ৮২ ভাগেরও বেশি তুরস্ককে অন্যতম মিত্র মনে করে। অন্যদিকে, ৮০ ভাগ আরব তরুণ চীনকে শক্তিশালী মিত্র বলে বিবেচনা করে।
আরও পড়ুন: যৌন হয়রানি এড়াতে মেয়েদের ‘আবেদনময়ী আচরণ’ না করার পরামর্শ চীনে
শক্তিশালী মিত্র হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম সমর্থন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৭২ ভাগ সমর্থন নিয়ে তারা সপ্তম স্থানে রয়েছে। জার্মানি ৭৮ ভাগ, ফ্রান্স ৭৪ ভাগ ও ভারত ৭৩ ভাগ সমর্থন পেয়েছে।
আরব দুনিয়ার মিত্র হিসেবে ভিন্ন একটি শ্রেণীতে আরব তরুণদের চোখে শীর্ষ মিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে কাতার। তারা ৯০ ভাগ সমর্থন পেয়েছে। এরপর রয়েছে মিসর (৮৯ ভাগ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৮৮ ভাগ) ও সৌদি আরব (৮৬ ভাগ)।
জানা যায়, জরিপের জন্য আরব বিশ্বের ৫৩টি নগরীর তিন হাজার ৬০০ তরুণের মুখোমুখি সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। জরিপে কাতারের ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আসরকে ইতিবাচকভাবে দেখা যায়। তরুণরা জানায়, এ আসরটি আরবদের গর্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্র্যান্ড মসজিদে মুসল্লিদের জন্য গাইডেন্স রোবট
জনপ্রিয়তার দিক থেকে তুরস্ক ও চীনের উত্থান ঘটলেও আরব তরুণদের দৃষ্টিতে তাদের অঞ্চলে এখনো সবচেয়ে ক্ষমতাধারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। জরিপে অংশ নেওয়া এক তৃতীয়াংশ তরুণ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (১১ শতাংশ) ও সৌদি আরব ও ইসরাইল (উভয়ে ১০ ভাগ করে)।
জরিপে আরও দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির রেশ ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান যদিও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে, তবুও ৮৭ ভাগ আরব তরুণ ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে।
জরিপে উঠে আসা কিছু অদ্ভুত বহিঃপ্রকাশ
জরিপ অনুসারে, তিন-চতুর্থাংশ আমিরাতি ও মিশরীয় যুবক ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ‘দৃঢ়ভাবে সমর্থন বা কিছুটা সমর্থন করে’।
গত মাসে প্রকাশিত গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, আব্রাহাম চুক্তির চিত্রটি আরও জটিল। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তরদাতাদের মাত্র ২৭ শতাংশ ও বাহরাইনের মাত্র ২০ শতাংশ এ অঞ্চলের জন্য চুক্তিগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অন্যদিকে, সৌদি-ইসরায়েল শান্তিচুক্তির প্রতি সমর্থনও অর্ধেক কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে এক বছরে সাড়ে তিন লাখের বেশি ডিভোর্স
জরিপের বিশ্লেষক ফয়সাল আল-ইয়াফাই ফলাফলকে চমকপ্রদ দাবি করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আরব তরুণদের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে নিচের দিকে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, তুরস্ক-চীন ক্রমবর্ধমানভাবে ক্রমবর্ধমান সমর্থন পাচ্ছে। এটি নতুন বৈশ্বিক বহুমুখীতা
অভিবাসন ও অর্থনৈতিক সমস্যা
জরিপে দেখা গেছে, মানহীন শিক্ষা, চাকরির অভাব ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে নিজ নিজ দেশের জাতীয় সরকারের প্রতি হতাশা বাড়ছে আরব যুবকদের। আরব যুবকদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিশ্বাস করে যে, অর্থনীতি ভুল পথে যাচ্ছে। তাদের ক্রমবর্ধমান একটি অংশ সরকার ও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করছে। উত্তর আফ্রিকা ও লেভান্ট অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি আরব যুবক উন্নত জীবনের জন্য দেশ ত্যাগ করতে চাইছে।
এমনকি ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ তরুণ বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছে। প্রতিবেদনের বিশ্লেষক জেমস ডরসি বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর তুলনামূলক উচ্চতর অর্থনৈতিক গতিশীলতা সত্ত্বেও, চাকরি ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য আরব তরুণরা প্রাথমিকভাবে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য জার্মানি ও ফ্রান্সে পাড়ি জমানোর কথা ভাবেন।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
এসএএইচ