ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ০৫:৩৬ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৩

চার দিনের সফরে কলকাতায় অবস্থান করছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। এই অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী, সম্পাদক শুভজিত পুততুন্ডু, ঢাকা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা ও আশিকুর রহমান।

বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কলকাতা প্রেস ক্লাব অনেক অবদান রেখেছে। ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সে সময় তারা যে কেবল ঘরের দুয়ার খুলে দিয়েছিল তাই নয়, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল। অনেক শরণার্থীকে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছিল।

আরও পড়ুন: চার দিনের সফরে কলকাতায় বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের বন্ধন রক্তের অক্ষরে লেখা, এই বন্ধন কখনোই ছিন্ন হওয়ার নয়। তাই বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন আমরা ভারত ও ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। তার অভিমত, দুই দেশের মধ্যে নৈকট্য অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

দু'দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রিকতা পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে উদহারণ টেনে মন্ত্রী বলেন, ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে, আমাদের দেশ আলোকিত হচ্ছে। সম্প্রতি রুপি ও টাকার বিনিময়ে দুই দেশের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এটা কোনদিন ভাবা যায়নি। এতে করে দুই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এগুলো একটা মাইল ফলক হয়ে দাঁড়াবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এই পর্যায়ে আসতো না। কারণ অন্য যারা রাজনীতি করে তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ভারত বিরোধিতা, আওয়ামী লীগকে গালি দেওয়া যে আমরা নাকি হিন্দু বিরোধী দল। ভোট আসলেই এই গালি শুনতে হয়। বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, ভারতের বিরোধিতা শুরু হয়।

কয়েকদিন পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই এগুলো শুরু হয়ে গেছে। তাই তারা যদি ক্ষমতায় থাকতো তাহলে ভারতের সঙ্গে কখনোই আমাদের সম্পর্ক এই পর্যায়ে আসতো না। এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই।

jagonews24.com

হাসিনার নেতৃত্বে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়, এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়টি অনেক দেশ থেকে উন্নত। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকদিন পর পর স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। যেভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যা করা হচ্ছে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যেভাবে ক্যাপিটাল হিলে হামলা চালালো, পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে হত্যা করলো সেরকম কোনো ঘটনা বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলে কোথাও হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হয়, তার তুলনায় আমাদের দেশে মানবাধিকার ভালো। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, নরওয়ের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে পুলিশের অত্যাচার হয়েছে। গোটা বিশ্বই তা দেখেছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে কিছুই হয়নি।

বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী একটি দেশ। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশ ৬১তম অর্থনীতির দেশ ছিল। বর্তমানে আমরা জিডিপির নিরেখে ৩৫তম দেশ। অর্থনীতির ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে তবে আমরা আরও ১০ ধাপ এগিয়ে কয়েক বছর পর ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম তিন হাজার ডলারের কাছাকাছি। এ কারণেই অনেকের দৃষ্টি আমাদের ওপর পড়েছে। ভৌগলিক দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে এই দেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হয়। যেটা কোনভাবে সমীচীন নয় আর তা নিয়ে মানবাধিকার প্রশ্ন তোলা হয়। ভারত যেহেতু বড় দেশ, পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ, তাই বেশি চেঁচামেচি হয় না। আমরা ছোট দেশ তাই চেঁচামেচি বেশি হয়।

বিএনপি জমানায় সহিংসতা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বে যে সহিংসতা হয়েছিল, প্রায় এক শতাধিক মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, ট্রেন বাস লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানেও পশ্চিম (পশ্চিমাদেশ গুলি) দিকের বাতাস এসেছিল, সেটা এখন সরে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে। তাই এখন বাতাস দিয়েও কোনো লাভ হবে না। এই অঞ্চলে অন্য অঞ্চলের কেউ এসে নাক গলাক, তা আমরা চাই না। সেটা কি সমীচীন হবে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানো নিয়ে বিরোধীদের যে দাবি সে প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে। যেভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে চলতি সরকার থাকে, সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে। যেভাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপানে হয়ে থাকে। ঠিক সেভাবেই শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি আইন করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী।

সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে দেশে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কমিশনের আহ্বান সত্ত্বেও বিএনপি যেভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে, বয়কটের আহ্বানের পরেও মানুষ ভোট দিয়েছে। কয়েক দিন আগে ঢাকা ১৭ আসনে উপনির্বাচনে হিরো আলমকে হেনস্থা করার অভিযোগে অনেককে আটক করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কি হয়েছে সেটা সকলেই জানেন।

ভারতে কোন ঘটনা ঘটলে বিবৃতি দেয় না, মণিপুরের ঘটনাতে কি কোন বিবৃতি দিয়েছে? কারণ সেটি করলে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়, একই সাথে ভিয়েনা কনভেনশন চুক্তি লঙ্ঘন হয়। সেটা দিতে পারেনা দেওয়া অনুচিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা বিবৃতি দিয়েছে এবং সেই কারণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিদের ডেকে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী তা নিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের ১৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বিশ্বে ঘনবসতি পূর্ণ দেশের মধ্যে একটি। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সেখানে ১৫ লাখ শরণার্থী আমাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ। তার ওপর বৈদেশিক সাহায্য আগের মতো আসছে না। বিষয়টি নিয়ে সবসময় ভারতের সাথে আলোচনা চলছে। তারাও তাদের সাধ্যমতো সহায়তার হাত প্রসারিত করেছে।

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দাবি করে যে, তারা গণমানুষের দল। কিন্তু ক্রমাগত তারা যেভাবে প্রতিটি নির্বাচন বয়কট করছে... একটি দল যদি এভাবে নির্বাচন বর্জন করে তবে আগামী দিনে কোনো মানুষ সেই দল করবে কি না সেটা আগামী দিনে বড় প্রশ্ন। যদিও তাদের অনেক নেতাই নির্বাচন চায়, কিন্তু মূল নেতৃত্ব সেটা চায় না, সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা বলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। গণমানুষের দল হিসেবে যারা টিকে থাকতে চায় তাদের পক্ষে এটি মারাত্মক ক্ষতিকারক হবে। আগামী নির্বাচনও যদি বর্জন করেন তবে নির্বাচনের পর হাড়ে হাড়ে টের পাবে তারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

ইলিশ কবে পশ্চিমবঙ্গে আসবে তা নিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ নয়। কিন্তু আমাদের দেশে মাছ ধরা বন্ধ ছিল, তাই বন্ধ আছে। এসময় তিনি বলেন কলকাতার ‘ভজহরি মান্না’ নামক রেস্তোরায় ইলিশ খেয়ে যে মজা পেয়েছি সেটা বাংলাদেশে পাইনি।

jagonews24.com

হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে দল লড়াই করেছে, অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যারা প্রতিষ্ঠিত সেটা হলো আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সাম্প্রদায়িকতাকে ফিরিয়ে এনেছে। বিনপি জোটের অনেক দল আছে যাদের নেতারা তালেবানদের সাথে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, তারা হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতন করেছে, মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে। তার অভিমত বিএনপি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক। এটা দিবালোকের মতো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তাই বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তবে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ফের মাথাচাড়া দেবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

আরও পড়ুন: গোবর-গোমূত্র থেকে শ্যাম্পু-দাঁতের মাজন তৈরিতে চলছে গবেষণা

চীনের কোনো সীমান্ত নেই। চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আগের তুলনায় অনেক কমেছে। কোনো কোনো জায়গায় কম দরপত্র দেওয়ার কারনে তারা অর্ডার পায়। বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বিশ্বের অর্ধেক মানুষই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমাদের দেশ একটি ঘনবসতি পূর্ণ দেশ। ঢাকা শহরও বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। তাই যতই পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই পরিকল্পনা না মেনে অনেক সময় অনেক কিছু হয়ে গেছে। তারপর আমরা যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছি, ঠিক সেভাবেই আমরা ডেঙ্গুকেও সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবো।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে দেশটির নাগরিকদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে কি না এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতে প্রবেশের জন্য কি পরীক্ষা করা হবে, ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হবে কি না, সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ডিডি/টিটিএন